সাভারে বহুতল ভবন ধসের ঘটনায় শোকাহত পুরো জাতি। বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় শোক। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার বিষয়টি পুরো বিশ্বকেও করেছে শোকাহত। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও পড়েছে সে শোকের ছায়া। বিবিসি, আল-জাজিরা, সিএনএন, দি গার্ডিয়ান, গাল্ফ নিউজ, দি নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্সের মতো বহুল প্রচারিত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে সাভারে ভবন ধসের দুর্ঘটনার সংবাদ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করা হয়।
নিয়ম না মেনে বাংলাদেশে ভবন নির্মাণ হচ্ছে উল্লেখ করে ‘বাংলাদেশে ভবন ধসে ৮০ জন মৃত’ শিরোনামে লেখা বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ভবন ধস প্রায়ই হয়। দেশটিতে নিয়ম না মেনেই অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী তাহসিন মাহমুদের বরাত দিয়ে বলা হয়, এখানকার দৃশ্য যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা। আহতদের জন্য রক্ত দিতে ইতিমধ্যে সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দুর্ঘটনা দেশটিতে পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে আবার প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। নভেম্বর মাসে অগ্নিকান্ডের পর পশ্চিমা ক্রেতারা বাংলাদেশের কারখানায় নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন।এ যেন শোক ও মাতমের করুণ দৃশ্য উল্লেখ করে ‘বাংলাদেশে ভবন ধসে রেকর্ডসংখ্যক মানুষের মৃত্যু’ শিরোনামে প্রকাশিত আল-জাজিরা’র প্রতিবেদনে বলা হয়, শত শত লোক ভবনের নিচে আটকে আছে। যারা এখনো উদ্ধার হয়নি। চারপাশে এ যেন এক শোক ও মাতমের করুণ দৃশ্য।
আগাম সতর্কতাকেও অবজ্ঞা করা হয়েছে বলে মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে বলা হয়, ভবনে ফাটল দেখা দিলেও তা অবজ্ঞা করে ভবনটির মালিক কারখানার শ্রমিকদের কাজ থেকে বিরত রাখেনি।নভেম্বর মাসে ঢাকার একটি কারখানায় অগ্নিকান্ডে ১১২ জনের মৃত্যুর পর এটি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় দুর্যোগ উল্লেখ করে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বরের অগ্নিকান্ডের পর এটি দেশটির পোশাক শিল্পে বড় দুর্যোগ। আটতলা ভবন ধসে ৭০ জনের মতো মৃত ও শত শত মানুষ আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে সাড়ে চার হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে। যেখানে প্রচুর শ্রমিক কাজ করে। পোশাক শিল্প থেকে দেশটির রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ অর্জিত হয়ে থাকে। ‘পুরো পৃথিবীই যেন কাঁপছিল আর এরপরই সব অন্ধকার’- এরকম উদ্ধৃতি দিয়ে দিলারা বেগম নামের এক ভুক্তভোগী গার্মেন্টস কর্মীর বরাত দিয়ে দি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনে ফাটল ধরা পড়ার পরও সকালে ভবন নিরাপদ আছে বলে সুপারভাইজার আমাদের কাজে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশে ভবনের নিরাপত্তা এখনো উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করে ‘বাংলাদেশে ভবন ধসে ৭০ জন মৃত’ শিরোনামে প্রকাশিত দি নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ভবনের নিরাপত্তা এখনো উদ্বেগের বিষয়। অপরিকল্পিত কাঠামোয় নির্মিত অনেক ভবনই তদারকির বাইরে থেকে যায়। ২০০৫ সালে স্পেকট্রামস কারখানায় ভবন ধসে ৬৪ গার্মেন্টস কর্মী মারা যায়। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পোশাক শিল্প অগ্নিকান্ড ও দুর্ঘটনায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে ‘বাংলাদেশে কারখানা ধসে প্রায় শতাধিক লোকের মৃত্যু’ শিরোনামে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তার উন্নতি না ঘটায় একের পর এক অগ্নিকান্ড ও দুর্ঘটনায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পোশাক শিল্প।
Leave a Reply