শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৬

কথায় কথায় হরতাল

কথায় কথায় হরতাল

ব ঙ্গ বী র কা দে র সি দ্দি কী বী র উ ত্ত ম:

 

 

 

 

 

 

 

 

আজ হরতাল। হরতালে মানুষের রেহাই নেই। আজকের হরতাল হেফাজতে ইসলামের, ৬ তারিখ ছিল গণজাগরণ মঞ্চের। আজকের হরতাল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। ৬ তারিখে ছিল সূর্যাস্ত থেকে পরদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আমরা যারা সেই কবে থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত; সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, হরতাল, অসহযোগ, মুক্তিযুদ্ধ করে এতদূর এসেছি—এমন অভিনব সরকারি রাতের হরতাল কখনও দেখিনি। দিনের শুরু হয়ে পরদিন সকালে শেষ হতে দেখেছি, কিন্তু রাতে শুরু হয়ে সারাদিন শেষে শেষ হতে দেখিনি। আমরা এশিয়ার মানুষ, সারা এশিয়াতেও এর নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে কেউ কখনও রাতে হরতাল করেছে কিনা এ পর্যন্ত আমি জানি না। আর ৬ তারিখের হরতালের উদ্দেশ্যটা তেমন ভালো ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের কর্মসূচির ব্যাঘাত ঘটাতে যানবাহন বন্ধ করা, উদ্দেশ্যটা খুবই খারাপ। রাজনীতি হবে মানুষের কল্যাণে। কিন্তু এখানে কারও কোনো কল্যাণ নেই। গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ করে এমনকি ট্রেন থামিয়ে দিয়ে সরকার যে ন্যক্কারজনক অন্যায় করেছে এর খেসারত আগামীতে তাকে দিতে হবে। শাহবাগের গণমঞ্চ একসময় মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছিল। দু’দিন আগে যারা রাজাকারের ফাঁসি চাই দাবিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করেছিল তাদের কিছু মানুষের পাপের ভারে তারাই তছনছ হয়ে গেছে। কিছু দুষ্ট ব্লগারদের কারণে একটা মহত্ প্রচেষ্টা আঁতুড় ঘরেই মৃত্যুবরণ করতে বসেছে। জিকির উঠেছিল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। সবাই জানে পৃথিবীতে কখনও সব অপরাধীর ফাঁসি হয় না। সব অভিযুক্তের দণ্ডও হয় না। কিন্তু শাহবাগের ফাঁসি চাই; সেটাও ছিল একটা অযৌক্তিক উদ্ভট আবেগ। কেউ কেউ শাহবাগকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ আখ্যায়িত করেছিলেন। ভদ্রলোকেরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাই দ্বিতীয়, তৃতীয় বানাতে তাদের বাধবে কেন? কিছু সাহিত্যিক, নাট্যকার মুক্তিযুদ্ধকে তাদের নাটকের অংশ মনে করা শুরু করেছে। মুখে রক্ত দেয়া যত সহজ প্রকৃতপক্ষে রক্ত দেয়া অত সহজ নয়। তবে যাদের চাপার জোর বেশি তারা কিছু সময় জনসম্মুখে বেশ তরপাতে পারে; কিন্তু অন্তিমে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি খুবই অবাক ও বিস্মিত হচ্ছি শেষ পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চের নেতা হিসেবে বেরিয়ে এসেছেন ইমরান এইচ সরকার। ভদ্রলোক মাঝে-মধ্যে বিকল্প সরকারের মতো আচার-আচরণ করেন। হঠাত্ পুলিশ পাহারা পেয়ে নিজেকে ছোটখাটো সরকার ভাবলে তাকেইবা দোষ দেই কী করে? ডাক্তার হিসেবে অপারেশন থিয়েটারে রক্ত আর যুদ্ধক্ষেত্রের রক্ত কখনও এক রকম নয়। তার উষ্ণতাই আলাদা। এখন দেখছি জনাব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জনাব শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন এরাই যেন বাংলাদেশ। অথচ বাংলাদেশের সৃষ্টিতে এদের কারও কোনো ভূমিকা নেই। লোকজন তো বেশ জোরেশোরেই এখন বলাবলি করছে, ঘাতক দালাল কমিটি গোলাম আজমের ফাঁসি ফাঁসি করে জনাবের হারানো নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছেন। আবার শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ করে যুদ্ধাপরাধীদের হালাল করে দেন কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন। শাহবাগে জয়বাংলা স্লোগান হলো—বঙ্গবন্ধু হলো না। জাহানারা ইমামের ছবি উঠলো, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর উঠলো না। এ কেমন ষড়যন্ত্র? এ কেমন কথা? জনাব মুনতাসীর মামুন যার চাচা মহীউদ্দীন খান আলমগীর পাকিস্তানের একজন রেজিস্টারি করা সেবাদাস, মহারাজাকার। জনাবের বাবা মিসবাহ উদ্দিন খান মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টের সচিব হিসেবে দালালি করেছেন। তার দাদা চাঁদপুরের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে শোনা যায়। গোষ্ঠীশুদ্ধ পাকিস্তানের দালালি করে তারা এখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি। আর গোষ্ঠীশুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা হলাম রাজাকার। মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু—কারও বাড়ি হানাদাররা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়নি। আমার বাবার বাড়ি মানে মাননীয় মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাবার বাড়ি হানাদাররা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল। আসাদুজ্জামান খান মঞ্জুর বাবা সামাদ উকিলের বাড়ি ছারখার করে দিয়েছিল, বদিউজ্জামান খানের দালান ডিনামাইট মেরে ধূলিতে পরিণত করেছিল। এসবের খবর নেই, যত বড় বড় খবর হানাদার তোষক মহীউদ্দীন খান অথবা মিসবাহ উদ্দিন খানদের। মহাজোট এসব নিয়ে যত জোট বাঁধবে ততই জট পাকবে। আমার ব্যথা দেশের যে সর্বনাশ হচ্ছে তা নিয়ে। সেখান থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়াব কী করে?

