শীর্ষবিন্দু নিউজ: ভারত একতরফা ভাবে অভিন্ন নদী থেকে পানি চুরি করলে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব হারাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বামপন্থি নেতারা। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) আয়োজিত তিস্তা অভিমুখে তিন দিনব্যাপী লংমার্চ-পূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ সব কথা বলেন নেতারা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ শেষে লংমার্চ শুরু হয়। এতে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক দলের নেতারা সংহতি প্রকাশ করেন। তারা বলেছেন, ইলিশ মাছ আর জামদানি শাড়ি পাঠিয়ে নয়, সাহস নিয়ে ন্যায্য দাবি আদায় করতে হবে। ভারতের কাছ থেকে দাবি আদায়ের জন্য নতজানু পররাষ্ট্র নীতি পরিহার করতে হবে।
তিস্তা মার্চ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা প্রথম দিন গাজীপুর হয়ে সিরাজগঞ্জ গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন। শুক্রবার সিরাজগঞ্জ, রংপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে প্রচারণা চালাবেন তারা। শনিবার রংপুর থেকে যাত্রা শুরু করে তিস্তার নদীর কাছে পৌঁছাবে লংমার্চটি। সেখানে সমাবেশের মাধ্যমে তিস্তা মার্চ -এর সমাপ্তি হবে।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন, সিপিবি সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
সমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, কোনো নদীর ওপর ভারতের একক দাবি বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না। নদী হলো বাংলাদেশের প্রাণ। আর সেই প্রাণ নিয়ে কোনো ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, কোনো দেশের একক সিদ্ধান্তে নয়, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমেই দুই দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি ভারতকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, যদি একতরফা তিস্তার পানি চুরি করতে চান করেন, তাহলে মনে রাখবেন, বাংলাদেশের বন্ধুত্ব হারাবেন আপনারা। আর যদি পানি চুরি করতে না চান, তাহলে নদীর ওপর বাঁধ দেবেন না।
সেলিম বলেন, তিস্তা নদী রক্ষায় আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার জন্য আমরা চেষ্টা করবো। নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে দাবি আদায় হয় না। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে এর আগেও কয়েকটি বামপন্থি সংগঠন তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ করেছে। সিপিবি-বাসদের পর একই দাবিতে লংমার্চ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
সিপিবি সভাপতি বিএনপির এই কর্মসূচির সমালোচনা করে বলেন, জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে সবাই কর্মসূচি দিলে আমাদের আলাদা করে কর্মসূচি দিতে হতো না। আজ তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই এই কর্মসূচি দিয়েছে। তারপরও বলতে চাই, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিস্তা বাঁচাতে কবে লংমার্চ কর্মসূচি নেওয়া হবে সেটাই জনগণ জানতে চায়।
সংহতি প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার যখন নির্বাচিত সরকার ছিল তখন আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল, আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায় করবে। কিন্তু সরকার তা করতে পারেনি। এই সরকার একটা ফালতু সরকার। নিজের দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে ভারতের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিএনপির সমালোচনা করে মান্না বলেন, দায়িত্বে থাকতে একদিনও তিস্তা রক্ষার কথা বলেনি। এখন তারা কর্মসূচি দিয়েছে তাও ভালো। তিস্তা নদী রক্ষায় ডান-বাম বলে কোনো কথা নেই উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমাদের পানির দরকার, আমাদের বাঁচা দরকার। তাই, আমাদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র বটে, কিন্তু তাদের সমস্ত আবদার মেনে নিতে হবে এটা তো কোনো কথা নয়।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, নদীর ওপর নির্ভর করে মানুষ হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব। নদীগুলোর অবস্থা দেখে মনে হয় না দেশে কোনো সরকার আছে। সরকার দেশিয় দখলদারদের হাতে নদীগুলো ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের অস্তিত্ব যার ওপর নির্ভর করে, সেই অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই যদি সরকার কাজ না করে, তাহলে কিসের জন্য কাজ করবে!
বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ৪২ বছর শাসক শ্রেণীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারত আমাদের পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। লংমার্চে কোথাও বাধা দেওয়া হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক।
কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বাপা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, তিস্তা নদী থেকে ৬ হাজার কিউসেক মিটার পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু, বাংলাদেশ পাচ্ছে মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার কিউসেক। আর ভারত তিস্তা নদীতে বাঁধ দিলে পানি প্রাপ্তির অধিকার বাংলাদেশের জন্য চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি সরকারের কাছে জানতে চান, সরকার মাত্র ২০ শতাংশ পানির জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা করছে। কেন শতভাগ পানির দাবি জানানো হবে না! এই চুক্তি হলে বাংলাদেশ কোনো পানি পাবে না। তাই, ২০ শতাংশ নয়, শতভাগ পানির দাবি জানানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেন এই পরিবেশবাদী আন্দোলনের নেতা।