গোলাম মাওলা রনি : নিরো মানে সেই নিরো-রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। জুলিও-ক্লদিয়ান রাজতন্ত্রের সর্বশেষ রোমান সম্রাট ছিলেন তিনি। তাকে জুলিও-ক্লদিয়ান রাজতন্ত্রের শেষ প্রতিভুও বলা হয়ে থাকে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি সম্রাট হলেন ৫৪ খ্রিষ্টাব্দে। আত্মহত্যা করে মারা যান ৬৮ খ্রিষ্টাব্দে।
বহুলভাবে প্রচলিত উপকথা-আগুন লেগে রোম যখন পুড়ছিল, তিনি না-কী তখন বাসায় বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন! অসম্ভব অত্যাচারি আর পাগলাটে স্বভাবের মানুষ ছিলেন। সম্রাট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করার পরপরই আপন মাকে হত্যা করে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। পৃথিবীর খারাপ রাজার কথা বললেই তার নাম আসে। অন্যদিকে, নির্মমতা নিয়ে চরম উপহাস বুঝাতেই নিরোর বাঁশির উদাহরণ টানা হয়ে আসছে যুগ থেকে যুগান্তরে।
তো সেই নিরোর বাঁশি নাকি হারিয়ে গিয়েছিল এবং তা পাওয়া গেছে ঢাকায়- আমার সঙ্গে মশকরা করে বললেন প্রবাসী এক পন্ডিত ব্যাক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী অধ্যাপক।
প্রশ্ন করলাম- কিন্তু বাঁশিটি কার কাছে এবং বাজায় কে?
তিনি বললেন- বাঁশিটি ঢাকা চট্টগ্রাম ঘোরা-ফেরা করছে। কারো হাতে এখনও ধরা দেয় নি। কিন্তু অনেকেই তা বাজাতে চাচ্ছে স্বেচ্ছায় এবং বাজাবার জন্য রীতিমতো টানাটানি শুরু করেছে।
সেটা আবার কেমন? -আমার পাল্টা প্রশ্ন।
ভদ্রলোক মনে-প্রাণে বঙ্গবন্ধুর অনুরক্ত এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একনিষ্ঠ সমর্থক। আমার সন্দেহ দূর করার জন্য নেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ট কতগুলো ছবিও আমাকে দেখালেন।
তিনি মনে করেন- সরকারের বাম ঘরানার নেতারা সর্বনাশের বাঁশিটি নিয়ে টানাটানি করছেন। পুরো জাতির জন্য সেটা নিরোর বাঁশি আর আওয়ামী লীগের জন্য সেটা হ্যামেলিয়নের বাঁশি। হ্যামেলিয়নের বাঁশিওয়ালার মতো সুর তুলে তারা দল ও সরকারকে এক মহা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেই ধ্বংস থেকে আর কেউ ফিরবে না, অন্তত: বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা, ভাবে ফেরেনি হ্যামেলিয়নের শিশুরা। ৭৫ সালকে যদি আনফিনিসড রেভ্যূলুশন বলা হয়, তবে এবার তা হবে ফিনিসড রেভ্যূলুশন।
অন্যদিকে বিএনপিও সর্বনাশের বাঁশিতে সুর তুলে পুরো জাতিকে ডুবিয়ে মারার এবং পুড়িয়ে মারার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। জামাত ও হেফাজতে ইসলাম ঢোল-ডগর, কাশি, ডুনডুনি এবং তানপুরা বাজিয়ে বাঁশিওয়ালাদের ধ্বংসকর্মে প্রেরণা যোগাচ্ছে। আর অন্যদিকে চেষ্টা করছে বাদ্য বাজনার শব্দলোকের তাণ্ডবের মধ্যে কোনোমতে বাঁশিটি ছিনিয়ে নেওয়া যায় কী-না?
এদিকে আবার আরেক নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের বীর সেনানি উপাধিপ্রাপ্ত গণজাগরণ মঞ্চের কুশিলবরা বাঁশিওয়ালাদের হাত-পায়ে তেল মাখিয়ে বাঁশি দখলের চেষ্টা করছে আর মুরগি চোরেরা সুন্দর করে চুলকিয়ে চুলকিয়ে ধ্বংস-ধ্বণি আরো সূতীব্র করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বক্তার বক্তব্য শুনলাম কিন্তু মন্তব্য করলাম না। অনেক কষ্ট করে আমাকে দাওয়াত করে এনেছেন। বহু পদের রন্ধন করে আমাকে আপ্যায়ন করলেন। বিনিময়ে একটু কথা শুনলাম। কাজেই চুপ করে থাকলাম এবং ভাবলাম- চুপচাপ থেকে চোখ বন্ধ রাখলেই কি প্রলয় বন্ধ হবে।
Leave a Reply