শীর্ষবিন্দু নিউজ: খুব শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল। আগামী মার্চ অথবা এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য এই কাউন্সিল দলটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে পরিবর্তনও আসতে পারে। জাপা থেকে পদত্যাগী নেতা গোলাম মসিহ অথবা বিএনপি ভেঙে গঠিত একটি দলের মহাসচিবকে এই পদে বসানো হতে পারে বলে জাতীয় পার্টি সূত্র জানিয়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে বর্তমান মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের ওপর সন্তুষ্ট হতে পারছেন না দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বিশেষ করে মহসচিবের স্ত্রী রতনা আমিন হাওলাদারের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ এবং মহাসচিবের মনোনয়ন প্রত্যাহার না করার বিষয়টি গোপন আতাত হিসেবে দেখছেন এরশাদ।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে যেদিন র্যাব তুলে নিয়ে যায়, মহাসচিবের সেদিনের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন দলের নেতাকর্মীরা। এরশাদকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলন করে মহাসচিব বলেছিলেন, এরশাদ অসুস্থ তাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরের দিনও একই কথা বলে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছিলেন তিনি।
দলীয় সূত্র বলছে, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে বেরিয়েই মহাসচিবকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন এরশাদ। ওই পদে বসাতে চেয়েছিলেন নব্বইয়ে এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে কারা নির্যাতিত নেতা প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খানকে। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন খান শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ওই পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাকে অতিরিক্ত মহাসচিব করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও সায় দেননি দেলোয়ার হোসেন। যে কারণে ওই সময়ে মহাসচিব পদে রদবদল প্রক্রিয়া ঝুলে যায়।
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি শারীরিক অসুস্থতার কারণে পার্টির চেয়ারম্যানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। আর বর্তমান মহাসচিব যেভাবে দলের জন্য সময় দেন আমার পক্ষে সেভাবে সময় দেওয়া স্বাস্থ্যগত কারণে সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। নির্বাচন কমিশনের আইনি জটিলতা এড়াতে আবেদন করে ছয় মাসের সময় নেওয়া হয়। কিন্তু সে সময়ও অনেক আগেই পার হয়ে গেছে।
জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক সুলতাম মাহমুদ জানান, বর্তমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। সে কারণে নির্বাচন কমিশন থেকে সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা কমিটিগুলোর কাউন্সিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা কমিটি গঠন শেষ হলেই মার্চ অথবা এপ্রিলে কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিল করা হবে।
ক্ষমতার মসনদে থেকে জাতীয় পার্টি গঠন করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। অনেকে আসা যাওয়া করলেও দীর্ঘ ১২ বছর ধরে মহাসচিব পদে রয়েছেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। এবারও মহাসচিব পদের জন্য লড়ছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, কাউন্সিলররা যদি নির্বাচিত করেন তাহলে আমার আপত্তি নেই। মহাসচিব পদে রদবদল হবে কি না- সেটাও নির্ধারণ করবে কাউন্সিলররা।
জাপা মহাসচিব বলেন, মার্চ অথবা এপ্রিলে কাউন্সিল করার পরিকল্পনা রয়েছে। সে মোতাবেক কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমি পটুয়াখালীতে আছি। শুক্রবার বরিশাল সফর করেছি। আর পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুর সফরে রয়েছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটিগুলোর গঠন করা হচ্ছে।
বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদের দলে ভিড়েছেন। কাজী জাফর ছাড়া অন্যদের কারোরই বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারেনি জাপা। কারা কাজী জাফরের সঙ্গে গেছেন এ বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি দলটির দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ। তিনি জানান, বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। অনেকেই আবার ফিরে আসতে চাইছে। আমার মনে হয় কাজী জাফর আহমদও ফিরে আসবেন। তাই অন্যদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অবস্থা নাজুক। বেশ কয়েকজন গেছেন কাজী জাফর আহমদ’র সঙ্গে। আবার দলে থাকলেও মাত্র ৫-৭ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। অন্যরা সবাই রওশন এরশাদের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধেছেন। যোগাযোগ থাকল দূরের কথা ডেকেও সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না এরশাদ। ১২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতাদের ডেকেছিলেন এরশাদ।
কিন্তু তাতেও সাড়া দেননি কেন্দ্রীয় নেতারা। রওশন এরশাদসহ ৩০ জন এমপি ছিলেন অনুপস্থিত। আর ৪১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে উপস্থিত হয়েছিলেন মাত্র সাত জন। আর ৭৪ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে থেকে এসেছিলেন মাত্র ২২ জেলার নেতারা।