সেলিম আউয়াল: পাকিস্তানের জন্ম হবার পর রাষ্ট্রভাষার প্রসঙ্গটি সবে উকি ঝুকি মারছে। মতায় যারা তাদের স্বপ্ন উর্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। সে সময় এদেশের মানুষের প্রাণের আকুতি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী সেই ৪৭ এ তুললো সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ। সাহিত্য সংসদই ১৯৪৭ সালের ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রভাষা বিষয়ে একটি সভা করে। এই সভাতেই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুসলিম চৌধুরী পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রবন্ধটিতে তিনি বাংলার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন। সেই নভেম্বরেই ৩০ তারিখ সাহিত্য সংসদ রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মিলনায়তনে একটি সভার আয়োজন করে। সংসদের তখন নিজস্ব কোন মিলনায়তন না থাকায় আলিয়া মিলনায়তনকেই সভার জন্য বেছে নেয়া হয়েছিলো। প্রধান বক্তা ছিলেন রস সাহিত্যিক ড. সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি বাংলা ভাষার পক্ষ লেখা দীর্ঘ প্রবন্ধের অংশ বিশেষ পড়তে সম হয়েছিলেন । সেই সভাতে দু’ হাজারের মতো লোক জমেছিলো। লোক সমাগম বেশী হবার কারণ ছিলো সারা শহরে খবর ছড়িয়ে ছিলো উর্দূ বনাম বাংলা ভাষা নিয়ে বাহাস হবে।
কিন্ত সেই সভাটি সুসম্পন্ন হতে দেয়নি উর্দূর সমর্থকরা। সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে রাষ্ট্রভাষা বাংলার সপে অনুষ্ঠিত দুটো সভাতেই সভাপতিত্ব করেন মতিন উদদীন আহমদ। মুসলিম চৌধুরী ও মতিন উদ্দীন দু’জনই ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা, কিন্তু সত্য বলার জন্য কেউই চাকুরীর পরোয়া করেননি। ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্নের গৌরব গাঁথা যার ললাটে, সেই কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ আর ক’দিন পর ৭৫ পেরুবে। কিন্ত কোন জরাজীর্ণতা-অবসাদ নেই, সাহিত্য সংসদের গায়ে। বরং সংসদ এখন আরো প্রাণবন্ত আরো সজীব। সিলেট নগরীর কেন্দ্রস্থল হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার শরীফে প্রবেশের প্রধান তোরণের কাছে গড়ে উঠছে বিশাল সাহিত্য সংসদ ভবন। এটি হবে নগরীর উল্লেখযোগ্য একটি স্থাপনা।
o শুরুর কথা:
বৃটিশ শাসনামলে নানা কারণে এদেশের মুসলমানরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে শুরু করে। তারপর একসময় পূনর্জাগরণ শুরু হয়। মুসলিম লীগ, কাজী নজরুল, মোহামেডান, আব্বাস উদ্দীন এইসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মাধ্যমে মুসলমানদের সাংস্কৃতিক রেনেঁসার সূচনা হয়। ১৯১১ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ। পূণর্জাগরণের ঢেউ লাগে আসাম বাংলার শহর সিলেটেও এবং এরই একটি ধাপ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের গোড়াপত্তন। কোন সা¤প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের মুসলমানদেরকে প্রগতির পথে নিয়ে যাবার মানসেই ১৯৩৬ সনের ১৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের যাত্রা।
এজন্যে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ এর প্রতিষ্ঠালগ্নে তার উদ্দেশ্য হিসেবে যা ঘোষণা করা হয় আজো তা গঠনতন্ত্রের আদর্শ উদ্দেশ্য হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ঘোষণাটি হচ্ছে-‘মুসলমানদের সমাজে সাহিত্য চর্চার ব্যাপক প্রচলন, বৃহত্তর সিলেটের বাংলা ভাষাভাষী অজ্ঞাতনামা কবি ও সাহিত্যিকগণের রচিত সাহিত্য সংকলন প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ এবং মুসলিম সাহিত্যসেবীবৃন্দের সাহিত্য চর্চার সুযোগ প্রদান’।
