স্বদেশ জুড়ে ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সরকার ‘নাস্তিকদের’ মদত দিচ্ছে—হেফাজতে ইসলামের এ বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মদিনা সনদের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চলবে। আমাদের প্রিয় নবী করিম (সা.) তার মদিনা সনদ ও বিদায় হজ্বে যেটা বলে গেছেন, ঠিক সেভাবেই এই দেশ চলবে। মদিনা সনদে সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর অধিকার যেভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল, আমরা তার আলোকে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তুলব। বাংলাদেশ হবে রাজাকার-আলবদরমুক্ত অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের ধর্ম পালন করার স্বাধীনতা অর্জন করবে।
ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ধর্মের অবমাননা বরদাশত করব না। নবী করিম (সা.)-কে কটূক্তি করলে আমরা মানব না, ব্যবস্থা নেবই। আবার কাবা শরিফের গিলাফ নকল করা, এটাও আমরা বরদাশত করব না। ‘হেফাজতের লংমার্চ থেকে বিরোধী দল সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিল, কিন্তু তা না হওয়ায় বিরোধীদলীয় নেত্রী নাখোশ হয়েছেন। উনি (খালেদা জিয়া) চেয়েছিলেন, তারা দু-একদিন বসে থেকে উনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাক। খাবার, পানি দিয়ে লাভ হয়নি। এজন্য উনি নাকি নিজের দলের নেতাদের মোবাইলও কেড়ে নিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া সহিংসতা ও হত্যার রাজনীতি করে যুদ্ধাপরাধীদের আবারও ক্ষমতায় আনতে চাচ্ছেন। ইয়াহিয়া যেমন ১৯৭১ সালে পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করে বলেছিলেন—এ দেশের মানুষ চাই না, মাটি চাই; বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও বোধহয় সে নীতিই অনুসরণ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছেন, মানুষ হত্যা করছেন, মানুষ হত্যার খেলায় মেতে উঠেছেন। তবে এসব করে মনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে পারবেন না। রাজনীতি করতে চাইলে সহিংসতার পথ ছাড়তে হবে। মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। অপরাধ যা করেছেন, মামলা থেকে বাঁচতে পারবেন না। তিনি সরকারের ধৈর্যকে দুর্বলতা না ভাবতে বিরোধী দলকে হুশিয়ার করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী মনে করেন কয়েকটি লাশ ফেলে দিলে আর্মি এসে উনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। তবে উনার মনে রাখা উচিত যে ফল পাড়ে, সে-ই খায়। বিরোধী দলের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, হরতাল ডেকে মানুষ হত্যা ও জনগণের জানমালের ক্ষতি করার অধিকার খালেদা জিয়ার নেই। তারা মানুষ হত্যা করবে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে আর আমরা বসে বসে দেখব, এটা হতে পারে না। মানুষ হত্যার অধিকার তাদের কে দিয়েছে। শুনেছি তার ছেলেদের দামি দামি গাড়ি আছে। তারমধ্যে লিমুজিন আরো কতো কি। তাদের দামি গাড়ি খুঁজে বের করে যদি কেউ আগুন দেয়—ওরা যেভাবে মানুষের বাড়ি পোড়াচ্ছে, সেভাবে মানুষ যদি আগুন দেয়া শুরু করে তখন কী হবে।
ফটিকছড়িতে সম্প্রতি মসজিদের মাইকে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে হামলা করা হয়েছে—এমন দাবি করে তিনি বলেন, মাইকে মিথ্যা কথা বলে মানুষ জড়ো করে আওয়ামী লীগের মিছিলে ভয়াবহ হামলা করা হয়েছে। সেখানে তিনজনের লাশ পাওয়া গেছে। অনেকের খোঁজও পাওয়া যায়নি। ইসলাম ধর্মে মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ। কিন্তু এভাবে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে মিথ্যা কথা বলে তারা কোন ইসলামকে হেফাজত করতে চায়? আমি সব ইমাম ও আলেম-ওলামাকে বলব, মসজিদের মাইকের অপব্যবহার রোধে সজাগ হন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কীভাবে হবে, অনেকে নানা ফরমুলা দিচ্ছেন। একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে কীভাবে নির্বাচন হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনের ব্যাপারে কী বলা আছে। ব্রিটেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে নির্বাচন হয়। মালয়েশিয়ায় কীভাবে নির্বাচন হয়। সেগুলো সকলের দেখা দরকার। নতুন নতুন ফর্মুলা দিলে গণতন্ত্র সংহত হবে না।
হেফাজতে ইসলামের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেফাজত যেসব দাবির কথা বলেছে, আমরা বলেছি এর যৌক্তিকতাগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। যেসব দাবি মানার, তা মানা হবে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তিনি সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার আহবান জানান।
Leave a Reply