রক্তের প্রলেপ পড়েছে সিরিয়ার মরুমৃত্তিকার পৃষ্ঠে। জীবনের প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে শিশু, নারী, বৃদ্ধ সবাই। সিরিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা নেই কারও। বলতে গেলে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদও জানেন না তারও জীবন প্রদীপ কখন নিভে যাবে। পিপীলিকার মতো ঝাঁকে ঝাঁকে মরছে মানুষ। গর্ভের শিশু থেকে অস্ত্রসজ্জিত নিরাপত্তা বেষ্টনিতে ঢাকা সেনা কমান্ডার মরছে মুহূর্তেই।
কোমলমতি শিশুদের জোর করে যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে। এমনকি, চোরাগোপ্তা ও আঘাতী হামলায় দেদারসে ব্যবহার করা হচ্ছে অবুঝ শিশুদের। ফলে মানবাধিকার হাহাকার তুলেছে সিরিয়ার আকাশে-বাতাসে। জীবিকার তাগিদে বাবার সামনে পতিতাবৃত্তির জন্য পরপুরুষের সামনে দাঁড়াচ্ছে নারীরা। শরণার্থী শিবিরগুলোতে ক্ষুধার যন্ত্রণা। সিরিয়ার মানুষের লড়াই এখন একটাই প্রাণে বেঁচে থাকা। এর বিপরীতে শাসন ক্ষমতার লড়াইয়ে মরিয়া বাশার বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী। বোমার গর্জনে ঘুম হারাম হয়েছে সেখানকার মানুষের। তবু আরও অস্ত্র চাই বাশার ও তার বিরোধীদের। যে যার মতো অস্ত্রের জোগান অব্যাহত রেখেছে। সেই তালে ঢোলে কাঠি দিচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সিরিয়ার বিরোধীদের অস্ত্র দিতে কারও বারণ মানবেন না। ফলে আরও অস্ত্র, আরও মৃত্যু, আরও রক্তের উম্মুক্ত খেলায় মেতে উঠবে সিরিয়া। ফলে এক অস্ত্র-বারুদের দেশে পরিণত হয়েছে সিরিয়া।
এদিকে, সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, আসাদ সরকার এবং তার বিরোধীদের চলমান সংঘাতের ফলে তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২০ লাখ শিশুর জীবন এখন হুমকির মুখে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা এ সংঘাতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাৎতককভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গড়ে প্রতি চারজনে তিনজন শিশুই যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধিকাংশ শিশুই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্যের কারণে দরিদ্র পরিবারগুলোকে টিকে থাকার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সরকারি এবং বিরোধী বাহিনীর হামলায় সমগ্র সিরিয়ায় অন্তত দুই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রতিবেদনে সেভ দ্য চিলড্রেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বলে, এ নিদারুণ দুর্ভোগের লাঘব শুধু যুদ্ধ শেষ করার মাধ্যমেই সম্ভব। সিরিয়ায় প্রজতন্ত্র বিলুপ্তির আশংকা করছে সেভ দ্য চিলড্রেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের সরাসরি ব্যবহার করা হচ্ছে। নীতি এবং আদর্শের কারণে অনেক পরিবারের কাছেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করাটা গর্বের বিষয়। যার ফলে অনেক শিশুকেই বাধ্য করা হচ্ছে যুদ্ধে অংশ নিতে। সংঘর্ষে নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে এসব শিশুও নিহত হওয়ায় প্রজাতন্ত্র বিলুপ্তির আশংকা দেখা দিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
Leave a Reply