শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২২

কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়ে শিবিরেই হতাশা

কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়ে শিবিরেই হতাশা

নুর মোহাম্মদ: সদ্য গঠিত ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বিশেষত সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমানকে নিয়ে তৃণমূলে ব্যাপক ক্ষোভ এবং হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।

সভাপতি ও কার্যকরী পরিষদ মনোনীত সেক্রেটারি আতিকুর রহমানকে তৃণমূলে কেউ মানতে পারছেন না।

জামায়াতে ইসলামীর সংকটময় মুহূর্তে দলটির ছাত্রসংগঠন শিবিরের জন্য এমন নেতৃত্ব কোনভাবেই উপযুক্ত মনে করছে না কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিবির নেতারা।

তাদের অভিযোগ, শিবিরে বরাবরই মেধাবী ও সাংগঠনিকভাবে অভিজ্ঞদের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকেই সভাপতি, সেক্রেটারি, অফিস, সাহিত্য, প্রচার, ছাত্র আন্দোলন সম্পাদকসহ ‍গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দেওয়া হয়।

কিন্তু বর্তমান সেক্রেটারির এ ধরনের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে কেন্দ্রীয় দফতর সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় এবার তাকে সেক্রেটারি করা হয়েছে।

শিবিরের অন্যান্য পদগুলোতেও কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। নিজেদের গতিশীল সংগঠন দাবি করলেও সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্বের অনেকেই এখন পদ আকড়ে ধরে রাখতে তৎপর।

এমনকি বর্তমান প্রচার সম্পাদক টানা চার বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন, যা সংগঠনের ইতিহাসে বিরল ঘটনা বলে মনে করে তৃণমূল নেতারা।
অর্থ, আর্ন্তজাতিক, ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক সহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দুই-তিন বছর ধরে জট ভাঙ্গছে না।

এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং বাংলানিউজকে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন শিবিরের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা। তবে সংগঠনের শৃঙ্খলার স্বার্থে তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের এক নেতা বর্তমান সেক্রেটারি আতিকুর রহমানের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী একটি সংগঠনে যখন আতিকুর রহমান সেক্রেটারি হয়, তখন ইচ্ছে হয় সংগঠন ছেড়ে দেই।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শিবির সভাপতি বা কার্যকরী পরিষদ ইচ্ছা করলেই যোগ্য একজনকে সেক্রেটারি বানাতে পারে না। কারণ, সেখানে জামায়াতের সিদ্ধান্তই বড়।

শিবিরের উপর জামায়াতের এই কর্তৃত্বে কারণেই ২০১০ সালে একবার বড় ধরনের ভাঙ্গন দেখা দেয় সংগঠনটিতে।

কমিটি গঠনের ব্যাপারে জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি আলী আহসান মুজাহিদের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে শিবিরের তখনকার সেক্রেটারিসহ কার্যকরী পরিষদের অধিকাংশ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন।

এমনকি ওই গণপদত্যাগের কারণে শিবির আজও গুছিয়ে উঠতে পারেনি বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় আরেকজন নেতা।

শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, আবদুল জব্বার সভাপতি হওয়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ, সাহিত্য সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত (বর্তমানে কারাগারে), প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহহিয়া সেক্রেটারিকে করা হবে এমন ধারণা ছিল নেতা-কর্মীদের মাঝে। কিন্তু জামায়াতের কর্তৃত্ব ও গ্রুপিংয়ের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আতিকুর রহমানকে মেনে না নেওয়ার অন্যতম কারণ তার শিক্ষাগত যোগ্যতার তুলনামূলক দুর্বল পোর্টফোলিও।

শিবিরের বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, আজ পর্যন্ত তিনি অর্নাস শেষ করেননি। মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাশ করার পর ঢাকা আলিয়া মাদ্রসা থেকে কামিলের পাশাপাশি একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। একাডেমিকভাবে এত অযোগ্য এ রকম একজনকে আর কখনও শিবিরের সেক্রেটারি করা হয়নি বলেও দাবি শিবির নেতাদের।

গত ২৭ জানুয়ারি সারা দেশে সদস্যদের ভোটে আবদুল জব্বারকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শিবিরের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যকরী পরিষদের পরামর্শক্রমে সভাপতি সেক্রেটারি নির্বাচিত করে থাকেন। সেই মোতাবেক তিনি দফতরের দায়িত্বে থাকা আতিকুর রহমানকে সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচিত করেন।

শিবিরের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, আতিকুর রহমান ১৯৯৮ সালে খিলবাইছা রাহমানিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা থেকে দাখিল, টঙ্গীর তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে ২০০০ সালে আলিম এবং একই মাদরাসা থেকে ফাজিল পাশ করেন।

এরপর উত্তর বাড্ডা কামিল মাদরাসা ও সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়া থেকে কামিল পাশ করেন। তবে সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ইসলামিক স্ট্যাডিজ থেকে বিএ করার কথা লেখা থাকলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি মূলত ডিগ্রি পাশ।

শিবিরের ওয়েবসাইটে সাবেক সেক্রেটারিদের শিক্ষাগত যোগ্যতায় দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশই কোন না কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস। এমনকি অনেকেই এমফিল কিংবা পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

কিন্তু এবারের সেক্রেটারির শিক্ষাগত যোগ্যতায় সেই ধারাবাহিকতার ব্যত্যয় ঘটলো বলে দাবি করেছেন ক্ষুব্ধ নেতারা।

আতিকুরের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, গত বছর দু’বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করেছিলো। শিবিরের নেতারা জানান, ‘মোটাবুদ্ধি’ হিসেবে পরিচিত এই নেতা অসতর্ক অবস্থায় এমনভাবে গ্রেফতার হয়েছেন যে শিবিরের একজন কর্মীও সেভাবে গ্রেফতার হয় না।

এছাড়া কেন্দ্রীয় দফতরসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালন করার সময় তার বিরুদ্ধে নানা অযোগ্যতারও অভিযোগ উঠে।

গত বছর ২৯ জানুয়ারি দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার সময় আতিকুর রহমান ও সমাজসেবা সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান আশুসহ তিন নেতাকে ধানমণ্ডির একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

জামিনে বের হওয়ার পর ৩০ মে বনশ্রী এলাকা থেকে শিবিরের সাবেক সভাপতি ফখরুদ্দিন মানিক ও আরও ছয়জন সহ আবারও আটক হন আতিক।

এ সব ব্যাপারে কথা বলার জন্য ছাত্রশিবিরের কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও প্রচার সম্পাদককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কার্যকরী পরিষদের অপর দুইজন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

সূত্র: বাংলানিউজ২৪




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025