সাহিত্য সংসদের সূচনার পর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ অঞ্চলের সাহিত্য সাংস্কৃতিক বিকাশে অনন্য অবদানের জন্যে জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহিত্য সংসদকে সিলেট অঞ্চলের বিগত শতাব্দীর (বিংশ শতাব্দী) সবচে বড় কীর্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সাহিত্য সংসদের প্রাণপুরুষ আজীবন সম্পাদক মুহম্মদ নুরুল হক ‘অভিযান’ নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকা বের করতেন। তিনি তখন মাদ্রাসার ছাত্র। সেই মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায়ই অভিযানের নাম পরিবর্তন করে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে ‘আল- ইসলাহ’ নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি স্থানীয় মুসলিম জনমানসে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সিলেট আসাম অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দকে আকৃষ্ট উদ্বুদ্ধ করতে সম হয় ‘আল ইসলাহ’। মূলত আল ইসলাহ সম্পাদক মুহম্মদ নুরুল হকের উদ্যোগে সিলেটের প্রধান ধর্মীয় আকর্ষণ দরগাহ-ই- হযরত শাহজালাল (রহ:) এর মুতাওয়াল্লী এ জেড আব্দুল্লাহর বাড়ির বৈঠকখানায় একটি সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্যে সভা হয়। সিলেটের বিশিষ্ট মুসলিম নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন। খেলাফত আন্দোলন ও স্বদেশী আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব ছিলো তাদের জীবনে।
তারা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করেছেন। তারা সাহিত্যের মাধ্যমে মুসলিম জাগরণের জন্যে কাজ করেছেন। এদের মধ্যে সে সময়ের এমএলএ এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মোহাম্মদ চৌধুরী, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, মকবুল হোসেন চৌধুরী (এমএলএ আসাম আইন পরিষদ ১৯৩৭ থেকে, সম্পাদক দৈনিক সোলতান, কলকাতা ১৯৩০) মৎস্যজীবি নেতা সিকন্দার আলী, কবি আবদুর রাজ্জাক, মুহম্মদ নূরুল হক, সৈয়দ আমিরুল ইসলাম প্রমুখ ঐ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সেই সভায় মরমী কবি হাসন রাজার পুত্র দেওয়ান একলিমুর রাজাকে সভাপতি এবং দরগা শরীফের মোতাওয়াল্লী এ জেড আব্দুল্লাহকে সম্পাদক করে সাহিত্য সংসদের প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। সংসদ প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর মুহম্মদ নুরুল হক সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরের বছরই তাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
আমৃত্যু তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময় যারা সাহিত্য সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন- প্রথম সভাপতি মরমী কবি হাসন রাজার পুত্র সিলেটের প্রথম আধুনিক কবি দেওয়ান একলিমুর রাজা কাব্যবিশারদ, সয়ফুল আলম খান, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, নজমুল হোসেন চৌধুরী, মতিন উদদীন আহমদ, আমীনুর রশীদ চৌধুরী, এডভোকেট মুশতাক হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর এম বি মজমাদার, মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, এএইচএম সা’আদত খান, দেওয়ান ফরিদ গাজী, অধ্য মাসউদ খান, রাগিব হোসেন চৌধুরী এবং বর্তমান সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরী।
বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারীরা হচ্ছেন এজেড আব্দুল্লাহ, মুহম্মদ নূরুল হক, আবদুল ওয়াহেদ খান, শামসুল আলম চৌধুরী,রাগিব হোসেন চৌধুরী, হারুনুজ্জামান চৌধুরী এবং বর্তমানে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল হামিদ মানিক। এছাড়া নসীর উদ্দীন আহমদ ও এমএ করিম চৌধুরী স্বল্পসময়ে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্য সংসদের প্রথম কমিটি হচ্ছে-
সভাপতি খান বাহাদুর দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরী কাব্য বিশারদ-এমএলএ, সহ- সভাপতি- এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মোহাম্মদ চৌধুরী এমএলএ, সহসভাপতি- মোহাম্মদ মকবুল হোসেন চৌধুরী এমএলএ,সম্পাদক সরেকওম আবু জাফর আব্দুলাহ, সহ-সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল হাফিজ ও দেওয়ান অহিদুর রহমান রাজা চৌধুরী, সদস্য: দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ এম, এ, সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বিএ, ইকবাল হোসেন চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ সিকন্দর আলী, মুহম্মদ নূরুল হক (সম্পাদক আল-ইসলাহ), মো.আব্দুর রাজ্জাক, আবু মুকতাদির মোহাম্মদ রইস, আবু মোহাম্মদ আব্দুজ্জাহের, মোহাম্মদ আব্দুল বারী চৌধুরী, বিএ, আব্দুল হাই, নুর উদ্দিন ।
সাহিত্য সংসদের বর্তমান কমিটি- সভাপতি মো. হারুনুজ্জামান চৌধুরী, সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান চৌধুরী এডভোকেট, সহ-সভাপতি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) জুবায়ের সিদ্দিকী, সহ-সভাপতি সৈয়দ মুহিবুর রহমান, সহ-সভাপতি ডা: আব্দুল হাই মিনার, সহ-সভাপতি আজিজুল হক মানিক সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ মানিক, সহ-সাধারণ সম্পাদক সেলিম আউয়াল, কোষাধ্য মো. জাহেদুর রহমান চৌধুরী, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক নাজমুল আনসারী, পাঠাগার সম্পাদক সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, সদস্য আজিজুল মালীক চৌধুরী এডভোকেট, আফতাব চৌধুরী, এহিয়া রাজা চৌধুরী,অধ্যাপক নন্দলাল শর্মা, ডা. মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী (বাহার), আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ,মো. সিরাজুল ইসলাম শাহীন,মো. রুহুল ফারুক, মুহিত চৌধুরী,দেওয়ান তৌফিক মজিদ, এডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি, এডভোকেট আব্দুস সাদেক লিপন।
o আল-ইসলাহ:
বাংলাদেশে এখন বোধ হয় সবচে পুরনো সাহিত্য পত্রিকা ‘আল-ইসলাহ’। পত্রিকাটি প্রকাশের ৮০ বছর পেরিয়ে গেলো। আর ক’দিন পর আল-ইসলাহ শতবর্ষী হবে। বাংলাদেশে এতো পুরনো সাহিত্য পত্রিকা আছে বলে মনে হয় না। পত্রিকাটি মাসিক হলেও নিয়মিতভাবে প্রতিমাসে বের হয়েছে খুব কম সময়। কখনো দু’মাসে, কখনো ৩/৪ মাসে। আল-ইসলাহ ভাষা আন্দোলনে বাংলার পে সম্পাদকীয় লেখাসহ বিভিন্ন প্রবন্ধে বাংলার পে যুক্তি উপস্থাপন করেছে। এ ছাড়া লেখক সৃষ্টি বিকাশে অনন্য অবদান রাখছে। পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন মুহম্মদ নূরুল হক।
১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে অক্টোবর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মুহম্মদ নূরুল হক আল-ইসলাহ’র সম্পাদক ছিলেন। তার মৃত্যুর বেশ কিছুদিন পর রাগিব হোসেন চৌধুরীর সম্পাদনায় আল ইসলাহ আবার বের হয়। পরবর্তীতে সাহিত্য সংসদের সাহিত্য সম্পাদক পদাধিকার বলে আল-ইসলাহ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালনকারী আল-ইসলাহ সম্পাদকরা হচ্ছেন মুহম্মদ নূরুল হক, রাগিব হোসেন চৌধুরী, আবদুল হাই মিনার, আজিজুল হক মানিক, আবদুল হামিদ মানিক, সেলিম আউয়াল, নাজমুল আনসারী। তবে এসময়ে এম এ করিম চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে আল-ইসলাহর একটি সংখ্যা বের করেছিলেন।
