বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২৯

বাংলাদেশে দারিদ্রতা কমছে দ্রুতগতিতে

বাংলাদেশে দারিদ্রতা কমছে দ্রুতগতিতে

 

 

 

 

 

 

 

 

ভারতে বাংলাদেশের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ হারে দারিদ্র্য কমেলেও। বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমেছে ভারতের চেয়ে দ্রুতগতিতে । এ ঘটনা ঘটেছে ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে। ওই সময়কালে বাংলাদেশে প্রতি বছর দারিদ্র্য কমেছে শতকরা ৩ দশমিক ২ ভাগ। ভারতে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে দারিদ্র্য কমেছে শতকরা ১ দশমিক ২ ভাগ। এখানেই শেষ নয়। দারিদ্র্য হ্রাসের দিক থেকে বাংলাদেশ ও নেপালের পিছনে রয়েছে ভারত।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-র মানব উন্নয়ন রিপোর্ট ব্যবহার করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি দারিদ্র্য ও মানব উন্নয়ন পদক্ষেপ বিষয়ক এক গবেষণায় এসব কথা বলেছে। এই রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে গড়ে প্রতি বছরে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ৩ দশমিক ২ হলেও নেপালে ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে শতকরা ৪ দশমিক ১ ভাগ। এ সময়ে নেপালে দারিদ্র্যের হার শতকরা ৬৪ দশমিক ৭ ভাগ থেকে কমে শতকরা ৪৪ দশমিক ২ ভাগে এসে দাঁড়ায়। ওদিকে ইউএনডিপি’র মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৬টি দেশ ও বেশ কিছু অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬ নম্বরে। ১৪৭ নম্বরে রয়েছে পাকিস্তান। ভারতের অবস্থান ১৩৬ নম্বরে। নেপাল রয়েছে ১৫৭ নম্বরে। এর শীর্ষে অর্থাৎ এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে।

তারপরে পর্যায়ক্রমে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও জাপান। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে- সামপ্রতিক দশকগুলোতে ৪০টিরও বেশি দেশ মানব উন্নয়নে ব্যাপক অর্জন করেছে, এমনটা পূর্বাভাসও করা যায় নি। এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ ও বিশ্বের প্রতি উদারনীতির কারণে।

অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওপিএইচআই) থেকে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও নেপালে মাথাপিছু আয় কম হলেও দারিদ্র্য হ্রাসে এ দু’টি দেশ সফল হচ্ছে। এর কারণ, সুশীল সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণে বিনিয়োগে কার্যকর সামাজিক নীতি। এমনটা বলেছেন ওপিএইচআই’র পরিচালক সাবিনা আলকিরে। এতে বলা হয়েছে- বিহার, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের মতো দরিদ্র রাজ্য এবং দরিদ্র সামাজিক গ্রুপ যেমন নিম্নবর্ণের আদিবাসী/উপজাতি, মুসলিম, নারীপ্রধান পরিবার ও বৃহৎ পরিবারগুলো সমৃদ্ধ গোষ্ঠীগুলোতে দারিদ্র্য হ্রাসের হার সবচেয়ে কম।

ভারতে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে কেরালা ও অন্ধ্র প্রদেশ। এ দু’টি রাজ্যে দারিদ্র্য হ্রাসের হার সবচেয়ে ভাল হলেও তারা বাংলাদেশ বা নেপালকে স্পর্শ করতে পারে নি। কারণ তাদের দারিদ্র্য হ্রাসের হার বাংলাদেশ ও নেপালের দারিদ্র্য হ্রাসের চেয়ে অর্ধেকের সামান্য বেশি। এতে বলা হয়, দরিদ্র মানুষ যেসব প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে এই তারতম্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অপুষ্টি, শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশন, তাদের জীবনধারা সহ এমনি বিভিন্ন সূচক। এই রিপোর্টের গবেষক সুমন শেঠ বলেন, ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে দারিদ্র্য নিরসনের সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ভারত ভাল করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন নিম্নবর্ণের গ্রুপের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসের হার বেশি। সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের গড় জীবনধারণের গতি অর্থাৎ দারিদ্র্য নিরসনের হার আগের চেয়ে অনেকটা উন্নত হয়েছে। এতে পূর্বাভাস দেয়া হয়, আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি চরম দারিদ্র্যের দেশ সমূলে দারিদ্র্য নিরসন করতে সক্ষম হবে।

অক্সফোর্ডের গবেষণায় দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, নেপাল ও রুয়ান্ডাকে তারকা দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রগতির দিক দিয়ে এ দেশগুলোর পিছনে রয়েছে ঘানা, তাঞ্জানিয়া, কম্বোডিয়া ও বলিভিয়া। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকে (এমপিআই) বঞ্চনা পরিমাপে পুষ্টি, শিশুমৃত্যু, স্কুলে যাওয়া ও উপস্থিতি, জ্বালানি তেল, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, সম্পদ এবং পাকা মেঝে- এই ১০টি পরিমাপক ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১০ সালে নতুন এ গবেষণার পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মানব উন্নয়ন সূচকে উল্লেখ করেছে, অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করছে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো। তা করেছে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে। কমপক্ষে ৪০টি দেশ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসে একটি মধ্যম শ্রেণীর দেশে পরিণত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের ইতিহাসে এমন দ্রুত ও নাটকীয় গতিতে অগ্রগতি আর দেখা যায় নি।

 

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024