দুনিয়া জুড়ে ডেস্ক: লৌহ মানবীখ্যাত সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মৃত্যুর পর সারা বিশ্ববাসী শোক প্রকাশ করেছেন।লন্ডনে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। বুধবার তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানের দিন ঠিক করা হয়েছে সেন্ট ক্যাথডিল চার্চে। আশা করা যাচ্ছে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেত উপস্থিত থাকবেন মিসেস থ্যাচারের এই অনুষ্ঠানে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের অফিস ও মিসেস থ্যাচারের পারিবারিকভাবে তৈরি করার সিদ্ধান্ত একটি সুত্রে জানা যায়।
কিন্তু অস্বাভাবিক ঘটনা হলো- তার মৃত্যুতে ব্রিটেনের কিছু মানুষ প্রকাশ্যেই যেভাবে স্বস্তি এবং আনন্দ প্রকাশ করেছেন, তা বিস্মিত করেছে অনেককে। ব্রিটেনের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়েও এক দশকের মধ্যে ব্রিটিশ রাজনীতি, অর্থনীতির এবং সেই সাথে সমাজের যে মৌলিক পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি তার জন্য শুধু ব্রিটেন নয়, সারা বিশ্বের মধ্যে সাড়া ফেলেছিলেন মিসেস থ্যাচার। সেই হিসাবে মার্গারেট থ্যাচার একই সঙ্গে ছিলেন অত্যন্ত বিতর্কিত এক রাজনীতিক। বিশেষ করে তার বাজারমুখী কট্টর পুঁজিবাদী নীতির কারণে স্বদেশের বামপন্থীদের কাছে তিনি বরাবরই তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছেন।
যদিও নানা মহল থেকে এ ধরনের আনন্দ সমাবেশের সমালোচনা করে বলা হয়েছে রাজনীতিতে তাকে নিয়ে মেরুকরণ ছিল ঠিকই কিন্তু তার মৃত্যুর পর এভাবে উৎসব অনুষ্ঠান যথাযথ নয়। মার্গারেট থ্যাচারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা তাকে রাজনীতিতে বির্তকিত ব্যক্তিত্ব করে তুলেছিল। ব্রিটেনের শিল্পখাতকে তিনি ব্যাপকভাবে বিরাষ্ট্রীয়করণ করেছিলেন- মুক্তবাজার অর্থনীতির একটা নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। তার এই নীতি লেবার দল এবং বাম ঘেঁষা রাজনীতিক ও রাজনৈতিক সমর্থকরা বরাবর সমালোচনা করে এসেছেন। তার ট্রেড ইউনিয়ন দমননীতি, খনি শ্রমিকদের সঙ্গে তার সরকারের বছরব্যাপী সংঘাত, প্রথম মেয়াদে চড়া বেকারত্বের কারণে এবং দৃঢ় চরিত্রের জন্য অনেকের কাছে জনপ্রিয় এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাপকভাবে বির্তকিত ও অজনপ্রিয়ও করেছিল।
মৃত্যুর পরও মার্গারেট থ্যাচারকে ঘিরে এই রাজনৈতিক বিভাজন ছিল খুবই স্পষ্ট। ব্রিটেনে কিছু মানুষকে তার মৃত্যুতে যেভাবে খোলাখুলি স্বস্তি, আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে, সেরকম সচরাচর দেখা যায় না। মার্গারেট থ্যাচারের মৃত্যুতে ব্রিটেনের দক্ষিণ পশ্চিমে ব্রিস্টল শহরে গত রাতে প্রায় ২০০ লোকের একটি আনন্দ সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষে ৭ জন পুলিশ অফিসার আহত হয়। সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেখানে আনন্দ অনুষ্ঠানের ডাক দেয়া হয়। পুলিশ তাদের সরে যেতে বললে ধ্বস্তাধ্বস্তির ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ লন্ডনের কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত ব্রিক্সটন এলাকাতে এবং উত্তরে গ্লাসগোতেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে আনন্দ ও স্বস্তি প্রকাশ করে সমাবেশ হয়েছে।
প্রায় ২০০০ অতিথি উপস্থিত থাকবেন মিসেস থ্যাচারের এই শেষকৃত্যা অনুষ্ঠান। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিদেশী অনেক রাস্ট্রপ্রধান ছাড়াও বিট্রিশ পার্লামেন্টের সদস্য, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, সহ রাজপবিবারের অনেকের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি।
Leave a Reply