বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৮

জিল্লুরের প্রয়াণ এবং দেশের পরবর্তী সঙ্কট

জিল্লুরের প্রয়াণ এবং দেশের পরবর্তী সঙ্কট

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সিরাজুর  রহমান:  বাংলাদেশের মানুষ যথাযোগ্য মর্যাদা আর আন্তরিক ভালোবাসা দিয়ে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে শেষ বিদায় দিয়েছে। তার দীর্ঘ কর্মজীবন কেটেছে আওয়ামী লীগে, আওয়ামী লীগ সরকার তাকে রাষ্ট্রপতি করেছিল। তার প্রয়াণে এ দলের নেতা-কর্মীদের শোকসন্তপ্ত হওয়া অবশ্যই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সরকারের বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে আন্তরিক শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির এবং ১৮ দলীয় জোটের নেতা বেগম খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, বঙ্গভবনে গিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতির লাশ দেখেছেন, তার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। বিএনপি যথাযথ মর্যাদায় শোক পালন করেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোয় আহূত হরতাল তারা বাতিল করেছে। খালেদা জিয়া তার বগুড়া সফর এবং সেখানে তার জনসভা একদিন করে পিছিয়ে দিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলগুলোও জাতীয় শোকের তিন দিন রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত রেখেছে। মরহুম জিল্লুর রহমানের জানাজায় বিশাল জনসমুদ্রের উপস্থিতি তার প্রতি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরও ভালোবাসার পরিচয় বহন করে।

এ ব্যাপারগুলোয় বাংলাদেশের এবং এ দেশের মানুষের প্রকৃত পরিচয়ের কিছুটা যেন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল। ছোটবেলা কলকাতায় একটা রাজনীতি সচেতন পরিবেশে বড় হয়েছি। প্রায় নেশাগ্রস্ত পত্রিকা পাঠক ছিলাম। বিশেষ করে দৈনিক আজাদের হিং ও হালিম কলামে হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী রাজনীতিকদের নিয়ে বহু কৌতুককর আলোচনা করতেন। খুব উপভোগ করে পড়তাম সেগুলো। দেশ ভাগের পর ছাত্রাবস্থাতেই সাংবাদিকতা শুরু করেছি। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব প্রথম সারির নেতার কাছে আমাদের প্রায় অবাধ যাতায়াত ছিল।

এখন প্রায়ই মনে পড়ে রাজনীতি তখন কত সুসভ্য ছিল। আইনসভায়, এমনকি ময়দানের জনসভায় নেতারা পরস্পরের সমালোচনায় ত্রুটি রাখতেন না। কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে তারা একে অন্যকে শ্রদ্ধা করতেন, মজলিসে-জিয়াফতে একে অন্যের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করতে তারা কখনও দ্বিধা করতেন না। কত তফাত্ আজকের রাজনীতির সঙ্গে সেদিনের রাজনীতির! শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, খওয়াজা নাজিমুদ্দিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এমনকি মওলানা ভাসানীও ব্যক্তিগত পর্যায়ে খুবই বর্ণাঢ্য ছিলেন। তেমন বর্ণাঢ্যতা এখনও বিদেশি রাজনীতিতে লক্ষ্য করি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে রঙ্গ-রসিকতা, বর্ণাঢ্যতা, পারস্পরিক সৌজন্যবোধ ইত্যাদি বিলুপ্ত হয়েছে। আমার জন্য সেটা বিরাট একটা শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।

