স্বদেশ জুড়ে ডেস্ক: ইসলাম ও মহানবী মুহাম্মদের (সা.) প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যকারীদের বিচার দাবিতে ঘোষিত হেফাজতে ইসলামের ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি ঠেকাতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।সরকারীভাবেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে যে কোন নাশকতা প্রতিহত করতে।
নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেপ্তারসহ ১৩ দফা দাবিতে শনিবারের লংমার্চ ও ঢাকা মহাসমাবেশে যোগ দিতে যাবার পথে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় গোল চত্বর ও সয়দাবাদ মোড়ে সকাল থেকে পুলিশ চেকিং করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের। এ সময় তারা সয়দাবাদ মোড়ে রাস্তার পাশে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছে।
ইসলামপন্থিরা সব বাধা উপেক্ষা করে পায়ে হেঁটে ঢাকা অভিমুখে আসা শুরু করেছেন । ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি বিরোধিরা বিকেল থেকে অবরোধ শুরুর কথা বললেও ১২ ঘণ্টা আগে শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু করে দেয়া হয়েছে অবরোধ। প্রশাসনযন্ত্র আর শ্রমিক সংগঠনগুলোকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে রাজধানী ঢাকাকে।
ঢকাগামী হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের ঠেকানোর জন্য চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, বরিশালসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো থেকে ঢাকামুখী যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বরিশাল থেকে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ রয়েছে। মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটে ফেরি চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর এসব কাজে অজুহাত দেয়া হয়েছে নিরাপত্তার।
দলটির নেতাকর্মীরা যেসব বাস ভাড়া করেছিলেন সেসব বাস মালিকরাও এখন ঢাকায় আসতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে ঢাকায় আসার চেষ্টা করছেন হেফাজতের কর্মীরা।
জানা যায়, অনেক বাধার মধ্যেও ভোরে চট্টগ্রাম থেকে লংমার্চ শুরু হয়েছে। ৫০টি মাইক্রোবাসের একটি কাফেলা সকালে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। এছাড়া বিপুলসংখ্যাক নেতাকর্মী জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে অবস্থান করছেন। জুমার নামাযের পর তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে অবস্থানকারীরা বাধা এলে চট্টগ্রাম অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।
খুলনায় ছাত্রলীগের ভাধা উপেক্ষা করে খুলনা থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন। এরই মধ্যে শুক্রবার ভোরে তিনজন হেফাজত কর্মীকে মারধর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা পুলিশে দিয়েছে। দেশের অন্যান্য এলাকার মত রাজশাহী-ঢাকা রুটে শুক্রবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সন্ধ্যা থেকে হরতাল-অবরোধ শুরু হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ দিয়ে কৌশলে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার ভোরে কয়েকটি বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেলেও সকাল ৮টার পর থেকে রাজশাহীর ঢাকা টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছাড়েনি। এ অবস্থায় অনেকেই বাস কাউন্টারে এসে দুর্ভোগে পড়েছেন। পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা গাড়ি ভাঙচুর হতে পারে এ আশঙ্কায় যানবাহন ছাড়ছেন না।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা অভিমুখে লংমার্চে যোগ দিতে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় সকালে একত্রিত হয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ভোর থেকেই তারা পদুয়ার বাজারে জমায়েত হতে শুরু করে। এখান থেকে পূর্বে রিজার্ভ করা বাসে ঢাকা যাওযার কথা থাকলেও বাস মালিকরা তাদের বাস দিতে অস্বীকার করে ভাড়ার টাকা ফিরিয়ে দেয়। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- হেফাজতে ইসলামের কুমিল্লা জেলা সভাপতি মাওলানা নুরুল হক, সহ-সভাপতি মাওলানা নোমান ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। পরে পায়ে হেঁটে সকাল ১০টায় ঢাকা অভিমুখে রওনা করে দলটির নেতাকর্মীরা।
মাদারীপুর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা থেকে ঢাকায় আসার একমাত্র নৌ-রুট কাওড়াকান্দি-মাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একইভাবে বরিশাল, বগুড়া, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের জেলা থেকে ঢাকা রুটের সকল যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধায় শুক্রবার দুপুরে হেফাজতে ইসলামের ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার জনান, আটককৃতরা হানিফ পরিবহনের একটি বাস নিয়ে গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। বাসটি শহর থেকে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ি সড়কের জেলখানার সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাসটি থামায়। পরে বাস থেকে তাদের আটক করে। আটককৃতরা হেফাজতে ইসলামের নাম বললেও তারা আসলে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হেফাজতে ইসলাম সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আমির মাওলানা আব্দুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, রাতে জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম তাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে যোগদানের ব্যাপারে সকল সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এজন্য তারা তাসলিমার পরিবহনের ৫টি গাড়ি ভাড়া করেন। কিন্তু সকালে মালিকরা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে লংমার্চ কর্মসূচিতে গাড়ি ভাড়া দেয়া নিষেধ রয়েছে। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা রোডে চলাচলরত গাড়িগুলোতে তাদের টিকিট দেয়া হচ্ছে না।
তারপরেও কয়েকটি লোকাল গাড়ি নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় সয়দাবাদ এবং সেতুর পশ্চিমপাড় টোলপ্লাজার কাছে পৌঁছলে পুলিশ গাড়ি থেকে তাদের নামিয়ে দেয়। এ কারণে তারা মহাসড়কের পাশে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করছেন বলে জানান মাওলানা আব্দুল্লাহ। বঙ্গবন্ধু সেতু থানার সেকেন্ড অফিসার মোতালেব হোসেন জানান, সয়দাবাদ মোড়ে কাউকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়নি। তারা সকলেই এখানে একজোট হয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে।
বাস ও লঞ্চ বন্ধ থাকায় দেশের কোন কোন জায়গা থেকে সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে লংমার্চে যোগ দিতে শুরু করেছেন অনেকেই। হেফাজতের নেতারা দাবি করেন, তাওহীদি জনতাকে কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না। যেভাবেই হোক ঢাকার লংমার্চে যোগ দেবেন তারা।
বাধা সত্ত্বেও ৫০টি মাইক্রোবাসের একটি কাফেলা সকালে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। হেফাজতের নেতা-কর্মীরা যেসব বাস ভাড়া করেছিলেন সেসব বাস মালিক ঢাকায় আসতে অস্বীকৃতি জানানোয় বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করেছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছেন। তিনি বলেন, “দুপুর আড়াইটার মধ্যে লংমার্চে যাওয়ার জন্য গাড়ি চলতে না দিলে সারাদেশ থেকে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে।
তাওহীদি জনতার এ আন্দোলন দমিয়ে রাখবে এমন সাধ্য কারো নেই।’ বিকেল পৌনে ৩টার দিকে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্টিমেটামের সময় বাড়িয়ে বলেন, ‘এ সময়ের মধ্যে সরকার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী লংমার্চে গাড়ি যেতে না দিলে সরকার পতল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।’
চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ থেকে গরিবুল্লাহ শাহ মাজার হয়ে জিইসি মোড় পর্যন্ত সড়কে দু’পাশ হাজার হাজার মানুষ অবরোধ করে রেখেছে। সড়কে বসে তারা জিকির ও সরকার বিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। সোয়া ২টার দিকে ওয়াসা মোড় থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত মহানগরীর প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে হেফাজত কর্মীরা। এ সময় এ চত্বরকে ‘ইসলামী চত্বর’ বলে ঘোষণা দেন মাওলানা আজিজুল হক। ফলে এ সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
Leave a Reply