শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৯

মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার অতঃপর রিমান্ডে

মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার অতঃপর রিমান্ডে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

স্বদেশ জুড়ে ডেস্ক: দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কথিত স্কাইপ কথপোকথন প্রকাশ করে রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয় থেকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

২০০৬ সালের শেষ দিকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সৃষ্ট তুমুল রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সে বছর ২৪ নভেম্বর নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উত্তরায় সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিকেদের নিয়ে গোপন বৈঠক করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন মাহমুদুর রহমান। তারপর ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু কারী গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে নতুন বিতর্কের মধ্যমনি হয়ে উঠেন মাহমুদুর রহমান।

ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে উন্মাদনা সৃষ্টির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি তোলে গণজাগরণ মঞ্চ। তাকে গ্রেপ্তারে সময় বেঁধে দেয়ার পাশাপাশি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কাছে স্মারকলিপি দেয় গণজাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের সংগঠকরা বলেন, হয়রত মোহাম্মদকে (স.) কটাক্ষ করে বিভিন্ন বক্তব্য কয়েকটি পত্রিকায় প্রচার করে গণজাগরণ মঞ্চকে জাতির কাছে বিভ্রান্তিমূলকভাবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালানো হয়। মাহমুদুর রহমান কলাম লিখে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের উস্কে দেয়ার অপচেস্টা চালান।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে এই আন্দোলনের কর্মী ও ব্লগার রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর তাকে নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রচারণা চালানো হয়, ইসলামের বিরুদ্ধে লিখতেন এই রাজীব যার ছদ্ম নাম ছিল থাবা বাবা। ২২ ফেব্রুয়ারি আমার দেশের প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়- ‘ধর্ম ও আদালতের অবমাননা করছে ব্লগারচক্র’। এই এতে ক্ষেপে উঠে গণজাগরণ মঞ্চ।

গত বছরের শেষ দিকে ব্রাসেলস বসবাসরত বাংলাদেশীব আইন বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রধান নিজামুল হকের কথিত স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশ করে দৈনিক আমার দেশ। এর মধ্য দিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসেন পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। কথিত ওই ব্যক্তিগত কথোপকথন পত্রিকায় প্রকাশের ঘটনায়  গত ১৪ ডিসেম্বর প্রসিকিউটর সহিদুর রহমান তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন, যাতে আসামি করা হয় মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশের প্রকাশক হাসমত আলী হাসুকে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বেআইনিভাবে বিচারপতির স্কাইপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়। ধারাবাহিকভাবে ওই কথোপকথন প্রকাশের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

এদিকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তাৎক্ষকিভাবে আমার দেশ কার্যালয়ের মধ্যে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মীরা। আমার দেশ থেকে বলা হয়, পুলিশ তাদের কার্যালয়ে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিওফুটেজ এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের কম্পিউটার ও গুরুত্বপূর্ণ সকল কাগজপত্র নিয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, মাহমুদুর রহমান ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্বালানি বিষয়ক বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন তিনি। ২০০৮ সালে বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর মালিকানাধীন আমার দেশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন মাহমুদুর রহমান। ওই সময় থেকেই তিনি পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১০ সালের ২ জুন আমার দেশের প্রকাশক হাসমত আলী হাসুর দায়ের করা প্রতারণা মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ওই দিনই তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়। এরপর মানহানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মোট ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়। আদালত আবমাননার একটি মামলায় একই বছর ১৯ অগাস্ট মাহমুদুরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ মামলায় সাত মাস সাজা খাটার পর গত বছর ১৭ মার্চ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

 

পুলিশে আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৩ দিনের রিমান্ডে মাহমুদুর রহমান

ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম সহিদুল ইসলাম এর আদালতে দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হাজির করা হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনটি মামলায় মোট ১৩ দিনে রিমান্ডে দেন। পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

 মাহমুদুরের বিরুদ্ধে  সাইবার অপরাধ (আইসিটি) আইনের ৫৬ ও  ৫৭ ধারা  এবং দণ্ডবিধির ১২৪ , ১২৪ (এ) , ১২০ (বি)  ও ৫১১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। দণ্ডবিধির ১২৪, ১২৪ (এ), ৫০৫ (এ), ১২০ (এ) ও ৫১১ ধারায় ওই মামলা করা হয় যাতে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সরকারকে আইন প্রয়োগে বাধা, কথা বা অন্য কিছুর মাধ্যমে অনিষ্ট করা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও অপরাধ সংগঠনের উদ্যোগ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ (আইসিটি) আইনের ৫৬ ও  ৫৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, যাতে ইন্টারনেটের তথ্য ব্যবহার করে উস্কানি দেয়ার কথা বলা হয়েছে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024