৬ তারিখের লংমার্চ শেষে মহাসমাবেশে যে পরিমাণ যুবক দেখা গেছে, মনে হয় না তারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে জামায়াতকে সমর্থন করতে শাপলা চত্বরে এসেছিল। তারা শাপলা চত্বরে এসেছিল আল্লাহ-রাসুলকে অপমান করার প্রতিবাদ করতে। তারা বিক্ষুব্ধ একথা জানাতে আল্লাহ-রাসুলের প্রেমে মশগুল হয়ে এসেছিল বলেই আমার বিশ্বাস। ৬ তারিখ দুপুরের দিকে জার্মানী থেকে এক ভদ্রলোক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনাকে রাজাকার বলেছে এ ব্যাপারে মন্তব্য কী?’ বলেছিলাম, ‘আমার কোনো মন্তব্য নেই। যারা আল্লাহ-রাসুল সম্পর্কে কটূক্তি করে তারা আমাকে গালাগাল করলে মন খারাপ করার কী আছে? যারা মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বিয়ে নিয়ে মা হজরত খাদীজার উট, দুম্বা লালন-পালন সম্পর্কে উক্তি করে তারা আমাকে গালাগাল করলে ভাগ্যই বলতে হবে। যে রাসুল সারা আরব জাহানে ধর্ম প্রচার শুরু করার আগেই সত্যবাদী বিশ্বাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, শত্রুপক্ষের লোকেরাও যার কাছে টাকা পয়সা জিনিস জমা রাখতে কখনও কোনোদিন কোনো সন্দেহ করেনি, তাকে কীসব জঘন্য ভাষায় অপবাদ দিয়েছে। নবী করীম (সা.)-এর মেরাজের পর বিধর্মীরা প্রশ্ন তুলেছিল কী করে সম্ভব? মক্কা থেকে পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাস, সেখান থেকে পাক পরোয়ার দেগারের সঙ্গে দিদার—এ কী করে সম্ভব? মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় ছিলেন। মেরাজের কদিন পর তিনি যখন মক্কায় ফিরছিলেন, পথিমধ্যেই অবিশ্বাসীরা জিজ্ঞেস করছিল, ‘মোহাম্মদ বলছে, সে মেরাজে গেছে, তুমি কি এটা বিশ্বাস কর?’ হজরত আবু বকর (রা.) বলেছিলেন, ‘যিনি জীবনে একটি মিথ্যা কথা বলেননি, তিনি যদি বলে থাকেন তিনি মেরাজে গিয়েছিলেন তাহলে দুনিয়ার কেউ বিশ্বাস না করলেও আমি আবু বকর বিশ্বাস করি তিনি মেরাজে গিয়েছিলেন।’ আমাদের সেই মহানবী সম্পর্কে দু’চারজন ভ্রষ্ট ব্লগার কটূক্তি করলে সরকার যদি তার প্রতিকার না করে তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অবশ্যই রুখে দাঁড়ানো দরকার। আমি খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম, যেদিন পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়েছিল। সংবিধানের মুখবন্ধ থেকে, ‘আল্লাহর উপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস’ বাদ দেয়া হয়েছিল। যদি মুখবন্ধে কথাটি কোনো সময়ই লেখা না হতো আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি হতো না। কিন্তু একবার লিখে আরেকবার বাদ দেয়ায় হৃদয় চৌচির হয়ে গিয়েছিল। সরকারের সেই অন্যায় কাজের তেমন কোনো প্রতিবাদ হয়নি। গত ৬ তারিখ আল্লাহ-রাসুলের অবমাননা এবং সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়ার বিরুদ্ধে এমন সোচ্চার প্রতিবাদে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি, মুসলমানের ঈমান যাতে মজবুত করেন, যাতে তার সৃষ্টি মাখলুকাতের হেফাজত করতে পারেন।

