স্বদেশ জুড়ে ডেস্ক: বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা অব্যাহত থাকলে রপ্তানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্পের অস্তিত্ব ধরে রাখা অসম্ভব হবে বলে মনে করছেন পোশাক শিল্পের মালিকরা। তারা জানান, গত ৩০ বছরে বস্ত্রখাত এমন ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়নি। হরতালে দৈনিক উৎপাদন ব্যাহত হয় ২০০ কোটি টাকা। আজ ‘রপ্তানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্পে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কার কথা জানান পোশাক শিল্পের সর্ববৃহৎ তিন সংগঠন বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার মেনুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (বিটিএমইএ)।
এ সময় তিন সংগঠনের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ-র সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, বিটিএমইএ-র সভাপতি জাহাঙ্গির আল আমীন, বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি মো. হাতেম, বিজিএমইএ সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি, সাবেক সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভপাতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীদের বাইরের খোলসটাই দেখা যায়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভেতরে কি পরিমাণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা রাজনীতিবিদরা দেখতে পারছেন না।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এ অবস্থায় লাগাতার হরতাল ও চলমান সঙ্কটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত ৩০ বছরে বস্ত্রখাত এমন ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়নি। তিনি আরও বলেন, পোশাক শিল্পে চলতি বছরের মার্চে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ শতাংশ। তবে এ সময়ে রপ্তানি হয়েছে গত বছরের জুন-জুলাইয়ের আদেশ অনুযায়ী। কিন্তু জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি থেকে অন্য চিত্র দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আর কোন নতুন আদেশ পাওয়া যাবে না। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি মূল্য কমেছে। মজুরি ১০ শতাংশ, বিদ্যুৎ খরচ ৩৫ শতাংশ, পরিবহন ব্যয় ১২ শতাংশ যা সাম্প্রতিক হরতালের কারণে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, ব্যাংক সুদ ৪০ শতাংশ এবং সোর্স টেক্স বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট উৎপাদন খরচ বেড়েছে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ।
অন্যদিকে জানুয়ারি-২০১২ সালে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪.৪০ টাকা। যা বর্তমানে ৭৭.২০ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য ৮.৫৩ শতাংশ কমেছে। তিনি বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আমরা যখন সামনে এগুনোর চেষ্টা করছি। ঠিক তখন আমাদের সামনে আর্বিভূত হয়েছে হরতাল নামক এক বিশাল দানবের। রাজনৈতিক চাপের কারণে আজ আমরা উদ্যোক্তারা ক্রেতাদের করুণার পাত্রে পরিণত হয়েছি।
হরতালে আমাদের সরাসরি কোন সম্পৃক্ততা না থাকলেও চরম মূল্য দিতে হচ্ছে এ শিল্পকে। ক্রেতারা ইচ্ছামতো অর্ডার বাতিল করছেন। সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারলে ডিসকাউন্ট দিতে হচ্ছে। সমুদ্রপথে শিপমেন্ট না করতে পারলে এয়ারফ্রেইট করতে হচ্ছে। যেখানে সমুদ্রপথে এক কেজি পণ্য পাঠাতে খরচ হয় ৩০ সেন্ট, সেখানে আকাশপথে পাঠাতে খরচ হয় ৪.১৫ ডলার। শুধুমাত্র জানুয়ারি-মার্চ ২০১৩ সময়ে হরতালের কারণে স্বাভাবিকের চাইতে প্রায় ৩৯০ কোটি টাকার এয়ারফ্রেইট বাবদ লোকসান দিতে হয়েছে। শুধু তাই না এ পরিমাণ টাকা বৈদেশিক মুদ্রার আকারে দেশ থেকে বেরিয়ে গেছে।
Leave a Reply