মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪১

কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ

কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ

 

 

 

 

 

 

 

 

ইনাম আহমদ চৌধুরী: সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ইন্তেকালে দলমত-নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণ এবং বিদেশেও বাংলাদেশের শুভার্থীরা গভীরভাবে শোকাহত। ট্র্যাজেডির এই ক্ষণে বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার শোকসঞ্জাত শ্রদ্ধাপ্লুত প্রতিক্রিয়া, সুবিবেচিত সিদ্ধান্ত এবং ভদ্রসম্মত আচরণ শুধু দেশবাসীর মধ্যেই নয়, বিদেশেও সপ্রশংস অনুভূতির সৃষ্টি করেছে।

মিডিয়াতে শোকবার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি সংবাদ-প্রাপ্তির অপেক্ষা না করেই তিনি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন, শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আন্তরিক সমমর্মিতায় করেন সহানুভূতিজ্ঞাপন। রাষ্ট্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী তিন দিন শোককাল পালন করতে তিনি বিরোধী দলকে নির্দেশ দেন, বিএনপি আহূত হরতাল এবং অন্যান্য বিক্ষোভ সমাবেশের আহ্বান প্রত্যাহার করেন, নিজে কালো ব্যাজ পরিধান করে অন্যদের তা পরতে নির্দেশ দেন। এমনকি নিজের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সফরের কর্মসূচিও স্থগিত করেন। নিঃসন্দেহে বর্তমান দেশীয় সংস্কৃতির মানদণ্ডে ওই সব ব্যতিক্রমী, তবে অবশ্যই কাম্য। এ-জাতীয় মাঙ্গলিক ও সহূদয় উদ্যোগ অবশ্যই সমমর্মিতা, সদিচ্ছা ও সহনশীলতার সুবাতাসের আবহ সৃষ্টি করে; এমনকি বাংলাদেশের মতো সাংঘর্ষিক রাজনীতির দেশেও। তাঁর বঙ্গভবনে উপস্থিতির সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সেখানে ছিলেন। খালেদা জিয়ার এই বঙ্গভবন গমন কার্যত সরকার এবং আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতির প্রকাশ হিসেবেও অতিরিক্তভাবে নেওয়া যায়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রধান, কিংবা তাঁর তরফ থেকে উদ্যোগ নিয়ে অন্য কেউ খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে কিছুক্ষণের জন্যও ধন্যবাদজ্ঞাপন ও সামাজিক কুশল বিনিময়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন। স্বাভাবিকভাবেই তা হয়তো অনায়াসেই করা যেত এবং তা সংগত হতো।

পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশেই সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কতগুলো অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রে মতৈক্য থেকে থাকে এবং তা অভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় স্বার্থে। সেগুলো হচ্ছে (১) সাধারণ নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া। (২) গণতান্ত্রিক সুশাসনের জন্য দক্ষ এবং অরাজনৈতিক প্রশাসনিক, সামরিক-অসামরিক ও বিচারিক কাঠামো। উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা তা পেয়েছিলাম এবং তা ছিল বহু দেশের, এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে উন্নত মানের বলে পরিগণিত হতো। বর্তমানে নির্বিচার দলীয়করণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়নের জন্য তা দুর্বল ও অফলপ্রসূ হয়ে দাঁড়িয়েছে। (৩) সীমান্ত ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা। বর্তমানে আমাদের সীমান্তকে প্রায় অরক্ষিতই মনে হয়। অহর্নিশ ভারতীয় সীমান্ত সেনারা নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করছে। নিহত ও নির্যাতিত ব্যক্তিদের অধিকাংশই কৃষক, জেলে, শিশু। ফেলানীর মতো কিশোরীকে নির্যাতিত করে অর্ধনগ্ন অবস্থায় সীমান্তের তারকাঁটায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। দুর্ভাগ্যবশত বর্তমান সরকার এসব ব্যাপারে বাংলাদেশের স্বার্থে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না।

