শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ভারতীয় কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাডকে গ্রেপ্তার ও হেনস্তার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র এখনো দুঃখপ্রকাশ করেনি। তবে দেশটি ঘটনা-সংশ্লিষ্ট বিষয় পর্যালোচনা করছে বলে জানিয়েছে। আজ বুধবার এনডিটিভি অনলাইনের খবরে এ কথা জানানো হয়।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্যেই কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত হয়, যার পেছনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দুই দেশের মতপার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন দিল্লির এক কর্মকর্তা।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুজাতা সিং ওই সফরে বেশ কয়েকটি স্পর্শকাতর বিষয়ে ভারতের অবস্থান ওয়াশিংটনের সামনে তুলে ধরেন, যার শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্যের বিষয়টি। দেবযানীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটি বার্তা দিতে চেয়েছে, যাতে আমরা ভেঙে পড়ি। এটা বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট কারণও আছে। তিনি জানান, এর আগে রাশিয়ার একাধিক কূটনীতিকের বিরুদ্ধে বীমা জালিয়াতির অভিযোগ উঠলেও মার্কিন প্রশাসন নিউ ইয়র্ক পুলিশ বা অ্যাটর্নির কার্যালয়কে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেয়নি। দেবযানীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা তারা বলছে, রুশ কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেছেন, বিষয়টি যে ভারতের জন্য স্পর্শকাতর, আমরা তা বুঝতে পারছি। বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা দুই দেশের মর্যাদাপূর্ণ বন্ধুত্বের সম্পর্কের নির্দেশক নয়। দেবযানীকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে মুখপাত্র জানান।
গৃহকর্মীর ভিসায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে ৩৯ বছর বয়সী ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাডকে সন্তান নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ দেবযানীকে কারাগারে বিবস্ত্র করে তল্লাশি করেছে, মাদকাসক্তদের সঙ্গে একই কক্ষে আটক করে রেখেছে এবং তাঁর ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করেছে। এ সময় তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে নেওয়া হয়।
ভারত বলছে, দেবযানীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণ ভিয়েনা কনভেনশনের ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো কূটনীতিকের ‘গুরুতর অপরাধের’ জন্য শুধু গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন বিষয়টিকে ‘ঘৃণ্য ও বর্বর’ বলে অভিহিত করেছেন। গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে তলব করেন এবং ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য আচরণ’ বলে প্রতিবাদ জানান।
গত সোমবার লোকসভার স্পিকার মিরা কুমার ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন প্রতিবাদের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবাদস্বরূপ কংগ্রেসের সহসভাপতি রাহুল গান্ধী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার সিন্ধে ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন।
এদিকে দেবযানী খোবরাগাডকে গ্রেপ্তার ও হেনস্তার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি। এর অংশ হিসেবে দিল্লিতে অবস্থানরত মার্কিন কূটনীতিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিমানবন্দরের বিশেষ পাস গতকাল প্রত্যাহার করেছে ভারত। মার্কিন দূতাবাসের জন্য আমদানি ছাড়পত্র স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে নয়াদিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের বাইরে ব্যারিকেড তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে পুলিশ।
ভারতে অবস্থিত মার্কিন বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকদের ভিসা ও অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করতে বলেছে সরকার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভারতীয়দের বেতন-সংক্রান্ত তথ্য দিতে এবং তাঁদের ব্যাংক হিসাব জানাতেও বলা হয়েছে।