শীর্ষবিন্দু নিউজ: নানা চাপে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে। প্রতিবেশী একটি দেশের চাপেই মূলত এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন শুধু মন্ত্রীর অনুমোদন বাকি। অনুমোদন মিললে আগামী সপ্তাহেই ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হবে।
গত ২২শে জানুয়ারি ভারতে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। এরপরই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি গতি পেয়েছে। ওদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এত দিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে থাকলেও এখন তারা বিষয়টি ইতিবাচক চোখে দেখছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ১২ই জানুয়ারি এফবিসিসিআই এক পত্রে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানায়। ওই চিঠিতে তারা জানায়, বর্তমানে বাজারে সব ধরনের মাছের সরবরাহ বেড়েছে। দামও স্থিতিশীল রয়েছে। এ কারণে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা যৌক্তিক। এফবিসিসিআইয়ের পাশাপাশি গত ১০ই সেপ্টেম্বর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এক চিঠিতে ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অব্যাহত রাখা এবং প্রতিষ্ঠিত রপ্তানি বাজার বাংলাদেশের দখলে রাখার জন্য ইলিশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়।
ইপিবি জানায়, বিগত অর্থবছরে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ রপ্তানি বন্ধ থাকার কারণে রপ্তানি আয় ৫৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরের কোয়ার্টারে মাছ রপ্তানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। ইপিবি আরও জানায়, প্রায় ৩৫টি দেশে চিংড়ি ছাড়া অন্যান্য মাছ রপ্তানি করে বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় এসব মাছ রপ্তানি হয়। যার মধ্যে ইলিশের অবদান ২৫ শতাংশ।
এসব চিঠি পাওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ রপ্তানির যৌক্তিকতা সম্পর্কে একটি ধারণাপত্র তৈরি করে। এমন অবস্থা চলতে থাকার সময় ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি গতি পায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ রপ্তানি সম্পর্কে তাদের ধারণাপত্রে বলেছে, ইলিশের প্রধান ভোক্তা প্রবাসী বাংলাদেশীরাই। বিষয়টি স্পর্শকাতর ও আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মৎস্য বিভাগের গভীর নজরদারির ফলে দেশে ইলিশ আহরণ অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আগামীতেও ইলিশ আহরণ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছে সরকার।
চলতি বছর আনুমানিক চার লাখ টন ইলিশ আহরণ হবে। তা ছাড়া এ বছর বাজারে ইলিশের সঙ্কট ছিল না। রপ্তানি নিষিদ্ধ থাকায় বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লেও একটি বড় অংশ চোরাচালানের মাধ্যমে সীমান্তের ওপারে পাচার হয়েছে। এর পরও বাজারে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশ পাওয়া গেছে। মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণণালয় সাময়িক সময়ের জন্য ইলিশ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল।
তারপর কেটে গেছে দেড় বছর। এ দীর্ঘ সময় ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে।
প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন ইলিশ আহরণ করা হলেও রপ্তানি হয় মাত্র আট হাজার টন, যা দেশজ ভোগের তুলনায় অনেক কম। ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকায় দীর্ঘ সমুদ্রসীমা দিয়ে ইলিশ পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকট। এ ছাড়া ইলিশ রপ্তানি বন্ধের কারণে দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা এ দেশের মাছের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। বাজার দখলে চলে যাচ্ছে অন্যদের। দেশের ছোট, মাঝারি হিমায়িত মাছ প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো ও বেশ কিছু বাণিজ্যিক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ রপ্তানি করে থাকে।
গত দেড় বছর ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ব্যাংকঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। রপ্তানি বন্ধের আগে রপ্তানিকারীদের আাগাম সতর্কতা বা মতামত গ্রহণ করলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। সার্বিক বিবেচনায় ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত বলে মনে করছে সরকার।