সম্প্রতি প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়, ‘সীমান্তে শিশুহত্যা বন্ধে সরকারের প্রতি কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে শিশুরা।’ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক বহু শিশু অপহরণও হয়েছে। রাজধানীর এলজিইডি ভবনে ১৬ মার্চ চাইল্ড পার্লামেন্টের ১১তম অধিবেশনে সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরের শিশু শামস শাহরিয়ার অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিকে উদ্দেশ করে বলে, ‘কোনটি সীমান্ত আর কোনটি নো-ম্যানস-ল্যান্ড, শিশুরা সেটা সব সময় বুঝে উঠতে পারে না। দেখা গেছে, শিশুরা সাঁতার কাটতে কাটতে বা খেলতে খেলতে নো-ম্যানস-ল্যান্ডে চলে গেছে। প্রায়ই এসব শিশুর ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। সরকার কি শিশু রক্ষার ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেবে না?’ এসব ক্ষেত্রে আলোচনা করে সর্বদলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যকর হতে পারত। সম্প্রতি দুজন ইতালীয় নৌসেনা কর্তৃক সাগরে দুজন ভারতীয় জেলেকে হত্যা করার জন্য ভারতের সরকার ও বিচারালয় ইতালীয় রাষ্ট্রদূতকে ভারতের বাইরে না যেতে দিয়ে কী তুলকালাম কাণ্ড করে বিচারের জন্য ওই দুই নৌসেনাকে ফিরিয়ে নিয়ে এল। এটাই হচ্ছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা। আমাদের সরকার, বিশেষ করে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (৪) সাম্প্রদায়িকতা পরিহার ও ধর্মান্ধতা দূরীকরণ। এটা অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা এবং এ ব্যাপারে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত নীতি ও প্রচেষ্টাই শুধু যথার্থভাবে কার্যকর হতে পারে। (৫) সন্ত্রাস দমন (৬) পররাষ্ট্রনীতি, মানবতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার (৭) বিনিয়োগব্যবস্থা। সর্বদলীয় অনুকূল বিনিয়োগব্যবস্থা থাকলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী আস্থা ও নিরাপত্তা বোধ জাগ্রত হবে। উন্নয়নকর্মী অর্থনীতির জন্য তা অতীব আকাঙ্ক্ষিত। জাতির কাছে আজ অবশ্য সবচেয়ে প্রধান এবং উদ্বেগজনক হয়ে যা দাঁড়িয়েছে তা হচ্ছে, সাধারণ নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া স্থির করা। এ বিষয়ে দ্বিমত নেই যে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার না হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না, কেন না বিএনপি এবং এর সহযোগী অন্য রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যোগ দেবে না এবং এ নির্বাচনই মেনে নেবে না। তাই একটি মাত্র বিষয়ে এখন চূড়ান্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে আর সেটি হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো স্থির করা।

আমাদের দেশে তো জনসমর্থিত আন্দোলন-সৃষ্ট, সুবিবেচিত এবং পরীক্ষিত একটি ব্যবস্থা স্থিরীকৃত ছিল। সামান্য অদল-বদল করেই তো তা চালু রাখা যেত। আচমকা সেটা বন্ধ করে দিয়েই তো সব বিপত্তির সৃষ্টি এবং এই রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা ও সংকট। পাকিস্তানের মতো একটি অশান্ত দেশেও তারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন কেয়ারটেকার সরকার চালু করে দিতে পেরেছে। ১৬ মার্চ পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্দিষ্ট এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা একটি স্বীকৃত সময়সীমা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেছে। পদ্ধতি অনুযায়ী বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা নির্দিষ্ট দুই দিন আলোচনা করে কোনো নাম স্থির করতে পারেননি। দ্বিতীয় স্তরে উভয় পক্ষের (৪+৪) আট সদস্যের একটি সংসদীয় কমিটি দুটো করে অর্থাৎ মোট চারটি নাম বিবেচনার জন্য উত্থাপন করে। সেখানেও চূড়ান্তকরণের জন্য নির্ধারিত দুই দিনের আলোচনা ব্যর্থ হলে দুই দলের প্রস্তাবিত চারটি নামই পাঠিয়ে দেওয়া হলো নির্বাচন কমিশনে, যা একটি সব দলের আস্থাভাজন শক্তিধর কমিশন। প্রস্তাবিত ব্যক্তিরা ছিলেন (১) সাবেক সিএমপি ইমরাত হোসেইন ২. বিচারপতি (অব.) নাসির আসলাম জাহিদ ৩. সিন্ধুর রাজনীতিবিদ রসুল বখস পালেজো এবং ৪. বেলুচিস্তানের (অব.) বিচারপতি মির হাজার খোসো। কমিশনের মধ্যে দুই দিনের আলোচনা শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে নির্বাচিত হলেন বিচারপতি মির হাজার খোসো। শপথ গ্রহণের পরপরই তিনি আগামী ১১ মে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার ও আনুষঙ্গিক সব ব্যবস্থা গ্রহণের সূচনা করেছেন।

