ইউনুস আলী আকন্দ নামের এক আইনজীবী বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি আবেদন জমা দেন। দেশের দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দলের প্রধানদের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের নির্দেশনা চেয়ে আদালতে এই রিট আবেদন করেন তিনি। যা আগামী সোমবার হাই কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদনটি উপস্থাপন করবেন এই আইনজীবি। আর তাতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ সরকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করা হয়েছে। একইসঙ্গে সারা দেশে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন বন্ধেও নির্দেশনা চেয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী এর আগে মেডিকেলে ভর্তিচ্ছুদের আন্দোলন ও বুয়েট শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন নিয়েও আদালতে রিট করে আলোচিত হন।
‘রাজনৈতি সংকট’ কাটাতে এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য নির্দেশনা দিতে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান ত্যাগ করে দুই নেত্রীকে নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করতে কেন র্নিদশনা দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল চাওয়া হয়েছে এই রিটে। দেশের প্রধান দুই দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানে এবং বিদ্বেষপূর্ণ অবস্থা নিরসনে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না- সে বিষয়েও রুল চেয়েছেন ইউনুস। এছাড়া রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হরতাল, অবরোধ এবং বিশৃঙ্খলা থেকে বিরত থাকতে রাজনৈতি দলগুলোর প্রতি আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার পর থেকেই বিএনপি সমমনা দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মতপার্থক্য অবসানে কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীরাও দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়রম্যান মিজানুর রহমানও বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে তিনি এই আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সম্প্রতি সংলাপে তার দলের অনাপত্তির কথা জানান। এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতারা বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতির দাবি সরকার মেনে নিলে তবেই সংলাপ হতে পারে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসানে সংলাপে বসতে হলে বিএনপির উচিৎ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছেড়ে আসা।
উল্লেখ্য, গত এক মাসে সহিংসতায় ৭০ জনেরও বেশি মানুষ হতাহত হওয়ায় এবং বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই সারা দেশে সহিংসতা চালিয়ে আসছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি তাদের প্রথমে তাদের সমর্থন পরিষ্কার না করলেও পরবর্তীতে দল প্রধান খালেদা জিয়া সিংগাপুর থেকে ফিরে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে বিএনপি‘র অবস্থান সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
এদিকে সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধে দাবিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে শাহবাগসহ সারা দেশে চলে আসা ছাত্র-জনতার আন্দোলন বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন ইউনুস আলী আকন্দ। সংলাপ নিয়ে রুলের নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বিবাদী ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিতে আদালতকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
Leave a Reply