স্বদেশ জুড়ে ডেস্ক: ইতিহাসের ভয়াবহ স্বাক্ষী সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭৭ জনে দাড়িয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যে ছয়টা পর্যন্ত ২৫০ জনের লাশ তালিকাভুক্ত করেছে পুলিশ। লাশগুলো সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।। হাসপাতালে রাখা লাশের নাম-পরিচয় দেওয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ২২৬ জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে আরো ২২টি লাশ।
অস্থায়ীভাবে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী- উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাত আটটা পর্যন্ত ২০৫ জনের লাশ তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার দুই দিন পরও ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়ে আছে বহু লাশের পাশাপাশি শত শত জীবিত মানুষ। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। মর্মান্তিক ও দুর্ঘটনায় দেড় হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভোর হতে না হতেই নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে ভিড় করেছেন বহু মানুষ। পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে আটকে পড়া মানুষজনের চিত্কার শোনা যাচ্ছে। অনেক নারী-পুরুষ তাদের বের করার জন্য আকুতি জানিয়ে চিতকার করছেন। অনেকে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টের কথা বলছেন। কিন্তু ইট, রড আর কংক্রিটের স্তূপে এমনভাবে তারা আটকে রয়েছেন যে উদ্ধারকর্মীরা কোনো নিরাপদ রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে ঠিক কত লোক আটকে রয়েছেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
যেহেতু ভবনটিতে কয়েকটি পোশাক কারখানা ছিল, তাই আটকে থাকা লোকজনের সংখ্যা কয়েকশ’ হতে পারে বলে উদ্ধারকর্মীরা ধারণা করছেন। মঙ্গলবার ফাটল ধরার পর ভবনটি খালি করে ফেলা হলেও বুধবার সকালে ধসে পড়ে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার নয় তলা রানা প্লাজা। স্থানীয় যুবলীগ নেতার মালিকানাধীন ভবনটির চারটি তলায় পাঁচটি পোশাক কারখানায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক ঘটনার সময় কাজ করছিলেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং সেনা সদস্যরা গত রাতভর উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন এবং স্থানীয় বহু মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। উদ্ধারকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের এক কর্মকর্তা জানান, আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার না করা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। এতে ১৫ দিন হোক বা তা চেয়ে বেশিও হোক। সেনাবাহিনী এখানেই থাকবে।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেছেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ইমারত নির্মাণের নিয়ম কানুন যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি বলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।
গাজীপুরের গার্মেন্টস শ্রমিকরা সাভারে ভবন ধসে শ্রমিক হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া চৌরাস্তা ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোণাবাড়ি শিল্পাঞ্চল এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রায় অর্ধশত গার্মেন্টসের কয়েক হাজার শ্রমিক ভবন ধসের নামে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ-মিছিল করছে। শ্রমিকদের বিক্ষুব্ধ অবস্থা দেখে মালিকপক্ষ বেশ কয়েকটি গার্মেন্টসে ছুটি ঘোষণা করেছে।
Leave a Reply