নেপাল গ্রহণ করেছে বাংলাদেশের প্রথম নির্দলীয় সরকার (১৯৯১) গঠনের পদ্ধতি। ১৪ মার্চের ঘোষণা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি খিলরাজ রেগমিকে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দলীয় সরকারপ্রধান করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কেয়ারটেকার সরকার গঠন করেছে, যা তিন মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে। তারপর বাংলাদেশের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের মতো তিনিও তাঁর স্থায়ী প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পুনরায় গ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশে এ ধরনের বহু পদ্ধতি নিয়ে বহু আলোচনা আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এবার নির্দলীয় সরকার গঠনের ব্যাপারেও সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নির্ধারণ করা দুষ্কর হবে না। ১৯৯৫ সালে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় যেসব প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল, সেগুলোও বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকার বর্তমানে কিন্তু একটি বিরাট সুযোগ পেয়েছে, যার মধ্য দিয়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পাকাপোক্ত করার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

এবার নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আগামী সরকারের শেষ বছর পর্যন্ত (অভিশংসিত না হলে বা পদত্যাগ না করলে) থাকার কথা। অর্থাৎ তাঁকে আগামী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ অনুকূল পরিবেশে তাঁর কর্ম সম্পাদন অভিপ্রেত ও মঙ্গলজনক হবে। এ অবস্থায় সরকার শুধু দলীয় বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন না করে একজন অবিতর্কিত গ্রহণযোগ্য সম্মানিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলের সঙ্গে সংসদে আলোচনা করে নির্বাচন চূড়ান্ত করে তাঁকে নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা যেতে পারে। যেহেতু নতুন রাষ্ট্রপতিকে চার বছরাধিককাল কাজ করতে হবে, তিনি নিশ্চয়ই একটি সুন্দর সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাসীন দেখতে চাইবেন। এ ধরনের সুবিবেচিত পদক্ষেপ শুধু যে সরকারি দলের সদিচ্ছার পরিচায়ক হবে তা নয়, দেশে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, যার সুফল হবে সুদূরপ্রসারী।

একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে আওয়ামী লীগের সম্মতি (যা অতীতে আওয়ামী লীগের দাবি ছিল) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসার দ্বার উন্মুক্ত হবে। এতৎসঙ্গে যদি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলা-হয়রানি বন্ধ এবং বন্দীদের মুক্তি প্রদান করা হয় এবং শান্তিপূর্ণ সভা-মিছিলের সুযোগ থাকে তাহলে দেশে সন্ত্রাসমুক্ত শান্তি প্রতিষ্ঠা অবধারিত।

সরকারের মনে রাখতে হবে, বর্তমানে যেসব কুকাণ্ড ঘটছে—রাস্তাঘাটে মারামারি, কাটাকাটি, বোমাবাজি, শিক্ষাঙ্গনে ও সমাজজীবনে তীব্র সহিংসতা, সংখ্যালঘু নিপীড়ন, সরকারি বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির বিনষ্টকরণ, নাগরিকদের জান-মাল-জীবিকার ক্ষতিসাধন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা—সবই সরকারের ব্যর্থতা বলেই চিহ্নিত ও পরিগণিত হচ্ছে। কলকারখানায় উৎপাদন কম বা রপ্তানি হ্রাস হলে দায়ী তো সরকারই। এই অবস্থায় বাস্তবিকপক্ষে নাগরিকদের একটি স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান এবং নিরাপত্তা বিধান সরকারের প্রধানতম দায়িত্ব। তা পালনে যদি সরকার ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দায়দায়িত্ব তারই। আশা এবং বিশ্বাস, সরকার এই সার্বিক ব্যর্থতার গ্লানি কাঁধে নিয়ে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র রূপে পরিণত করতে নিশ্চয়ই চাইবে না। এই চ্যালেঞ্জকে সদিচ্ছাপূর্ণ মুক্ত মনে গ্রহণ করলেই কিন্তু মুশকিল আসান।

