শীর্ষবিন্দু নিউজ: পৌর সুশাসন ও মৌলিক নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি এবং উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারকে ৫৩৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। সোমবার দুপুরে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে এ বিষয়ে পৃথক দু’টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
মিউনিসিপাল গর্ভন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ৪১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণচুক্তি বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্ব ব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ)-এর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন এবং আইডিএ’র পক্ষে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ অফিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাথন জাট ঋণ-চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো পৌর সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং পৌর মৌলিক সেবার মান উন্নয়ন। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত। প্রকল্পটি মোট ৪টি কম্পোন্যান্টের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে: পৌর সুশাসন এবং মৌলিক নাগরিক সেবার মান উন্নয়ন (কম্পোন্যান্ট-১) এর আওতায় নির্ধারিত সংখ্যক আরবান-লোকাল বডিসকে মৌলিক পৌরসেবা সংশ্লিষ্ট উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় পৌর এলাকায় রাস্তাঘাট ব্রিজ, কালভার্ট, বাস-ট্রাক টার্মিনাল, বোট ল্যান্ডিং জেটি, ড্রেন, কাঁচাবাজার ও পাইকারি বাজার, পাবলিক টয়লেট, পার্ক ইত্যাদি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। এ কম্পোন্যান্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের পৌরসভাগুলোর উন্নয়নকল্পে গঠিত বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (কম্পেন্যান্ট-২) এর মাধ্যমে পৌর সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পে আনুপাতিক চাহিদা ভিত্তিক অর্থায়ন করা হবে।
এছাড়া কম্পোন্যান্ট-৩ এর আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং অংশগ্রহণকারীদের দক্ষতা উন্নয়নসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। প্রকল্পের কম্পোন্যান্ট-৪ এর আওতায় জরুরি অবস্থা এবং প্রাকৃতিক ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য ইমিডিয়েট রেসপনস মেডিসিন (আইআরএম) এর আওতায় সরকারকে সহযোগিতার সংস্থান রয়েছে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আইডিএ অত্যন্ত নমনীয় শর্তে ৪১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করবে যা, ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য। উত্তোলিত অর্থের উপর বার্ষিক ০ দশমিক ৭৫ ভাগ হারে সার্ভিস চার্জ প্রদেয়। একইদিনে ঢাকায় বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা’র (আইডিএ) মধ্যে হাইয়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট অ্যান্ড প্রজেক্ট (এইচইকিউইপি) শীর্ষক প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থায়নের জন্য একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এ ঋণচুক্তির আওতায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) প্রকল্পের গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে নমনীয় হারে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মাদ মেজবাহউদ্দিন এবং বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাথন জাট উক্ত ঋণচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা হাইয়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট অ্যান্ড প্রজেক্ট (এইচইকিউইপি) শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছিল। প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রিচার্স অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিআরইএন) স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির দু’টি ইউনিট ২০ বছরের ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
এটি কার্যকর করার জন্য স্যামসাং কোম্পানিকে ইতোমধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। বিডিআরইএন এর মাধ্যমে একাডেমিক, বিজ্ঞানী, গবেষকগণ আইসিটির আধুনিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে এবং বর্হিবিশ্বের একাডেমিক ও গবেষকদের মধ্যে গবেষণার উপাত্ত আদান-প্রদান করতে পারবেন। দেশের উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে দেশের সব পাবলিক ও নির্বাচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য: উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ও জবাবদিহিতামূলক কার্যক্রমকে উৎসাহ প্রদান। কারিগরি ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারি ও নির্বাচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি। প্রকল্পটির উদ্যোগী মন্ত্রণালয় হলো-শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি মে ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১৩ মেয়াদে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা থাকলেও অতিরিক্ত অর্থায়নের প্রয়োজনে প্রকল্পটির মেয়াদ ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।