মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরামর্শক চূড়ান্ত

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরামর্শক চূড়ান্ত

শীর্ষবিন্দু নিউজ: বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরামর্শক (কনসালটেন্ট) নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দরপত্র আহবান করা হবে আগামী জুলাই মাসে। তবে আগামী বছরের মার্চে প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরু করার জোর প্রচেষ্টা চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে শুরু থেকে ৪৫ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আর ৪৮ মাসের মাথায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় শঙ্কর তাম্রকার।

তার মতে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে। আর দ্বিতীয় ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। বিজয় শঙ্কর তাম্রকার জানিয়েছেন, কনসালটেন্ট নিয়োগ পেতে আমেরিকান প্রতিষ্ঠান ব্লাক অ্যান্ড উইচ ও জার্মান প্রতিষ্ঠান ফিসনার তালিকাভূক্ত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ মনিটরিং করার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কমিটি প্রকল্পটির কাজের প্রত্যেক ধাপের জন্য টাইমলাইন তৈরি করেছে। ধাপগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামী সপ্তাহেই কনসালটেন্ট নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় শঙ্কর তাম্রকার। জানান, কনসালটেন্সি ফার্মকে ৯০ দিন সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে তাদেরকে প্রকল্পের ডিজাইন ও সিডিউল তৈরি করতে হবে। এরপর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। দরপত্রে চূড়ান্ত হলে ফাইন্যান্সিয়াল ক্লোজিংয়ের জন্য সময় পাবে ঠিকাদার।

আশা করা হচ্ছে, ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ আগামী মার্চে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। এতে ১.২ বিলিয়ন ডলার অর্থের প্রয়োজন পড়বে। প্রায় সমান তালে এগিয়ে চলছে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও। তবে দ্বিতীয় ইউনিটটি প্রথম ইউনিট থেকে ৬ মাস পিছিয়ে থাকছে বলেও জানিয়েছেন বিজয় শঙ্কর তাম্রকার। বিদ্যুতের দর কত হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে বিজয় শঙ্কর তাম্রকার জানান, দর এখনও চূড়ান্ত হয় নি। দরের বিষয়টি নির্ধারিত হবে উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, কোথা থেকে কত দামে কয়লা আনা হচ্ছে আর তার পরিবহন খরচ কত পড়ছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে। যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এখানে বিষয়টি স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্ধারণ করা হবে। প্রতি ইউনিটের মূল্য সর্বোচ্চ ৮ টাকা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন বিজয় শঙ্কর তাম্রকার। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া ও উত্তর কোরিয়া থেকে কয়লা আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে কয়লা পাওয়া যায় তাহলে উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে আসবে। তখন সেভাবেই দর নির্ধারণ করা হবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্যের দূয়ার খুলে দিবে উল্লেখ করে বিজয় শঙ্কর তাম্রকার বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে ওই এলাকার চিত্রই বদলে যাবে। তিনি বলেন, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ থেকে ১৮ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। আর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অনেক কম দামে বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। ভারত এখান থেকে বিদ্যুৎ নেবে না। সুন্দরবন নিয়ে বির্তকের জবাবে বলেন, এখানে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। আমরা পরিবেশের বিষয়টি খবুই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখেছি। তাই এ ধরনের আশঙ্কার কারণ নেই।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চারপাশে ৫০ মিটার গ্রিন বেল্ট থাকছে। পরিবেশের যাতে ক্ষতিসাধন না হয়, সেজন্য সবুজ বেস্টনির মধ্যে থাকবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বিজয় শঙ্কর তাম্রকার বলেন, কনসালটেন্ট নিয়োগের পাশাপাশি অন্যান্য কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। ৪৩২ একর জমি মাটি ভরাট শেষ হয়েছে। কমপ্যাক্ট করার কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মাটি যাতে সরে না যায় সেজন্য চারদিকে কংক্রিটের ব্লক বসানো হচ্ছে।

অভ্যন্তরিণ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৩৩ কেভি সাব-স্টেশন নির্মাণ, অভ্যন্তরিণ বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য ৩৩/১১ কে.ভি সাব-স্টেশন এবং ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান বিজয় শঙ্কর তাম্রকার। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন এ কেন্দ্রটি কয়লা দিয়ে পরিচালিত হবে। মালিকানা থাকবে ফিফটি-ফিফটি। এর জন্য বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ ও ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানির (এনটিপিসি) সমন্বয়ে বাংলাদেশ-ভারত ফেন্ডশিপ কোম্পানি গঠন করা হয়েছে।

প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলামকে চেয়ারম্যান ও এনটিপিসি মনোনীত বিজয় শঙ্কর তাম্রকারকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক করা হয়েছে। পরের মেয়াদে বাংলাদেশের এমডি ও ভারতের চেয়ারম্যান থাকবেন। বাগেরহাটের সাপামারি মৌজায় ১ হাজার ৮৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। গত বছরের ৬ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যম্যে নির্মাণ কাজের ফলক উন্মোচন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম সমালোচকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সমালোচনার কারণে আমরা আরও সচেতন হয়েছি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই সুন্দরবনের জন্য ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আর সরকার সুন্দরবনের ক্ষতি করে কিছু করবে না।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024