খালেদ সাইফুল্যাহ: ছোটবেলা থেকে আমার শখ ছিল সাংবাদিকতাকরা। আর শখের বশেই আমার এ পেশায় আগমন। সুতরাং সাংবাদিকতায় ভালো কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা ছিল, আছে এবং থাকবে। আমি হয়ত কিছু কিছু চেষ্টা করেছি কিন্তু কতটুকু করতে পেরেছি সেটা আমার পত্রিকা ‘নোয়াখালী ওয়েব’ কিংবা ডিজিটাল সময়’র পাঠকরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে ২টা পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করার পরও আমি কোথাও নিজেকে সাংবাদিক হিসাবে পরিচয় দেই না কিংবা দেয়ার প্রয়োজনও মনে করি না। কারণ সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করার মাঝে যে আত্মতৃপ্তি আমি পাই, সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার মাঝে সে আত্মতৃপ্তি আমি পাই না। আমি দেখেছি, আমাদের সমাজের অনেক মানুষই সাংবাদিকদের খারাপ হিসাবে জানেন কিংবা খারাপ দৃষ্টিতে দেখেন। অনেককে আবার সাংবাদিকদের নিয়ে আতংকে থাকতেও দেখেছি। কারণ হিসাবে আমি যেটা পেয়েছি অনেক সাংবাদিকই মানুষের দূর্বলতাকে পূজি করে ভয় ভীতি দেখিয়ে টাকা পয়সা/সুবিধা আদায় করেন। আবার অনেককে দেখেছি সুবিধা আদায়ের জন্য কারো বিরুদ্ধে একটা নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করেন আবার সুবিধা পেলে সেই নেতিবাচক সংবাদটিই হয়ে যায় ইতিবাচক! তাহলে সাংবাদিকদের আদর্শ কিংবা নৈতিকতা কোথায়?
সম্প্রতি আমার জানা একটি স্বনামধন্য পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক কর্তৃক সম্পাদিত তার ব্যক্তিগত অনলাইন পত্রিকার একটি সংবাদ দেখলাম ‘ব্যাংকিং সেক্টরে হরিলুট: এবার ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ এর নায়ক এস আলম গ্রুপ’ কিছু সময় পরে হয়ত কোন অনৈতিক সুবিধার বিণিময়ে একই লিংকে ওই সংবাদটাই যখন পরিবর্তিত হয়ে ‘বাংলাদেশের ‘টাটা’ হওয়ার স্বপ্ন এস আলম গ্রুপের’ হয়ে যায় তখন মানুষ সাংবাদিকদের ভালো চোখে দেখবে কেন? (পাঠকদের কাছে প্রদর্শনের সুবিধার্থে ২টা সংবাদ এরই লিংকসহ কপি সংরক্ষণ করা হয়েছে)। এছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি গ্রুপের মালিকানাধীন একটি অনলাইনে বেশ কিছুদিন ধরে সংবাদ পর্যবেক্ষন করে দেখলাম, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিরুদ্ধে বিশেষ সংবাদ। কখনোবা সে সংবাদ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের ঘোষণা। পরক্ষণেই যখন দেখি ঘোষিত ধারাবাহিক সংবাদটি আর প্রকাশিত হয় না এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন উক্ত অনলাইনে ঝকঝক করছে তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না ঘটনাটা আসলে কি?
আমার নোয়াখালী ওয়েব পত্রিকায়ও একবার এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। সৌদিআরব প্রবাসী ফেনীর দাগনভূঞার সুরুজ নামে এক কুখ্যাত রাজাকারকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনটি নিয়ে দেশ বিদেশে ব্যাপক সাড়াও পড়েছিল। প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হওয়ার কথা থাকলেও কোন এক অজানা কারণে প্রতিবেদনের পরবর্তী কিস্তিগুলো আর প্রকাশিত হয় নি।পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আমার তখনকার বার্তা প্রধান এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোন এক অজানা সুবিধার কারণে ধারাবাহিক সংবাদটি প্রকাশনা বন্ধ করে দেন। আমি তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে আমাকে নানান অজুহাত দেখান। কিন্তু এ নিয়ে তখনকার সময় ঐ এলাকার একজন সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিব্রতকর কথা শুনতে হয়েছে। এ পেশার একজন মানুষ হিসাবে এ ধরনের ঘটনাগুলো আমাকে লজ্জিত করে, কষ্ট দেয়, মর্মাহত করে এবং ভাবিয়ে তুলে। সুতরাং এ রকম একটা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ১২ বছর সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত থাকার পরও আমার মত একজন মানুষের সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সুযোগ কোথায়?
লেখক: সম্পাদক, নোয়াখালী ওয়েব ও ডিজিটাল সময়।
Leave a Reply