শীর্ষবিন্দু নিউজ: জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আজ মঙ্গলবার না হওয়াকে ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের নেতা ইমরান এইচ সরকার।
অসুস্থ’হওয়ার কারণে নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায় ফের অপেক্ষমাণ রাখার প্রতিক্রিয়ায় আজ দুপুরে শাহবাগে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন ইমরান। তিনি বলেন, আমরা অন্য রায়ের আগে দেখেছি, জামায়াত প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু নিজামী তাদের আমির হওয়া সত্ত্বেও রায়ের আগে তারা নীরব থেকেছে। এ জন্য তখনই আমাদের মধ্যে সন্দেহ হয়েছিল যে, কোনো একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আজ এই মামলার অপেক্ষমাণ রায় ঘোষণা করার তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা নিজামী অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে আজ ট্রাইব্যুনালে নেওয়া সম্ভব নয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়।
এরপর এ বিষয়ে শুনানি শেষে তৃতীয় দফায় মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখার আদেশ দেন বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গণজাগরণ মঞ্চের এই নেতা বলেন, অবশ্যই এটা ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে আমরা কোনো রায় পাচ্ছি না। বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ সঠিক বিচার পাবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু তা হয়নি।
নিজামীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আজ সকাল ১০টার পর থেকে শাহবাগে অবস্থান নেয় গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকার সমর্থক অংশ। একই দাবিতে গতকাল সন্ধ্যায় এই অংশটি শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। গতকাল রাত আটটার দিকে নিজামীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। কারাগারে নিজামী ‘অসুস্থ’ হওয়ায় তাঁকে আজ ট্রাইব্যুনালে আনা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আজ তৃতীয় দফায় মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখলেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ২০১২ সালের ২৮ মে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত বছরের ১৩ নভেম্বর মামলাটি প্রথম দফায় রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। রায় ঘোষণার আগেই ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল-১-এর তত্কালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর।
৫৩ দিন পর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ দ্বিতীয় দফায় মামলার সমাপনী যুক্তি শোনেন। ২৪ মার্চ মামলাটি দ্বিতীয় দফায় রায়ের অপেক্ষায় রাখা হয়। গতকাল সোমবার বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ আদেশে বলেন, মঙ্গলবার নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন ছাড়াও নিজামীর বিরুদ্ধে মামলাটিতে দীর্ঘসূত্রতার আরও কারণ আছে। এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণই চলেছে প্রায় দেড় বছর। এ ছাড়া নিজামী ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি হওয়ায় তাঁকে সপ্তাহে দুই দিন চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হতো। এ জন্যও এই মামলার কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়। গত ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে নিজামীসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
১৯৪৩ সালে সাঁথিয়ার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী নিজামী একাত্তরে নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের (জামায়াতের তত্কালীন ছাত্র সংগঠন, বর্তমানে ইসলামী ছাত্রশিবির) সভাপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, তিনি একাত্তরের কুখ্যাত গুপ্তঘাতক বাহিনী আলবদরের প্রধান ছিলেন। নিজামীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মতো ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, একাত্তরে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার দুটি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা বা রাজধানীর নাখালপাড়ায় পুরাতন এমপি হোস্টেলে আটক মুক্তিযোদ্ধা রুমী, বদি, জালাল, সুরকার আলতাফ মাহমুদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজামীর সংশ্লিষ্টতা ছিল। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজে স্থাপিত রাজাকার-আলবদরের ক্যাম্পে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের যে নীলনকশা বাস্তবায়িত হয়, তার সঙ্গে নিজামীর সম্পৃক্ততা ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, এসব অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে পেরেছে, একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃত্বের জন্য নিজামীর দায়ও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে আসামিপক্ষের দাবি, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা এসব অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয়নি। এ জন্য নিজামীকে খালাস দেওয়া উচিত।