গণজাগরণ মঞ্চের অবিবেচকদের মতো হেফাজতে ইসলাম শাপলা চত্বরে তাদের অবস্থান স্থায়ী না করে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়ে যথার্থই বুদ্ধিমত্তার কাজ করেছেন। আরও ভালো হতো আজ হরতাল আহ্বান না করলে। হরতালে কী হবে? কিছুটা জনমত নষ্ট হবে। কিছু লোকের রুটি-রুজি নষ্ট হবে, অর্থনীতিতে চাপ পড়বে। হরতালের কাজ আলেমদের নয়, এটা রাজনীতিকদের। যাই হোক, একজন মুসলমান হিসেবে সমাবেশটি অন্তর থেকে সমর্থন করেছি। জনকল্যাণে সাধারণ মানুষের যে কোনো কাজে সাথী হওয়াই আমার কাজ। যতক্ষণ সুস্থ থাকব ততক্ষণ সে কাজটি করতে আপ্রাণ চেষ্টা করব। যাদের দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা অক্ষুণ্ন রাখার দায়িত্ব তারাই শান্তি বিনষ্টে লাগাতার চেষ্টা করছে। ৪ এপ্রিল আমার মায়ের মৃত্যুদিনে ফলদায় ১২০ বছরের পুরনো কালী মন্দির দেখতে গিয়েছিলাম। একবুক দুঃখ নিয়েই গিয়েছিলাম। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মন্দিরটি হানাদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছিলাম। কিন্তু স্বাধীন দেশে বর্তমান হানাদারদের হাত থেকে রক্ষায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারিনি। ফলদায় অল্প সময়ে বিপুল লোক সমাগম হয়েছিল। সবার এক কথা তারা বড় কষ্টে আছে। একসময়ের হেমনগরের রাজা যশোধরের এলাকা ছিল ফলদা। প্রবাদ আছে, ‘দৌলতপুর ফলদা জমিতে হাল দিয়ে যে না পায় সোনা, সে বলদা।’ একসময় এমন সমৃদ্ধ এলাকা ছিল। মহাজোটের পাল্লায় পড়ে এখন শুধুই হাহাকার। মন্দির এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়েছিল। লোকজনের চাপে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। শত কণ্ঠে দুষ্কৃতকারীদের নাম উচ্চারিত হচ্ছিল। তারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের পাণ্ডা, ষণ্ডা, গুণ্ডা। অথচ যখন পেট্রল ঢেলে মন্দিরে আগুন দেয়া হয়েছিল তার এক ঘণ্টা পর পাশের গ্রামে এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে ঘুমন্ত অবস্থায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এটা পাগলেও বুঝে, কেউ কোনো কুকর্ম করে তখনই নিশ্চিন্তে ঘুমায় না। যেহেতু ফলদা মন্দির পোড়ানোর কুকর্মে প্রায় সব আওয়ামী জড়িত, জামায়াত-শিবির বলে চালিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই তখনও থানায় মামলা নেয়া হয়নি। এখন পুলিশরা পোড়া মন্দিরে পাহারা দিচ্ছে। ৪ তারিখ রাতে সখিপুরের হাতিবান্ধার আরেক কালী মন্দিরে মূর্তি ভাঙা হয়েছে। মহাদেবের মাথা ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। ভাঙার ভাবগতি দেখে সবাই বুঝেছে গোলমাল লাগানোর জন্য কাজটি কোনো হিন্দুর নয়। কোনো হিন্দুই অমন কাজ করবে না। গোলমাল বাধাতে কোনো হিন্দু কাজটি করলে হয়তো মহাদেবের পায়ের দিকে একটু ভাঙতো কিংবা হাতের আঙুল না হয় কালী মাতার ত্রিশূলটি সযত্নে শ্রদ্ধাভরে ভাঙতো। একেবারে ঘাড় মটকাতো না। যেহেতু মহাদেবের মুণ্ডুপাত করেছে, তাই কাজটি অন্য ধর্মের লোকের—এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। ফলদার মতো সখিপুরের হাতিবান্ধায় তেমন কেউ সোচ্চার ছিল না। আর অমন একটি ঘটনায় কারও মুখে তেমন বেদনার ছাপ দেখিনি, যেটা ফলদায় দেখেছি। তবু হাতিবান্ধা কালী মন্দিরে মূর্তি ভাংচুর করা হয়েছে। ব্যাপারগুলো খুবই নিন্দনীয়। ও এলাকার আশেপাশে কোনো জামায়াত-শিবির নেই। স্বাধীনতার পর জামায়াত কয়েকবার নির্বাচন করেছে। কখনও একশ’ ভোটও পায়নি। আর হাতিবান্ধার যেখানে মূর্তি ভাঙা হয়েছে তার ৫-৭ মাইলের মধ্যে খুব বেশি মুসলিম বসতিও নেই। দু’চারজন যারা আছে তারা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় ভালো মানুষ। ওই এলাকায় তেমন দলাদলি, মারামারি, কাটাকাটি গত ৫০ বছরে খুব একটা দেখা যায়নি। তাই জামায়াত-শিবিরের কাজ বলে এখানেও চালিয়ে দেয়া মুশকিল। তাহলে কারা এটা করেছে? সরকার এমন ব্যর্থ কেন? প্রশ্ন প্রায় সবার মনে। কিন্তু কেউ উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।