মরহুম জিল্লুর রহমানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল না। পেশাগত কারণে বার-তিনেক দেখা করেছিলাম। তার সম্পর্কে আমার ধারণা বেগম খালেদা জিয়া খুব সুন্দর করে বলে দিয়েছেন। জিল্লুর রহমানের রাজনীতি কখনও হিংস্র কিংবা উগ্র ছিল না। রাষ্ট্রপতি হিসেবে কিছু বিতর্কিত কাজ তিনি করেছেন, বিশেষ করে প্রায় দু’ডজন প্রমাণিত ও প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত খুনিকে মুক্তি দিয়ে। কিন্তু সবাই বোঝেন যে সেটা তাকে করতে হয়েছিল একটা হত্যা-বান্ধব সরকারের নির্দেশে। তিনি ছিলেন মৃদুভাষী এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনিও এখন বিগত হলেন। আমাদের রাজনীতি থেকে ভালো-মানসি কি চিরতরে লোপ পাবে? বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতি সম্পর্কে কারোই কোনো মোহ নেই আশা করি। শাহবাগে যাদের নিয়ে সমাবেশ ও মঞ্চ তৈরি হয়েছিল এবং যাদের নিয়ে প্রজন্ম প্রজন্ম স্লোগানে সরকারের ও শাসক দলের মুখে ফেনা উঠছে, তারা যদি ভবিষ্যত্ প্রজন্মের চেহারা হয় তাহলে এ দেশকে নিয়ে আশা করার কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।

এরা যদি নতুন প্রজন্ম হয়…

দেড় মাস ধরে শাহবাগের মোড় বন্ধ রেখে রাজধানীর পরিবহনে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষকে দিনের পর দিন খাবার, বোতলের পানি ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়েছে, বিরাট এক পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে দিনরাত ঘিরে রেখে তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে। সরকার দেখাতে চেয়েছে যে এই লোকগুলো বাংলাদেশের তারুণ্যের প্রতীক এবং সরকার তাদের দাবি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিচ্ছে এবং রাষ্ট্রীয় নীতি পরিচালিত হচ্ছে তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত দেশবাসীর মতামতের প্রতিফলন করে। কিন্তু গোড়ার কয়েকদিনের আবেগের উচ্ছ্বাস কেটে যেতেই এদের পরিচয় নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে। প্রমাণ হয়েছে এরা আসলে কিছু বিদেশি চর, কিছু আওয়ামী লীগের ক্যাডার, কিছু শাহরিয়ার কবিরের ঘাদানিক আর কিছু ধর্মদ্রোহী এবং পর্নোগ্রাফির বেপারি বাউণ্ডুলে ছাড়া আর কিছু নয়। সাড়ে ১৬ কোটির দেশে কয়েক হাজার সন্দেহজনক প্রকৃতির লোককে জনমতের প্রতিভূ হিসেবে দেখাতে গিয়ে সরকার জাতিকে অপমান করেছে।

কিন্তু এদের দৃষ্টান্ত কিছু কিশোর-তরুণকে বিপথগামী করতে পারে। একটি জাতি সুসভ্য জাতি হিসেবে বিশ্ব সমাজে স্বীকৃতি পাবে কিনা সেটা অনেকখানি নির্ভর করে নেতা-নেত্রীদের আচার-আচরণের ওপর। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক জীবনের প্রায় পুরোটাই অশ্লীল এবং অশ্রাব্য গালাগাল করেছেন। যেসব শিশু-কিশোর পত্রিকা পড়ে কিংবা টেলিভিশন দেখে, তাদের শব্দ ও ভাষাজ্ঞান এসব অশ্লীলতা দ্বারা কলুষিত না হয়েই পারে না। এরা ভব্যতা-সভ্যতা এবং সৌজন্যবোধ শিখবে কার কাছ থেকে? ভবিষ্যতে এরাই হবে নেতা-নেত্রী এবং রাষ্ট্র পরিচালক। আজ যে অসভ্যতার বীজ তাদের মধ্যে বপন করা হচ্ছে, সেগুলো ভবিষ্যতেও জাতিকে তাড়িয়ে বেড়াবে। একাত্তরে বহু হাজার প্রাণ বিসর্জন করে এ চেতনাই কি আমরা লাভ করেছি?

