স্বদেশ জুড়ে ডেস্ক: সরকার লংমার্চে অনুমতি দিয়েও বাধা দেয়া ও কর্মীদের উপর নির্যাতনের এবং সকল যানবাহন বন্ধ রাখে যাতে হেফাজত কর্মীরা ঢাকায় জমায়েত হতে না পারে। এসব অভিযোগ এনে সোমবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহবান করেছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। সমাবেশ শেষে করে হরতালের এই ঘোষণা দেন সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবু নগরি। এছাড়া ৫ মে ঢাকা অবরোধ এবং চলতি মাসে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের মহাসচিব।
হেফাজত নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ধরনের দাবী তুলেন সরকারের উদ্দেশ্য। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন বলেও হুশিয়ারী দিয়ে অবিলম্বে দাবী আদায় করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
রাজনৈতিক বক্তব্য না দেয়াসহ ১২টি শর্তে তাদের এই সমাবেশের অনুমতি দেয় মহানগর পুলিশ। শাপলা চত্বর থেকে নটরডেম কলেজ-আরামবাগ হয়ে ফকিরাপুল ক্রসিং পর্যন্ত এই সমাবেশ করার অনুমতি থাকলেও দুপুরের আগেই জমায়াতের সীমানা নির্ধারিত সীমানা পার হয়ে যায়। পুলিশ বলছে, প্রেসক্লাবের সামনেও জমায়েত করার অনুমতি নেই হেফাজত কর্মীদের।
সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে ‘নাস্তিকদের’ বের করে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ থেকে। এছাড়া নাস্তিকতার অভিযোগে শাহরিয়ার কবির, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও ইমরান এইচ সরকারসহ আরো বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা। ‘নাস্তিকদের’ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে সমাবেশ থেকে হুমকি দেন তারা।
সমাবেশের প্রায় সব বক্তাই কথিত নাস্তিকদের বিচার চেয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক বলেন, আমরা শেখ হাসিনাকে বলছি, নাস্তিক মেনন, ইনু ও একে খন্দকারকে নৌকা থেকে নামিয়ে দেন। না হলে আপনার নৌকা পানিতে তলিয়ে যাবে। শনিবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মতিঝিলে এসে জড়ো হন হেফাজতকর্মীরা। সকাল ১০টায় মঞ্চে বক্তব্য শুরু হয়।
হেফাজত নেতা জোবায়ের আল হাবীব তার দাবীতে বলেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের গ্রেপ্তার করুন অবিলম্বে।
১২টা ৫৫ মিনিটে মাওলানা সেলিম উল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে স্লোগান দেন। এ সময় সমাবেশে উপস্থিতরা জুতা তুলে ধরেন। এর পাঁচ মিনিটের মধ্যে সমাবেশ থেকে বলা হয়, সবাইকে সম্মান করতে হবে। শেখ হাসিনা এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে যে স্লোগান দেয়া হয়েছে, তা স্বাধীনতাবিরোধী স্লোগান। এ স্লোগান আমরা প্রত্যাহার করছি।
হেফাজতের নেতারা বসেছেন প্রায় ৩০ স্কয়ার ফুটের একটি মঞ্চে, সেখানে শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে, ঝোলানো হয়েছে ১০টি ফ্যান। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরবে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায়। সমাবেশ চলাচালে প্রখর রোদে কয়েক জনের অসুস্থ হওয়ারও খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ আখ্যায়িত করে তাদের শাস্তির দাবিতে এই সমাবেশ করছে হেফাজতে ইসলাম, যাদের বিরুদ্ধে জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটও হেফজতের কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে।
অন্যদিকে হেফাজতের এই কর্মসূচি প্রতিহত ও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ ২৫টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠন শুক্রবার সন্ধ্য ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার হরতাল করছে সারা দেশে। একই সময় থেকে ২২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ।
সমাবেশ চলাকালে পুলিশ পল্টনের ইউবিএল ক্রসিং এলাকায় ব্যারিকেড দিলে শ’ খানেক হেফাজত কর্মী তা ভেঙে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়। এর ঘণ্টাখানেক পর মহানগর পুলিশের কমিশনার বেনজির আহমেদ প্রেসক্লাবের সামনে এসে হেফাজত কর্মীদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশের অভিযোগ, শর্ত ভেঙে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়ার পর পুলিশ কমিশনারের দিকে পানির বোতল ছুড়েছে হেফাজত কর্মীরা। ঘটনার পরপরই বেনজির সেখান থেকে চলে যান।
এ সময় চ্যানেল টোয়েন্টিফোর ও চ্যানেল আইয়ের সংবাদকর্মীরা সমাবেশের খবর ও ভিডিও সংগ্রহের সময় হঠাৎ অর্ধশতাধিক হেফাজত কর্মী তাদের ধাওয়া করে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় কয়েকজন সাংবাদিক হেফাজত কর্মীদের ধাওয়ার শিকার হন বলে জানা যায়। এর বিরোধীতা করে সমাবেশে অংশ নিতে আসা মাওলানা ইসমাইল হোসেন বলেন, রির্পোট সংগ্রহ করতে আসা সাংবাদিকরা জনসমাগমকে মৌলবাদীদের জাগরণ বলায় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ধাওয়া দেয়।
Leave a Reply