গত ৬ তারিখ হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আর কিছু না হোক, বড় দুই দলকে অবশ্যই কিছুটা ভাবাবে। না ভাবলে তারা বুঝবেন। কিন্তু ভাবনার বিষয় আছে অনেক। সবসময় যা খুশি তাই করবেন, কারও গায়ে বাতাস লাগবে না—অমন দিন শেষ হয়ে গেছে। মাত্র কদিন আগে সরকারের দুর্দিনে এমনকি নেত্রীর দুঃসময়ে পাশে থাকবেন প্রতিশ্রুতি দিয়েও হেফাজতে ইসলামের মিছিলকারীদের পানি খাইয়েছেন, সাধ্যমত খাবার খাইয়েছেন। কাজটি খুবই ভালো। দুঃসময়ে পাশে থাকবেন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করা খারাপ। মিরপুর ফ্লাইওভার উদ্বোধনের সময় আওয়ামী লীগ নেত্রীকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অমন প্রতিশ্রুতি না দিলেও পারতেন। কেউ তো তাকে পাশে চায়নি। তাহলে জোর করে পাশে থাকার এত ইচ্ছে কেন? আর কথা যখন দিলেন তা রাখবেন না কেন? যাক, ব্যাপারটা সম্পূর্ণই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। ভালো-মন্দ তিনিই বিচার করবেন। সাধারণ মানুষের বিষয়টা ভালো লাগেনি, তাই তাদের কথা তুলে ধরলাম। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে বিএনপি সমর্থন জানিয়েছিল। জাতীয় পার্টিও সমর্থন দিয়েছে। শত বাধা-বিপত্তির পর লংমার্চের মহাসমাবেশে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিরা হাত তুলেছেন। কেউ সাড়া দিয়েছে কিনা বলতে পারি না। এটা একেবারে ফয়তার দাওয়াতে গিয়ে খেতে না পাওয়ার মতো। অথবা ক্ষুধার্ত হিসেবে অনাহুতের মতো কোনো দাওয়াতে ঢুকে পড়ার মতো। বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম ঘড়ি ধরে কাঁটায় কাঁটায় কখনও সভা শুরু এবং শেষ হয়নি। শতাধিক বক্তা বক্তৃতা করেছেন। কিন্তু এত বড় দল, তাদের প্রতিনিধিরা একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারেননি। এটা খুব একটা ভালো লক্ষণ না। ভদ্রতা বলেও তো একটা কথা। পত্রিকায় দেখলাম ইসলামি আন্দোলনের প্রতিনিধি চরমোনাইর পীর সৈয়দ রেজাউল করিমের ভাই প্রতিনিধি হিসেবে গিয়ে কথা বলতে পারেননি, মঞ্চে জায়গা হয়নি। যদি প্রচণ্ড চাপের কারণে অমন হয়ে থাকে সে ভিন্ন কথা। যদি বিপুল সমাগম দেখে ইচ্ছে করে অমন করা হয়ে থাকে, কাজটি ভালো হয়নি। এখনই সংশোধন করা উচিত। মুসলিম উম্মাহর নিজস্ব বিভক্তি মুসলিম জাহানের সব থেকে বড় ক্ষতি করেছে। সবাইকে নিয়ে চলার অভাবেই আজ দেশে যত অশান্তি।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024