আল-ইসলাহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পঞ্চাশ দশকে হযরত শাহজালাল (রহঃ) সংখ্যা, কবি আবদুর রাজ্জাক সংখ্যা,স্বাধীনতা পরবর্তী কালে আল-ইসলাহ ৫০ বছর পূর্তি সংখ্যা, ৬০ বছর পূর্তি উপলে বিশেষ সংখ্যা, হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর সিলেট বিজয়ের ৭শ বছর পূর্তি উপলে বিশেষ সংখ্যা, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সংখ্যা, বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক অধ্যাপক আসাদ্দর আলী সংখ্যা, সিলেটের সাহিত্য আড্ডা সংখ্যা ইত্যাদি।
একটি জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র :
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অনেকগুলো কার্যক্রমের একটি হচ্ছে নিয়মিতভাবে সাহিত্য আসর আয়োজন। প্রতিটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেয় বসে লেখক আড্ডা। সেখানে কেউ কবিতা পড়েন, কেউ গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ। তারপর পাঠ করা লেখাগুলো নিয়ে আলোচনা। চা পান, হালকা নাস্তা, পুরনো বন্ধুদের সাথে অনেকদিন পর দেখা, অথবা বৃহস্পতিবারে অপোয় থাকা বন্ধুর সাথে আড্ডা দেবার বাসনায়।
সাহিত্য সংসদের শুরু থেকেই সাহিত্য আসর চলছে। এভাবে প্রতি সপ্তাহে সাহিত্য আসর হতো না। তখন একেকদিন একেক জনের বাসায় সাহিত্য আসর বসতো। তারপর ১৯৯৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাহিত্য আসর বসছে। এ পর্যন্ত প্রায় হাজার খানেক সাহিত্য আসর হয়েছে। নিয়মিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আসরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কবি আল মাহমুদ। আজকাল প্রায়ই দেখা যায় দেশ বিদেশের খ্যাতিমান কোন লেখক হয়তো সিলেট বেড়াতে এলেন, দিনটি বৃহস্পতিবার হলে সন্ধ্যায়ই হাজির হবেন সাহিত্য আসরে। নিয়মিত সাহিত্য আসরে আসা লেখক অনেক জন। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, শাহেদ আলী, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, আল মাহমুদ, নারায়ন সান্যাল, আল মুজাহিদী, সৈয়দ তোশারফ আলী, রেজা উদ্দিন স্টালিন।
প্রতি একশ’টি সাহিত্য আসর শেষে আসরে অংশ নেয়া লেখকদের মধ্য থেকে বাছাই করা ৪জন লেখককে কবিতা, গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ এই চারটি বিষয়ে পুরস্কার দেয়া হয়। জাতীয়ভাবে তাদের প্রতিনিধিত্ব কতোটুকু হবে জানিনে, তবে সিলেটের সম্ভাবনাময় তরুণ লেখকদের ৯০ শতাংশই সাহিত্য সংসদের লেখক। সিলেট অঞ্চলের খ্যাতিমান লেখকদের প্রতি বছর অথবা দু’ বছর অন্তর সাহিত্য পুরস্কার দেয়া হয়। ক্রেষ্ট, সনদ ছাড়া পুরস্কার পাওয়া লেখককে নগদ দশ হাজার টাকা দেয়া হয়ে থাকে।
সাহিত্য সংসদ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে। এর মধ্যে ১৯৬১ সালে অনুষ্ঠিত উপমহাদেশের প্রথম নজরুল সাহিত্য সম্মেলন উল্লেখযোগ্য। তবে এখন নিয়মিতভাবে সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি বছর সম্মেলন আয়োজনের টার্গেট থাকলেও সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে দু’বছরে একবার সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি সাহিত্য সম্মেলনেই একজন অথবা দু’জন বিশিষ্ট লেখককে কেমুসাস সাহিত্য পুরস্কার দেয়া হয়। এ পর্যন্ত কেমুসাস সাহিত্য পুরস্কার যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন কথা শিল্পী অধ্যাপক শাহেদ আলী, বিশিষ্ট লেখক শিাবিদ সৈয়দ শামসুল ইসলাম, গবেষক অধ্যাপক আসাদ্দর আলী, গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল, গবেষক দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, গবেষক ড. গোলাম কাদির, লেখক শিাবিদ প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ।
