আমি একজন ছোট ব্যবসায়ী, আমার একটা পরিবার আছে, আমার মা আছে, আমার আছে ছোট ভাইবোন। ঢাকা শহরে আমার প্রতিষ্ঠানটি মাসিক ভাড়া দিয়ে চালাতে হয়, ঢাকায় আমি যে বাড়িতে থাকি সেটারও ভাড়া দিতে হয়। মাস শেষে আমার চারজন কর্মচারী আছে তাদের বেতন দিতে হয়। বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, , ডিসবিল, ইন্টারনেট বিল আরো কতো কতো বিল পরিশোধ করতে হয়। আমি একজন ছোটখাটো লেখক, সমাজ সচেতন মানুষ বিভিন্ন বিষয়-আশয় নিয়ে মাঝে মাঝে পত্রিকাতে লিখি। দেশের অনেক বড় বড় সমস্যা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামও করি। আমার সাথে অনেক ছোট ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ। কারণ আমি তাদের সাথে ব্যবসা করি। যে বাইন্ডার আমার বই বাঁধাই করে সে আমার চেয়েও ছোট ব্যবসায়ী। যে বইয়ের দোকানদার আমার বই বিক্রি করে সে আমার চেয়েও ছোট ব্যবসায়ী। আমার চেয়ে ছোট ব্যবসায়ী তরুণরা বলেন, চোখে অন্ধকার দেখছি রবীন ভাই। ভাই হরতালের পর হরতাল। দেশের ভবিষ্যৎ কী? নিজেদের ভবিষ্যৎ কী। এর শেষ কোথায়। আমার বইয়ের বাইন্ডার, আমার তরুণ ব্যবসায়ী বন্ধুরা দেশের রাজনীতিবিদদের হাতের কাছে পায় না। দেশের আঁতেল সুশীল সমাজেরও খোঁজ নেই তাদের কাছে। এখন রাজনীতিবিদ মানে বড় বড় ব্যবসায়ী, তারা দেশের চারটি বড় দলের অংশ। এমপি, মন্ত্রী, তাদের বাণিজ্য, লুটপাটকারী, ব্যাংক দিয়ে টাকা নিয়ে ফেরত দেয় না। শেয়ার বাজার থেকে সরকারের সহায়তায় টাকা লুট করা এবং ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ায় দেশের প্রকৃত ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের খারাপ অবস্থা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। এই লুটেরা ব্যবসায়ীরা আবার দেশের ৯০ শতাংশ গণমাধ্যমের মালিক। ফলে আমাদের অধিকাংশ গণমাধ্যমে জনগণের সুখ-দুঃখের কথার প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। এই গণমাধ্যম দল নিরপেক্ষ থাকতে গিয়ে সমাজের প্রকৃত সংবাদ উধাও করে অবান্তর সব বিষয় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আলোচনায় থাকতে ভালোবাসে। হরতাল নিয়ে এই দেশের খেটে খাওয়া মানুষের চালচিত্র হতে পারত আমাদের গণমাধ্যমের প্রধান বিষয়। ফুটপাতের হকার। মার্কেটের ছোট দোকানদার, দিন আনে দিন খাওয়া শ্রমজীবীদের কথা লিখবার বা বলবার কেউ নেই! আমাদেরর ব্যবসায়ীরা হয়েছেন রাজনীতিবিদ, আর লেখক বুদ্ধিজীবীদের বিরাট অংশ হচ্ছেন এই ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদদের পোষা সুশীল সমাজ। এরা যখন হরতাল নিয়ে আলোচনা করে। তখন বলেন আপনাদের আমলে হরতালে……. হয়েছে। আমাদের আমলে….. হয়েছে। এদের কেউ নিজদারীত্বে জনগণের হয়ে কথা বলতে শুনি না। গণতান্ত্রিক অধিকার হরতাল চাইলেই প্রতি মাসে ১৫ দিন করা যায়! গণতান্ত্রিক অধিকার হরতাল পালন করার জন্য হরতালের আগের দিন বাসে, ট্রেনে গাড়িতে মানুষ মারার প্রতিযোগিতা হয়!!! লুটপাটকারী ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদগণ আপনারা যে মরণব্যাধী হরতাল বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাতে আর কিছুদিন পর এদেশে লুটপাট করার মতো সম্পদও থাকবে না। যে সুশীল বুদ্ধিজীবী নিরপেক্ষ ভণ্ডরা দলীয় রাজনীতির বাইরে কথা বলতে ভুলে গেছেন। যে গণমাধ্যম নিরপেক্ষ থাকার ভান করে জনগণের প্রকৃত সংবাদ বর্জন করছেন। তাদের বলি, আর হরতালের বিষয় নিরপেক্ষ থাকবেন না। আপনাদের মালিক আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি করলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্যান্সার হরতাল বন্ধ করার জন্য সামাজিক সচেতনতায় অংশ হিসেবে আপনারাও এগিয়ে আসুন। যে কোনো রাজনৈতিক দল দিনের পর দিন হরতাল পালন করার নাম গণতন্ত্র হতে পারে না। আর হরতাল করে গণপরিবহন ও মানুষ পুড়িয়ে, দেশের অর্থনীতির ১২টা বাজিয়ে যে কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন বন্ধ করতে হবে আমাদের। তা না হলে আবার বিরোধী দলে যাওয়া এখনকার ক্ষমতাসীনরা ও জনগণের স্বপ্ন ভঙ্গ করে তাদের প্রিয় অস্ত্র হরতাল নিয়ে অগ্রসর হবে। তাই চলুন সবাই সোচ্চার কণ্ঠে বলে উঠি ”দলের চেয়ে দেশ বড়, হরতাল বন্ধ কর।”
লেখক: রবীন আহসান প্রকাশক, ছড়াকার, ‘দেশ বাঁচাও পেট বাঁচাও আন্দোলনের’ আহবায়ক।
Leave a Reply