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বঙ্গভবনে গিয়ে মরহুম রাষ্ট্রপতিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি যথার্থই কর্মরত রাষ্ট্রপতির অসুস্থতা ও মৃত্যুর ব্যাপারে সরকারের অব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। সরকারের একজন মন্ত্রীও জিল্লুর রহমানকে দেখতে সিঙ্গাপুরে যাননি। তাতে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল যে তার অসুস্থতা হয়তো তেমন গুরুতর নয়। রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর ঘোষণাও আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হয়নি। সে কারণে প্রধান বিচারপতি শ্রদ্ধা জানাতে সময়মত বঙ্গভবনে যেতে পারেননি।

আওয়ামী লীগের অনেক শিক্ষণীয় আছে একথা না বলে পারা যায় না যে জাতীয় নেতাদের মৃত্যু এবং তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের ব্যাপারে বর্তমানের শাসক দল আওয়ামী লীগ বিএনপির কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। বস্তুত বর্তমান সরকার ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এক বৃক্ষের অরণ্যে বিশ্বাস করেন। এ অরণ্যে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো সুউচ্চ মহীরুহ টিকে থাকতে দেয়া হবে না, নতুন কোনো মহীরুহ সেখানে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।

বাংলাদেশের ইতিহাস আর বাংলাদেশের সাহিত্য থেকে অতীতের নেতা-নেত্রী ও মহামানবদের নাম-নিশানা মুছে ফেলা হচ্ছে। এখন যারা স্কুলে যাচ্ছে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং আতাউর রহমান খান প্রমুখ মহান নেতার কথা তারা কখনও জানতে পারবে? এবং মনে রাখতে হবে যে শেখ মুজিবের রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল এদের অধীনে। আমার মনে আছে প্রধানমন্ত্রী হয়ে খালেদা জিয়া জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলেন। অন্যদিকে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রিত্ব পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেখ হাসিনা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে যাওয়ার সেতুটি রাতের আঁধারে সরিয়ে নিয়েছিলেন, যাতে কেউ সে মাজারে যেতে না পারে। কদর্য ভাষায় ছাড়া স্বাধীনতার ঘোষক এবং গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামও তিনি উচ্চারণ করতে পারেন না। বলা হয়ে থাকে যে, মৃতদের শত্রু নেই। কিন্তু সে কথা হয়তো কেউ শেখ হাসিনাকে শেখায়নি।

বর্ণচোরা সামরিক সরকারের অধীনে ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার পর খালেদা জিয়া প্রতিবাদ করেছিলেন; তার কারামুক্তির পর বিবৃতি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করেছিলেন। সে সময় খালেদা জিয়াও বন্দী হয়েছিলেন, চিকিত্সার নামে দেশ-বিদেশ ভ্রমণেও যাননি তিনি। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্ণচোরা সামরিক সরকারের নির্যাতনের কোনো প্রতিবাদ কিংবা দুটো সমবেদনার কথা উচ্চারিত হয়নি শেখ হাসিনার মুখে। বাংলাদেশের এযাবত্ সবচেয়ে সফল অর্থমন্ত্রী ছিলেন সাইফুর রহমান। সড়ক দুর্ঘটনায় তার মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও শেখ হাসিনা কোনো বিবৃতি দিয়েছিলেন বলে মনে করতে পারছি না। বাংলাদেশের মানুষ সভ্যতা-ভব্যতা আর মার্জিত রুচির শূন্যতার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বলে মনে হয়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির কদর্যতা আর সহিংসতা থেকে মরহুম জিল্লুর রহমান মুক্তি পেয়েছেন। সে হিসেবে তাকে ভাগ্যবান বলতেই হবে। কিন্তু এ রাজনীতির ওপর বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যত্ নির্ভর করছে, সে রাজনীতি তাদের করে যেতেই হবে। প্রশ্ন উঠেছে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন। যিনিই মনোনীত হোন পরবর্তী পাঁচ বছর রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।

সেনাবাহিনী কি হস্তক্ষেপ করবে?