দুর্ভাগ্যবশত সে ধরনের আলামত কিন্তু এখনো দৃশ্যমান নয়। এটা অনস্বীকার্য যে বিরোধী দলেরও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সহিংস কর্মকাণ্ড, জাতীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন, শান্তিরক্ষা বাহিনীকে আক্রমণ, ভাঙচুর—এসব নিশ্চয়ই অভিপ্রেত বা সমর্থনযোগ্য নয়। তবে এখানে দুটো বিষয় দ্রষ্টব্য। বিরোধী দলকে এখন শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার বা দাবি জানানোর সব সুযোগ ও বাতায়ন মনে হয় সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। মিছিল-মিটিংয়ে হচ্ছে সহিংস, এমনকি পুলিশি আক্রমণ, বহুসংখ্যক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন—মামলা-হামলা-নির্যাতন বেড়েই চলেছে। দ্বিতীয়ত এই জ্বালাও-পোড়াও যে কারা করছে তা সব সময় নিশ্চিত নয়। যেমন আমার ব্যক্তিগত একমাত্র গাড়ি ৬ মার্চ বিকেলে জোনাকি সিনেমা হলের কাছে পার্কিং অবস্থায় ভেঙে দেওয়া হলো। পরে মালিকের পরিচয় জেনে তা আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হলো। তাই তো বলি, সন্ত্রাসের কোনো দল নেই।

সরকারের বোঝা উচিত যে বেপরোয়াভাবে কঠোর দমন ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নিয়ে একটি যৌক্তিক আন্দোলন (নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন) কিছুতেই থামানো যাবে না। রক্তচক্ষু দেখিয়ে বা ‘দেখামাত্র গুলির’ নির্দেশ দিয়ে কোনো সরকারই আগেও টিকতে পারেনি এখনো পারবে না। বিরোধী দলকে শুধু সংযত এবং দায়িত্বশীল আচরণ করে ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে গেলে বিজয় তাদের অনিবার্য। কেননা, জনগণ তাদের সঙ্গে থাকবে। নিষ্পেষণ ও নিপীড়ন সমস্যার সমাধান এনে দেয় না। তদুপরি চরম অশ্লীল ও অশালীন ভাষায়, বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বাক্যাঘাত করার যে অশুভ চেষ্টায় আওয়ামী নেতৃত্ব মেতে উঠেছে, এসব খুবই অশোভন ও লজ্জাজনক। সবাইকে কুরুচিপূর্ণ আচরণ এবং অভদ্রজনোচিত ভাষা ব্যবহার পরিহার করে সভ্য সমাজের এক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

সৌভাগ্যবশত আমরা দেখছি, জাতির বিবেক জাগ্রত হচ্ছে। বিচারালয় থেকে রুল জারি করা হয়েছে, কেন দুই নেত্রী আলোচনা করে এই সংকটময় মুহূর্তে জাতীয় সমস্যার সমাধান করছেন না। ‘আমজনতা’ নামীয় একটি সংগঠন দুই নেত্রীর কাছে রাজনৈতিক নির্বাচনী সমস্যার সংলাপনির্ভর সমাধানের দাবি জানিয়ে ৭০ ঘণ্টার অনশনের আহ্বান জানিয়েছে—এবং তাদের সাতজন নেতা ইতিমধ্যে (মার্চ ২৮) অনশন শুরু করেছেন। দেশের সুশীল সমাজ উদ্বিগ্ন। বিদেশেও শুভার্থীরা জানাচ্ছেন তাঁদের আশঙ্কার কথা। উভয় দলেরই সমস্যার সমাধানে সহযোগিতার প্রয়োজন। তবে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারি দলেরই। বিরোধী দলের তো একটাই দাবি। বর্তমান অবস্থায় সরকারি দল সম্ভবত নতুন রাষ্ট্রপতিকে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানিয়ে সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টার সূচনা করতে পারে।

লেখক: উপদেষ্টা, বিএনপির চেয়ারপারসন।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024