বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৯

যায় দিন ভাল যায়

যায় দিন ভাল যায়

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সাজেদুল হক: দৈনিক আজকের কাগজের বিজ্ঞাপনটির কথা কি আপনার মনে আছে? আমাদের হাত বাধা নেই, আমাদের চোখ খোলা। চোখ খোলা থাকলে আপনি নিশ্চিতভাবেই অনুভব করছেন গভীর এক খাদের দিকে যাত্রা শুরু করেছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। রাজনীতির আকাশ ক্রমশ মেঘাচ্ছন্ন। যদিও গত দেড় মাসের তুলনায় গত সপ্তাহটি ছিল কিছুটা শান্ত। তবে ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলছে, এটি আসলে সিডরের পূর্বাভাস মাত্র। ঝড়ের আগে যে গুমোট আবহাওয়া থাকে আমরা আসলে সে সময়ই অতিক্রম করছি এখন। ৫ই ফেব্রুয়ারি শাহবাগ অভ্যুত্থানের শুরুর দিন থেকে প্রতিদিনই আসলে কিছু না কিছু ঘটছে। সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে সংবাদকর্মীদেরই। ঘটনা দূর্ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে একেবারে অন্দরমহলে। ফটিকছড়ির বার্তা বুঝার চেষ্টা করছেন সবাই।

তবে এটা নিশ্চিত সামনের কিছু দিন, ঠিক সুনির্দিষ্ট করে বললে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে রাজনীতির চাকা ঘুরবে তিনটি সুনির্দিষ্ট ইস্যুকে কেন্দ্র করে। এসময়ে ট্রাইব্যুনালে রায় হতে পারে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম এবং বর্তমান সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে। একইসময়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হতে পারে দলটির আরেক নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড প্রশ্নে। যাকে জামায়াতে সবচেয়ে জনপ্রিয় মনে করা হয়। ট্রাইব্যুনালে তার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর সহিংসতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ সৃষ্টি হয়। নেতাদের চূড়ান্ত বিচারের চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করবে জামায়াত-শিবির। নতুন পাওয়ার হাউজ হেফাজতে ইসলামের ৫ই মে’র ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে এরইমধ্যে সরকারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। উপরে উপরে সরকারি দলের নেতারা কড়া বক্তব্য দিলেও ভেতরে ভেতরে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে হেফাজতের সঙ্গে। হাটহাজারিতে গোয়েন্দা সদস্যদের উপস্থিতিও লক্ষণীয়। নিজ দলের নেতাদের মুক্তি আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার  ইস্যুতে আরও কঠোর আন্দোলনে নামছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। এ অবস্থায় সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, উত্তেজনা আর অনিশ্চিয়তায় ঠাসা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য অবিচল। বরাবরের মতই হার্ডলাইনে সরকার। ভিন্নমত ও দলের পুরোটাই এখন কাশিমপুর আর নাজিমউদ্দিন রোডে। অশালীন কৌশলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আমার দেশ। আবারও নির্যাতন আর রিমান্ডের কবলে মাহমুদুর রহমান। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নিজের অধীনে নির্বাচনে পুরোপুরি মনস্থির করেছেন শেখ হাসিনা। সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যোগ দিতে একপায়ে খাঁড়া। তৃণমূল বিএনপি জাতীয় কোন দল গজালেও অবাক হবেন না। জামায়াতকে নির্বাচনে নিতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা হবে। তবে নাটকীয়ভাবে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক জাতীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মেনেও নিতে পারেন।  সে নির্বাচনে খালেদা-তারেকসহ বিরোধীজোটের শীর্ষ নেতাদের অংশ নেয়ার পথ বন্ধ করা হবে। আদালতের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত হবেন তারা। তৃতীয় বিকল্প জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতার মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়া। যে ঘটনা চতুর্থ সংশোধনীর সময় ঘটেছিল। এখনও জরুরি অবস্থা জারির তারিখ নিয়ে নানান জায়গায় আলোচনা হচ্ছে।

পুরনো প্রবাদ বাক্যটিই আবার ফিরে এসেছে ‘যায় দিন ভাল যায়’। তবে হতাশার মাঝে আশার কথাও আছে। ১০ মুসলিম দেশের কূটনীতিকরা সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা কথা বলেছেন বিরোধীনেত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। আরব কূটনীতিকরা এ উদ্যোগ একেবারেই বিরল। টিআইবিও সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে। সবচেয়ে বড়কথা দুর্যোগ বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। প্রাকৃতিক আর রাজনৈতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই বেড়ে উঠেছেন এ অঞ্চলের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ এতটাই আশাবাদী যে মেয়েটি যখন নতুন প্রেমিকের হাত ধরে চলে যায় তখনও পুরনো প্রেমিক বলে থাকেন, ‘তুমি সারাজীবন আমারই থাকবে।’ জার্মান দার্শনিক ও কবি গ্যেতে তার ফাউস্টে লিখেছেন, ‘আমি বসে বসে প্রতীক্ষা করি। আর আমার চারদিকে অশান্ত কালের চাকা আবর্তিত হয়। যে অসম্ভবকে কামনা করে আমি তাকে ভালোবাসি।’ আপাত শান্তি অসম্ভব মনে হচ্ছে। তবুও আমারা শান্তি চাই। শান্তিই আমাদের একমাত্র কামনা। আমাদের জন্য নির্ভরতার বানীও আছে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যদি মুমিন হও, তোমরা হতাশ হয়ো না। ’




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025