মিডিয়ায় বিভিন্ন নাম নিয়ে জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। কেউ কেউ এমন ইঙ্গিতও করছেন যে পরবর্তী সরকারকে সাংবিধানিক সঙ্কটে ফেলে যাওয়ার বিশেষ লক্ষ্যেও নতুন রাষ্ট্রপতি মনোনীত হতে পারেন। ছোটবেলায় এক কুচক্রী বুড়োর গল্প শুনেছিলাম। মৃত্যুর আগে সে ছেলেদের বলে গিয়েছিল তার লাশের গলায় দড়ি দিয়ে যেন চৌরাস্তার বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে দেয়া হয়, যাতে পুলিশ তার শত্রুদের হয়রানি করে। আমি আন্তরিক আশা করছি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সে রকমটা হবে না।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতি আবারও গরম হয়ে উঠেছে। বর্তমান সঙ্কটের মূল বিষয় হচ্ছে যথাসময়ে একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সঙ্গত কারণেই বিএনপি কিংবা অন্য কোনো সরকার-বিরোধী দলের গ্রহণযোগ্য নয়। তারা চায় একটা নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হোক। বোধগম্য কারণেই সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা কিছুতেই তাতে রাজি হচ্ছেন না। এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে যৌথভাবে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির দাবিতে আন্দোলন করে। তারা হরতাল করে দেশ অচল করে দিয়েছিল, বেশকিছু মানুষকে খুন করেছে তারা, পরিবহন অচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভণ্ডুল করে দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গোঁ ধরে বসে থাকেননি। তিনি সংসদের সংক্ষিপ্ত অধিবেশন ডেকে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু করেন এবং ৩০ দিনের মধ্যেই সাধারণ নির্বাচন ডাকেন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং জামায়াত সংসদ সদস্যদের সমর্থনে সরকার গঠন করে।

তুলনাটা এখানেও বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ। জাতির স্বার্থের কথা বিবেচনা করে খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে যে রাষ্ট্রনীতি জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছিলেন, ২০১৩ সালে এসেও শেখ হাসিনা ততটা দূরদৃষ্টির পরিচয় দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ভেতরে ভেতরে খবর পাওয়া যাচ্ছে মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদেরও কেউ কেউ এখন বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার পরামর্শ দিচ্ছেন, কিন্তু হাসিনা সেসব পরামর্শ শুনতেই নারাজ। মনে হচ্ছে তিনি সত্যি সত্যি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছেন। সব বাতি নিভিয়ে এবং সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি তার একগুঁয়েমি ছাড়তে রাজি নন।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ এবং প্রবাসী বাংলাদেশীরা শঙ্কা এবং গুজবের শিকারে পরিণত হয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন সেনাবাহিনী যে কোনো মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সমধর্মী, দেশের সব অংশের সাধারণ মানুষের সন্তান তারা। সেনাসদস্যরা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, দেশের নাড়ি এবং তাদের নাড়ি এক সূত্রে গাঁথা। দেশ যদি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ায় তখন সেনাবাহিনী অবশ্যই হস্তক্ষেপ করার তাড়না বোধ করবে।

কিন্তু অতীতের তিক্ত-অভিজ্ঞতা থেকেও আমরা দেখেছি সেনাশাসন দীর্ঘমেয়াদে কোনো দেশেই কল্যাণকর হয়নি। সেনাশাসনের একটা বৈশিষ্ট্য এই যে গণতন্ত্রের শেকড় উপড়ে না ফেলে সেনাশাসন শেকড় গাড়তে পারে না এবং একবার উপড়ে ফেলা হলে গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণ নতুন করে বীজ বপন থেকে শুরু করতে হবে। অতীতের সেনাশাসন, বাকশালী সংবিধান ইত্যাদি নানা এক্সপেরিমেন্টের কারণেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখনও গেড়ে বসতে পারেনি এবং বর্তমানের মতো সঙ্কট বার বার করে দেখা দিচ্ছে।

serajurrahman34@gmail.com

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024