জ্ঞানীদের কদর মূল্যায়ন সাহিত্য সংসদের অন্যতম প্রধান কাজ। এজন্যে জ্ঞানের চর্চা-বিকাশে প্রতি বছর অথবা দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মানসুচক সদস্য পদ প্রদান করা হয়। এ পর্যন্ত যাদেরকে সম্মানসুচক সদস্যপদ দেয়া হয়েছে, তারা হচ্ছেন ১৯৯৩-৯৪ সেশনে কবি দিলওয়ার ও মহাকবি ইসহাক রেজা চৌধুরী, ১৯৯৫ সনে ৫৯ বর্ষের বার্ষিক সাধারণ সভায় মুহম্মদ নূরুল হকের সহধর্মিনী সুলেখিকা নূরুন্নেসা হক, কথাশিল্পী আকাদ্দাস সিরাজুল ইসলাম, ১৯৯৬ সনের ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ৬০ বর্ষের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রখ্যাত গ্রন্থাগারিক এম এ লতিফ, বাউল কবি শাহ আব্দুল করিম, ১৯৯৭ সনের ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত ৬১ বর্ষের বার্ষিক সাধারণ সভায় বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ শামসুল ইসলাম, বিশিষ্ট লেখক সংগঠক আজিজুস সামাদ, পিটুয়ার সাংবাদিক বশীর আহমদ, ১৯৯৯ সনের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় মুক্তিযুদ্ধের সহকারী চীফ অব স্টাফ কর্ণেল আজিজুর রাজা চৌধুরী (এ আর চৌধুরী), সাহিত্য সংসদের নিয়মিত অবৈতনিক অডিটর মাহমুদুজ্জামান চৌধুরী, পরবর্তীতে বিশিষ্ট নজরুল গবেষক কবি-সাংবাদিক আব্দুল মুকিত চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক প্রফেসর আবুল বশর, শিক্ষাবিদ-লেখক প্রফেসর সালমা চৌধুরী প্রমুখ।
সাহিত্য সংসদ নতুন প্রজন্মকে এদেশের প্রকৃতি, লেখক-কবিদের বেড়ে ওঠার স্থল এবং ঐতিহাসিক স্থানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘শেকড়ের সন্ধানে অভিযাত্রা’ নামে এসব কর্মসূচী পরিচালিত হয়। এতে লেখক শিল্পী সাহিত্যিকরা অংশ নেন। প্রতি বছর আয়োজিত এসব অভিযাত্রা যে সব স্থানে পরিচালিত হয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মহাকবি সৈয়দ সুলতান, মরমী কবি হাসন রাজা, দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, সুফী কবি শীতালং শাহ’র জন্মভ‚মি।
o পাঠাগার :
বিশিষ্ট লেখক আবুল ফজল বলেছেন, যে বইটি লেখকের নিজের কাছেও থাকে না, সেই বইটি সাহিত্য সংসদের পাঠাগারে পাওয়া যায়। সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন তার ‘বাংলা সাহিত্যে সওগাত যুগ’ নামের যে বিশাল গ্রন্থটি লিখেছেন এর সবগুলো তথ্য সাহিত্য সংসদ পাঠাগার থেকে নেয়া। নাসির উদ্দিন সাহেব তার গ্রন্থটি লেখার জন্য সাহিত্য সংসদে সংরতি সবগুলো সওগাত পত্রিকা তার নিজের কাছে নিয়ে যান। অবশ্য পত্রিকাগুলো আর ফেরত দেয়া হয়নি। বদর উদ্দিন উমর তার ভাষা আন্দোলন গ্রন্থের ভ‚মিকায় উল্লেখ করেছেন গ্রন্থের তথ্যগুলো সাহিত্য সংসদ থেকে সংগৃহীত। সাহিত্য সংসদে এখন বইয়ের সংখা প্রায় অর্ধল। এই সংখ্যাটি হয়তো খুব একটা বেশী নয়, কিন্ত সাহিত্য সংসদের পাঠাগারের বইয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বেশীর ভাগ বইয়ের বয়স ষাট বছরের বেশি। এখনো অনেক লেখক তার পুরনো বইটি সাহিত্য সংসদের পাঠাগারে খোঁজ করেন। তবে মাত্র ১৯টি বই নিয়ে সাহিত্য সংসদের পাঠাগারের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। এখন প্রতিদিন শত শত পাঠক সাহিত্য সংসদ পাঠাগারে বসে বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়তে পারেন। বই বাড়িতে নিয়ে পড়ারও ব্যবস্থা আছে। পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
