শীর্ষবিন্দু নিউজ: বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা বটমূল, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও শিল্পকলা একাডেমী এলাকা নিয়ে রাজধানীতে একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব পরিকল্পনার কথা জানান।
জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সফলতার কথা তুলে ধরে শনিবার এই বছরের একুশের গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা জানান তিনি। বর্তমানে জাতিসংঘে ছয়টি ভাষা দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত, এগুলো হল- ইংরেজি, চীনা, আরবি, স্পেনিশ, ফ্রেঞ্চ ও রুশ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার উদ্যোগ নিয়েছি। কিছু সমস্যা আছে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই প্রসঙ্গে জাতিসংঘে বাংলায় দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, তার ধারাবাহিকতায় আমিও জাতিসংঘে যতবার বক্তৃতা দিয়েছি, বাংলায় দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া গ্রন্থমেলা ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারিজুড়ে চলবে।
বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বই বেলার উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গনও ঘুরে দেখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার উদ্যোগ নিয়েছি। কিছু সমস্যা আছে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, সরকার জাতীয় গ্রন্থ নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেখক-প্রকাশকদের ব্যাপারে সরকার আন্তরিক। প্রকাশকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশের রাজধানীতে একটি সাংস্কৃতিক বলয় থাকে। সেখানে সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলা একাডেমি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য একটি সুন্দর (ওভারব্রিজ) উড়ালসেতু অথবা আন্ডারপাস করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী সাংস্কৃতিক বলয়ের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তাঁর সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে রমনা বটমূল পর্যন্ত উড়ালসেতু করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আবার রমনা পার্ক থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও শিল্পকলা একাডেমী পর্যন্ত আরেকটি আন্ডারপাস করে দেওয়া যায়। তাহলে পুরো এলাকার মধ্যে একটা সংযোগ হবে। এ ধরনের একটা পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে তিনি জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আবারও সরকার গঠন করতে পেরেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন শুরু হয়েছে, ইনশাআল্লাহ সম্পন্ন করতে পারব।’ তিনি বলেন, যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে সে জাতি আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা চান তিনি। এ সময় তিনি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পেছনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগ ও অবদানের কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, মেলার পরিধি প্রতিবছরই নিজেকে অতিক্রম করছে। এ কারণে মেলার বিস্তৃতি শুধুমাত্র একাডেমি প্রাঙ্গণে সীমাবদ্ধ রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। তবে মেলার মূল আয়োজন একাডেমি প্রাঙ্গণেই থাকবে বলেও জানান তিনি।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদানের জন্য নয়টি শাখায় ১১ জনের বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কবিতায় হেলাল হাফিজ, কথাসাহিত্যে পূরবী বসু, প্রবন্ধে মফিদুল হক, গবেষণায় জামিল চৌধুরী ও প্রভাংশু ত্রিপুরা, অনুবাদে কায়সার হক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে হারুণ হাবীব, আত্মজীবনী/ স্মৃতি কথা/ ভ্রমণ কাহিনীতে মাহফুজুর রহমান, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পরিবেশে শহীদুল ইসলাম এবং শিশু সাহিত্যে কাইজার চৌধুরী ও আসলাম সানী এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন।