মোহাম্মদ আলী শিপন: সিলেটের বিশ্বনাথে গ্যাস ও আনুসঙ্গিক জিনিসপত্রের অভাবে গড়ে উঠতে পারছে না কোন উৎপাদনমুখী কল-কারখানা। এদিকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রবাসীরা কারিগরি বা অন্য কোন উন্নয়নমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারছেন না। ফলে প্রবাসীরা টাকা বিনিয়োগ করছেন অট্টালিকা সাদৃশ্যপূর্ণ বাসা বাড়ী, মার্কেট এবং কমিউনিটি সেন্টার তৈরীতে। অনেকের আবার কোটি টাকা পড়ে আছে বিভিন্ন ব্যাংকে।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায় উপজেলা প্রবাসীদের পাঠানো প্রায় দুই শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে অলস পড়ে আছে। বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রবাসীদের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। কারো কারো মতে আরো বেশী। এসব প্রবাসীর বৃহৎ একটি অংশের বসবাস স্বপ্নের দেশ লন্ডনে।
জানা যায়, বিশ্বনাথে উৎপাদনমুখী কল-কারখানা গড়ে না উঠার প্রধান সমস্যা হচ্ছে গ্যাস। এ ছাড়া নিয়মিত বিদ্যুতের লোডশেডিং, শ্রমের উচ্চ মূল্য, প্রশিক্ষন প্রাপ্তদের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিশীলতাও রয়েছে। আর তাই বিশ্বনাথের প্রবাসীদের পাঠানো টাকার বেশির ভাগই বাড়ি নির্মাণ, ফ্ল্যাট বা জমি কেনায় ব্যয় হচ্ছে। উপজেলার আনাচে কানাচে কোটি টাকা মূল্যের অসংখ্য বাড়ী রয়েছে। কাছাকাছি সিলেট শহরেও অনেকে অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন। উপজেলার চানসির কাপন, কারিকোনা, দশঘর, রাজনগরসহ অনেক গ্রামে সুদৃশ্য অট্রালিকার পাশাপাশি সুইমিংপুল দেখা গেলেও জানা যায় প্রবাসীদের নির্মিত এসব অট্টালিকার বাসিন্দারা বছরের বেশীর ভাগ সময়ই দেশের বাইরে থাকেন। প্রবাসীদের মধ্যে সুরম্য বাড়ী তৈরী নিয়ে চলছে নীরব প্রতিযোগীতা। উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও দশঘর ইউনিয়নে প্রবাসী সংখ্যা বেশি থাকায় এখানে আলিশান বাড়ির সংখ্যা শতাধিক। যে সব বাড়ি বানানো হয়েছে সেগুলোর গড় খরচ প্রায় ১ থেকে ২ কোটি টাকা। ইদানিং অনেক প্রবাসী তাদের টাকা শিক্ষার প্রসারে ব্যয় করছেন।
তবে আশার কথা হচ্ছে ইতিমধ্যে প্রবাসীদের কথা মাথায় রেখে উপজেলা সদরের দুটি শেয়ার বিপননকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শেয়ার বিপননকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা মনে করেন উপজেলার বিভিন্ন ব্যাংকে অচল পড়ে থাকা কয়েকশ কোটি টাকা প্রবাসীরা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করবেন। এতে দেশের টেকসই অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকা আরো প্রাধান্য পাবে। অভিজ্ঞজনরা মনে করেন, বিশ্বনাথে বিনিয়োগ না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতার অভাব, প্রবাসীদের ঝুঁকি নেওয়ার অনীহা, বিনিয়োগ বিষয়য়ে জ্ঞানের অভাব এবং সর্বোপরী বিনিয়োগের টাকা ফেরৎ আসার অনিশ্চয়তা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ইত্যাদি।
উপজেলার প্রবাসী কামাল আহমদ, মখলিছ আলী, সেবুল মিয়ার সাথে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, যারা প্রবাসে থাকেন তাদের অনেকেরই অতীত জীবন কেটেছে আর্থিক কষ্টে। প্রবাসে গিয়ে তারা পাউণ্ড-ডলার আয় করে নিজের মনের মতো কিছু করতে চান নিজ জন্মভূমিতে। গ্যাসসহ নানান সমস্যায় থাকায় অনেকই বিশাল বাড়ির নির্মাণ করছেন।
Leave a Reply