সাহিত্য সংসদ বই পড়ায় উৎসাহ দেবার জন্যে প্রতি বছর শ্রেষ্ঠ পাঠককে পুরস্কার দিয়ে থাকে। বইকে সবার কাছে পৌছে দেবার জন্যে প্রতি বছর বই মেলা করে থাকে। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে প্রথম কেমুসাস বইমেলা হয়। এখনো প্রতি বছর হচ্ছে। বইমেলায় সিলেট ও ঢাকার প্রকাশকরা অংশ নেন।
o সংসদ ভবন:
সিলেটের অহিংস শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সাম্য-ভ্রাতৃত্ববোধে লালিত সাংস্কৃতিক চেতনার প্রাণপুরুষ হযরত শাহজালাল (রহ:) মাজারের প্রধান ফটকের গা ঘেষেই সাহিত্য সংসদ ভবন।
১৯৩৬ এ যাত্রা শুরুর পর ১৯৩৯ পর্যন্ত সাহিত্য সংসদের কার্যক্রম দরগাহ শরীফের মুতাওয়াল্লী এ জেড আব্দুল্লাহ এবং সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসার শিক লেখক মাওলানা মছদ্দর আলীর বাসায় পরিচালিত হতো। ১৯৩৯ সালে মাওলানা মছদ্দর আলীর বাসার সামনে দরগাহ শরীফের মোতাওয়াল্লীর দেয়া একটি ভ‚মিতে কাঁচাঘর তৈরি করে সাহিত্য সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৪৯ সালে দরগাহ শরীফের প্রবেশ মুখের বর্তমান স্থানে সাহিত্য সংসদ স্থানান্তর করা হয়। বর্তমান স্থানে আনজুমানে ইসলামিয়ার হল ও লাইব্রেরী ছিলো। আসামের সাবেক শিামন্ত্রী আব্দুল মজিদ সিআইই এর অনুরোধে এ জেড আব্দুল্লাহর পিতা আবু সাদ আবদুল হাফিজ ১৯১৫ সালে আনজুমানকে এ ভ‚মি দান করেছিলেন। বর্তমান স্থানে এসেই সাহিত্য সংসদ পরিপূর্ণতা ও বিশালতা লাভ করে। পরবর্তীতে সাহিত্য সংসদের আয় বাড়ানোর জন্যে ১৯৯৪ সালে সংসদের দণি দিকের ভ‚মিতে চারতলা বিশিষ্ট একটি বাণিজ্যিক ভবন গড়ে তোলা হয়। ২০০৬ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের উদ্যোগে ও আগ্রহে জেলা পরিষদের মাধ্যমে সাহিত্য সংসদের জন্যে ৪তলা বিশিষ্ট আরেকটি ভবন তৈরী করা হয়।
সংসদের মূল ভবনটি ’৪৭ এর গণভোটের জন্য প্রাপ্ত জনগণের চাঁদার বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে তৈরী করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনের ভবনটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়লে মূল একতলা ভবনের স্থলে আরো নতুন একটি ভবন তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয়। সাহিত্য সংসদের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বিশাল সুরম্য পাঁচতলা এ ভবনটি দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি সিলেটের কৃতী সন্তান মাহবুবুর রহমানের একক অর্থায়ণে নির্মিত হচ্ছে। ভবনটির প্রতিটি ফোরের পরিমাণ সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গফুট। নতুন ভবনটিতে রয়েছে বিশাল অডিটরিয়াম, লাইব্রেরী, জাদুঘর, কনফারেন্স হল ইত্যাদি। ভবনটি নির্মাণে প্রায় ৫কোটি টাকা ব্যয় হবে। ইতোমধ্যে ভবনটির প্রায় সত্তর ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এ ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে সাহিত্য সংসদের কার্যক্রম আরো বাড়বে।
o আওরঙ্গজেবের হাতের লেখা কোরআন শরীফ:
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে যেমন পুরনো বই রয়েছে তেমনি রয়েছে অনেক পূরাকীর্তি শিলালিপি। হাতের লেখা কোরআন শরীফ। এরমধ্যে সবচে উল্লেখযোগ্য মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের হাতের লেখা কোরআন শরীফ। বেশ কিছু মূল্যবান শিলালিপিও সাহিত্য সংসদের সংগ্রহে রয়েছে।
o সাহিত্য সংসদ হাতছানি দেয়:
