সন্তোষ শর্মা: দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, অতি সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সরকারের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের নামে ইতোপূর্বে দায়ের হওয়া মামলাগুলো পুনর্জীবিত ও সচল করার চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ব্রিটেন সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে ব্রিটিশ সরকার তার সেই আবেদন গ্রহণ করে এবং কিছুদিন আগে তা অনুমোদন করে।
সূত্র জানায়, চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার পর থেকেই তারেক রহমান সে দেশের বিশেষ মেডিকেল ভিসা সার্ভিসের অধীনে অবস্থান করছিলেন। গত মাস দুএক আগে তার ভিসার মেয়াদ আরও দুই বছরের জন্য নবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু দেশে সরকারের ‘তৎপরতা’ লক্ষ্য করে তার শুভাকাক্সক্ষীরা তাকে ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। আবেদনে তিনি দেশে ফিরলে বর্তমান সরকারের আমলে তার মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন বলে উল্লেখ করেন। এসময় তিনি তার বিরুদ্ধে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার তথ্য ছাড়াও বর্তমান সরকারের সময়ে দায়ের করা মামলার তথ্যাদি উত্থাপন করেন। এসব মামলাগুলো মিথ্যা ও সরকার দীর্ঘদিনেও কোনো মামলাই প্রমাণ করতে পারেনি বলেও তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন। কিন্তু এ সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে নতুন নতুন মামলা দিয়ে যাচ্ছে বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়। ব্রিটিশ সরকার তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সব তথ্য যাছাই-বাছাই শেষে তাকে সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নেয়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ব্রিটিশ সরকার তারেক রহমানকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে একদিকে সারা বিশ্বে প্রমাণ করেছে তিনি দেশে রাজনৈতিক সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। অপরদিকে বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে তারা সমর্থন করছে না তার প্রমাণ হয়েছে।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, তারেক রহমানের অবর্তমানে তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে দেশে ফিরে দলের হাল ধরার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়ে শিগগিরই কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে তারেক রহমান ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এখনও তিনি তার স্ত্রীকে দেশে ফেরার অনুমতি দেননি।
উল্লেখ্য, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেশে ১৪টি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলেও তার নামে মানি লন্ডারিং ও আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আসামি করে আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়। তাকে ২০০৭ সালে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে যৌথবাহিনী আটক করে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আটকাবস্থায় তারেক রহমানকে হত্যার উদ্দেশে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। অত্যাচার করে তার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়। তিনি ৩৭২ দিন কারাভোগ করে ২০০৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওইদিন রাতে লন্ডন যান। একই দিন তার সঙ্গে লন্ডন যান তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও একমাত্র সন্তান মেয়ে জাইমা রহমান। তবে তারেক রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রী ও কন্যা ব্রিটেনের রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন কি না বা পেয়েছেন কি না তা জানা যায়নি।
Leave a Reply