নিউজ ডেস্ক: এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম… বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা মনে করিয়ে দেয় পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার এক ঐতিহাসিক ক্ষণের কথা। চার দশক আগে আগুন ঝরা এই মার্চেই সূচিত হয়েছিল বাংলার স্বাধিকারের আন্দোলন, শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্ত হওয়ার আন্দোলন। এর নয় মাস পর অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর পরই মূলত এই আন্দোলন প্রাণ পায়। এবারের স্বাধীনতার মাস অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। কারণ একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কোনো যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। বিচার চলছে আরো কয়েকজনের।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হত্যাযজ্ঞে মেতে রঞ্জিত করে রাজপথ। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে এ অভিযানের শুরুতেই পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।
পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে চলে মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালিরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশকে স্বাধীন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকেন। গেরিলা যুদ্ধে একের পর এক পরাস্ত হয় পাকিস্তানি বাহিনী। বিপরীতে এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা, লুট আর জ্বালাও-পোড়াওয়ে মেতে ওঠে।
এদিকে, পাকিস্তানের কারাগারে থাকা অবস্থায় প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুণছিলেন বঙ্গবন্ধু। কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সেলের পাশে তাঁর জন্য কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতা, মুক্তির প্রশ্নে ফাঁসির আসামি হয়েও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অবিচল, আপোষহীন।
স্বাধীনতাকামী জনতা দীর্ঘ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল জেনারেল এ কে নিয়াজী সৈন্য-সামন্তসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আত্মসমর্পণ করেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতেও বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে ওঠে।
স্বাধীনতা পেলেও বাঙালি জাতির মনে ছিল না স্বস্তি। কারণ পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি জাতির জনক। চূড়ান্ত বিজয়ের পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরে পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
বাঙালি জাতির বিজয়ের ফলেই বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ফিরে আসেন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডন থেকে দিল্লী হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সৈন্যের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে চার দশক পরে আজও স্বাধীন বাংলাদেশে পরাজিত শক্তির আস্ফালন বিচলিত করে মুক্তিকামী মানুষকে।
২৫ মার্চের কালরাতকে স্মরণ করে ২৬ মার্চ পালিত হয় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস হিসেবে। এবারের এই দিন বেলা ১১টায় জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে তিন লাখ কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে গিনেজ বুক অব ওয়াল্ডে নাম লিখিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সামাজিক-অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সব অপশক্তিকে পরাজিত করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ- এটাই হোক স্বাধীনতার এই মাসের কামনা।