সাহিত্য সংসদ যখন কুড়ে ঘরে ছিলো তখন থেকে এবং বিশাল অট্টালিকায় আসার পর এখনো হাতছানি দেয় ঐতিহাসিক জ্ঞানপিপাসু আলোকিত সমাজ নির্মাণে প্রত্যয়ী শান্তিকামী-মানবতাবাদী-বিশ্বাসী মানুষকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাহিত্য সংসদে এসেছেন চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, আবু হোসেন সরকার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী,স্যার সাদ উল্লাহ, সুন্দরী মোহন দাস, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, অতুল নন্দী, কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন, কবি তালিম হোসেন, কবি ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আবদুস সুলতান, বিচারপতি একে ব্রোহী, মওলানা আকরম খাঁ, মাওলানা মুজিবুর রহমান, আলতাফ গওহর, ফরিদ আহমদ, মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শাহ আজিজুর রহমান, মনিরুজ্জামান ইসলামবাদী প্রমুখ। মরহুম মুহম্মদ নূরুল হকের আত্মকথা বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের লেখা থেকে জানা যায় জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সিলেট আসলেই সাহিত্য সংসদে একবার আসতেন।
সাহিত্য সংসদের একটি পরিদর্শন খাতাটি খোলা হয় ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে ।
সাহিত্য সংসদের পরিদর্শন বই খোলার পর দেখা যায় সাহিত্য সংসদ পরিদর্শনে আসা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের চমকপ্রদ মন্তব্য। পরিদর্শন বইয়ে লেখা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মন্তব্য নিয়ে দুটো বইও বেরিয়েছে। সাহিত্য সংসদের পরিদর্শন বইতে যে সকল বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক ও নেতার মন্তব্য রয়েছে তাদের মধ্যে আছেন- কবি জসীম উদদীন, মানিক বন্দোপাধ্যায়, তারা শংকর বন্দোপাধ্যায়, হাবিবুল্লাহ বাহার, আবু জাফর শামসুদ্দীন, মোহাম্মদ মোদাবের, প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম, ভাষা সৈনিক মাহবুব-উল-আলম, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হামিদুল হক চৌধুরী, শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক, মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী, সুফিয়া কামাল,কাজী মোতাহার হোসেন, ইবরাহিম খাঁ, সৈয়দ আলী আহসান, মতিয়া চৌধুরী, আবু রুশদ মতিন উদ্দীন, অধ্যাপক কে আলী, নূরুল মোমেন, বেদুঈন সামাদ, আল মাহমুদ, বিচাপতি হাবিবুর রহমান, বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী, প্রফেসর ড. এম শমসের আলী, প্রফেসর ড. এম এরশাদুল বারী, কবি আসাদ চৌধুরী, বিচারপতি মোস্তফা কামাল প্রমুখ।
সাহিত্য সংসদের নতুন বিশাল সুরম্য ভবনের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বিস্তার হচ্ছে স্বপ্নের নতুন ভবন জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সুবিধে আরো বাড়াবে, উন্মোচন করবে নতুন নতুন দিগন্তের সংসদের জরাজীর্ণ ভবনও ছিলো বাতিঘর, নতুন ভবন হলে সেই বাতিঘর হবে আরো প্রজ্জ্বলিত। আলো আরো ছড়িয়ে যাবে দিক হতে দিকে। সংস্কৃতিবান-সমৃদ্ধ জাতি গঠনের মাধ্যমে সমাজ- দেশ এগিয়ে যাবে কল্যণ শান্তির পথে। শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় সাহিত্য সংসদে থাকবে উজ্জ্বল ভ‚মিকা এই প্রত্যাশা বিশ্বাস সাহিত্য সংসদ সংশিøষ্ট সকলের।
সূত্র:
১। সিলেটে সাহিত্য চর্চার মূল কেন্দ্র কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ- আবদুল হামিদ মানিক
২। সংসদের একালের কথা- আজিজুল হক মানিক
৩। আমার দেশ এর মুখোমুখি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি রাগিব হোসেন চৌধুরী
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : আবদুল হাই শিকদার
৪। মাসিক আল-ইসলাহ, ষাট বছর পূর্তি সংখ্যা।
Leave a Reply