আমিনুল ইসলাম মিঠু •
সাংবাদিকদের মানবিকতা নিয়ে নিন্দুকের অভাব নেই। কিন্তু রোববার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে হামলার শিকার নারী আইনজীবীকে যিনি তাকে রক্ষা করলেন তিনি সাংবাদিক। আলোকচিত্রী হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্যেই তিনি এগিয়ে যান ওই আইনজীবীকে বাঁচাতে। রোববার হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে একজন নারী আইনজীবীকে যখন জাতীয় পতাকা বাধা লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটঅয় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। টেনে হিচড়ে জামা ছিড়ে ফেলা হয়।
সহাভূতি নিয়ে এগিয়ে আসা সাংবাদিকের নাম সানাউল হক। যিনি সাংবাদিক মহলে সানা ভাই নামে পরিচিত। ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ-এ তিনি ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। তার ওপরও আক্রমণ চালাতে পারতো দুস্কৃতিকারীরা। এ বিষয়টি জানা সত্ত্বেও তিনি থেমে যাননি। একাই এগিয়ে গেছেন। নারী আইনজীবিকে উদ্ধারের ছবি ফেসবুকসহ সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সাংবাদিক সানাউল হক প্রশংসিত হয়েছেন।
সানাউল হক বলেন, ওই আইনজীবীকে এমনভাবে পেটানো হচ্ছিল যে আমার খুব খারাপ লাগছিল। কারণ, দিন শেষে তো আমরা মানুষ। ওই নারী আইনজীবিকে উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এগিয়ে না আসলে দেখা যেতো ওই নারী আইনজীবীর জামা-কাপড় ছিড়ে উলঙ্গ করে ফেলত। এমনকি ওনাকে পেটাতে পেটাতে মেরেই ফেলতো। তাই আমি আক্রমণকারীদের বাধা দেই। চিৎকার করাতে অন্যরাও এগিয়ে আসে। ফলে ওনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
সানাউল হক বলেন, একজন মানুষ হিসেবে তো আরেকজন মানুষকে এভাবে মারতে দেখতে পারি না। বর্তমানে বাংলাদেশে যা হচ্ছে এ পরিস্থিতিতে একজন মানুষকে উদ্ধারের সুযোগ আমার হয়েছে; সেই সময় আমি মানুষ হিসেবে আমার দায়িত্বটুকু পালন করেছি মাত্র। তিনি বলেন, আমি জানি, ওই মুহুর্তে আমাকেও হয়তো আক্রমণ করা হত। কিন্তু সকল কিছুর উর্ধ্বে আমরা মানুষ। আমাদের বাঁচাতে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবেই।
সানাউল হকের এ কাজ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। গাজী টিভির প্রধান প্রতিবেদক রকিবুল ইসলাম মুকুল তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখেন, “সাংবাদিকদের মানবিকতা নিয়ে নিন্দুকের অভাব নেই. পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্যেও সাংবাদিকরা কতো মানবিক তা আসলে কেউ স্বীকার করতে চান না. রবিবার হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে একজন নারী আইনজীবীকে যখন জাতীয় পতাকা বাধা লাঠি দিয়ে নির্লজের মতো পেটানো হলো.. টেনে হিচড়ে জামা ছিড়ে ফেলা হলো.. এগিয়ে এলেন নিউ এইজ এর ফটো সাংবাদিক সানাউল হক ভাই .. তার ওপরও আক্রমণ চালাতে পারতো বর্বরগুলো.. জানতেন.. কিন্তু চোখের সামনে একজন নারীর অপমান আর নির্লজ্জ আক্রমনে চুপ থাকেননি. ধন্যবাদ সানা ভাই।
সাংবাদিক রওশন আরা মুক্তা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, দিন শেষে মনে হচ্ছে, আজকের রিয়াল হিরো সাংবাদিকরা। যেভাবে তাঁরা সংবাদ সংগ্রহ করেছেন এবং আক্রমণকারীদের হাত থেকে নারী আইনজীবীদের রক্ষা করেছেন, আমার পক্ষ থেকে সাংবাদিক সানা ভাইকে স্যালুট। ফেসবুকে সানাউল্লাহ-র একটি ছবি শেয়ার করে তাঁর সহকর্মী সোহেল মনজুর লিখেছেন, নিউ এজে তোমার সহকর্মী হতে পেরে গর্বিত।
কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক সওগাত আলী সাগর লিখেছেন, বিশ্বজিৎ বেচারা দর্জির পোলা! তার নৃশংস খুন হওয়া ক্যামেরাবন্দী করতেই ব্যস্ত ছিল সব ক্যামেরাওয়ালা৷ এই আইনজীবীটির বেলায় অন্তত একজন ক্যামেরাওয়ালা মানুষ হয়ে উঠেছিলেন৷ স্যালুট সানা, আপনাকে স্যালুট৷ আপনি কেবল ক্যামেরাওয়ালা থাকেননি। মানুষ হয়ে উঠেছিলেন।
নারী আইনজীবীর ওপর হামলাকারীদের শাস্তিও দাবি করেছেন সাগর। তিনি লিখেছেন, আর ওই অমানুষগুলো, যারা একজন মায়ের সম্মান দিতে শিখেনি, ওই দুবৃত্তগুলোকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হউক।
প্রথম এভারেস্টজয়ী বাংলাদেশি মুসা ইব্রাহিমও ফেসবুকে নারী আইনজীবীকে পেটানোর ছবি শেয়ার করেছেন। তিনি প্রশ্ন করেছেন, একজন নারীকে লাত্থি ও লাঠিপেটা করাকে রাজনৈতিক সহিংসতা বলে চালিয়ে দেবেন? তার চেয়েও বড় এবং জঘন্য ব্যাপার : জাতীয় পতাকায় মোড়ানো লাঠি দিয়ে একজন নারীকে পেটানো। এতে কি জাতীয় পতাকার অবমাননা হয় না?