এস এম আববাস: দেশে বর্তমানে ৭৫ লাখ পরিবার দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে ৫০ লাখ পরিবারকে ২০১৭ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত করা হবে সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে।
বাকি ২৫ লাখ পরিবারকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পভূক্ত করা হবে। তবে ২০১৭ সালের পর দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম চালানো হবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে। প্রকল্পের আওতায় দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকই চালাবে এ কার্যক্রম। এভাবে ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী সব মানুষের স্থায়ী পুঁজি গঠন ও জীবিকা নিশ্চিত করা হবে। একটি বাড়ি একটি খামার জাতীয় প্রকল্পের সর্বশেষ সারসংক্ষেপ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশে কৃষি পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৫০ লাখ ৮৯ হাজার যা মোট জনসংখ্যার ৫৩.৫৭ শতাংশ। এ পরিবারগুলো নিজ উদ্যোগে তাদের নিজেদের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করার সাথে সাথে বাড়তি যোগান দেয় অকৃষি খাতে জীবন নির্বাহ করা ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার পরিবারের। যা আমাদের মোট জনসংখ্যার ৪৬.৪৩ শতাংশ। দেশের আপামর মানুষের খাদ্য পুষ্টির নীরব যোগনদাতা কৃষক। আর এই কৃষকদের একটি বড় অংশ এখন দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। কৃষি শ্রমিক হিসেবে টিকে থাকার চেষ্ঠা চালাচ্ছে জীবনের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে। সে কারণে বিগত আওয়ামী শাসনামলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ঘোষণা দেন।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটিকে বাস্তবে রূপ দিতে এর আওতায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন করে স্থায়ীভাবে মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা হাতে নেয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে গত ২ জুলাই জাতীয় সংসদে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন, ২০১৪ জাতীয় সংসদে পাস করা হয়।
প্রকল্পের লক্ষ্য
একটি বাড়ি একটি খামার জাতীয় প্রকল্পের পরিচালক অতিরিক্ত সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সর্বশেষ সারসংক্ষেপে বলা হয়, ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী সব মানুষের জন্য স্থায়ী পুঁজি গঠন ও তাদের জীবিকা নিশ্চিত করা হবে।
দাদন ব্যবসায়ী, সুদখোর এনজিও তথা মাইক্রোক্রেডিট নামক নব্য শোষণ থেকে দরিদ্র জনগণকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করা হবে। সরকারের দেওয়া বোনাস ও ঘুর্ণায়মান তহবিল প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমে দেশের পাঁচ কোটি জনগণকে সম্পৃক্ত করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
লক্ষ্য অর্জনের বিবেচ্য
দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী দেশের ৭৫ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করা, দেশে ৫০ শতাংশ জমির মালিক এক কোটি পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত করা।
লক্ষ্য অর্জন
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৭ হাজার ৩০০ গ্রামের ১০ লাখ ৩৮ হাজার পরিবারকে প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে। এক হাজার ৩৩২ কোটি টাকার তহবিল সৃষ্টি ও ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ৬ লাখ ৮০ হাজার পরিবারকে কৃষি ও অকৃষি জীবিকায়ন কার্যক্রম গ্রহণ।
গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা ৬ লাখ ৮০ হাজার পরিবারের জীবিকায়ন কার্যক্রমের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ পরিবার সঠিকভাবে অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এই বিনিয়োগের শতভাগই আয় বর্ধক কাজে ব্যয় করা সম্ভব হবে। এ পর্যায়ে বরাদ্দ ১ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিগত সময়ের ব্যয় না হওয়া ২৬০ কোটি টাকা এ বছর ব্যয় করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে অতিরিক্ত সাড়ে ২৩ হাজার গ্রামের ১৪ লাখ ২০ হাজার পরিবারকে প্রকল্পভুক্ত করা হবে। ইউনিয়নভিত্তিক মাঠ সহকারী ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে দারিদ্র্য বিমোচন করা হবে। এ পর্যায়ে ব্যয় বরাদ্দ প্রয়োজন হবে ১ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।
তৃতীয় পর্যায়ে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের সব ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে দু’টি করে গ্রামে প্রকল্প কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। এতে ২০১৭ সালের মধ্যে মোট ৮১ হাজার গ্রামের ৫০ লাখ পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করা হবে। ব্যয় বরাদ্দ প্রয়োজন হবে ১০০ কোটি টাকা।
চতুর্থ পর্যায়ে ৭৫ লাখ পরিবারের মধ্যে বাকি ২৫ লাখ পরিবার ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পভুক্ত করে দারিদ্র্য বিমোচনের পথে একধাপ এগিয়ে নেওয়া হবে। এ পর্যায়ে ব্যয় বরাদ্দ প্রয়োজন হবে ১০০ কোটি টাকা।
পঞ্চম পর্যায়ে দারিদ্র কোটা শূন্যে পৌঁছাতে ৮১ হাজার গ্রামের ৭৫ লাখ পরিবারকে প্রকল্পভুক্তির পর ওইসব গ্রামে আর কোনো দরিদ্র্য পরিবার থাকলে প্রকল্পের ইউনিয়ন মাঠকর্মীর মাধ্যমে চিহ্নিত করে তাদেরকে সমিতিভুক্ত করার কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এ পর্যায়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বাস্তবায়িত হবে। তাই ৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকার উপর আর কোনো অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন হবে না। ব্যাংক নিজেই এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবে। ২০১৭ সাল থেকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অধীনে দেশের সর্বশেষ গরিব ব্যক্তির দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।