ঝরনা বেগম নামটি শুনলেই মনে পড়বে মাথা থেঁতলে যাওয়া পুলিশ সদস্যকে বাঁচানো সেই নারীর কথা। ঝরনা বেগম রাজশাহী সিটি করপোরেশনে মাস্টাররোলে অফিস সহকারীর (পিয়ন) চাকরি পেয়েছেন। গতকাল সোমবার তিনি কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। বেতন কত, তা ঝরনা বেগম জানেন না। তবে শুনেছেন, তিনি পাঁচ হাজার টাকা পাবেন।
ঝরনা বেগম নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অসুস্থ থাকায় আগে যে বিউটি পারলারে কাজ করতেন, সে কাজ চলে গিয়েছিল। অন্যদিকে স্বামী পাঁচ বছর ধরে তাঁর ও দুই সন্তানের কোনো খরচ দিচ্ছেন না। এ অবস্থায় চাকরিটি পাওয়ায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এইচ এম খায়রুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঝরনা বেগম।
হরতাল চলাকালে ১ এপ্রিল রাজশাহীতে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ইট দিয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের মাথা থেঁতলে দেন, কেড়ে নেন অস্ত্র। সে সময় কেউ ওই পুলিশ সদস্যের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাননি। ঝরনা বেগম এগিয়ে গিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের থেঁতলে যাওয়া মাথা চেপে ধরেন। কয়েকজনের সহায়তায় তিনি জাহাঙ্গীর আলমকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঝরনা বেগমের এ ধরনের সাহসিকতার জন্য সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। রাজশাহী পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাহমাখদুম থানার একটি কোয়ার্টারে থাকারও সুযোগ পেয়েছেন ঝরনা বেগম।
দুই সন্তানের জননী ঝরনার বাড়ি পাবনায়। তবে রাজশাহীতে নানির বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও সমাজ ও সন্তানদের কথা চিন্তা করে ঝরনা স্বামীকে তালাক দেননি। গত পাঁচ বছরে স্বামী দুই হাজার ১০০ টাকা দিয়েছেন সন্তানদের। ছয় মাস বা এক বছরে একবার সন্তানদের দেখতে যান। গত পাঁচ বছর ঝরনার সংসারের হাল ধরেছেন তাঁর মা। ঝরনা বেগমের ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে। খরচের কথা চিন্তা করে এত দিন মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করেননি। তবে এখন মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাবেন বলে জানান। ঝরনার স্বামী ঝরনার অনুমতি ছাড়াই দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।
Leave a Reply