শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:২৬

সোহেল রানা উপাখ্যান

সোহেল রানা উপাখ্যান

সাভারে ভবনধসের ঘটনায় গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা আপাতত সন্তোষজনক। দ্রুত গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হবেন। কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, কে কোন অপরাধে এবং কী ধরনের শাস্তি পাবেন এবং বিচারের রায় কবে পাওয়া যাবে। কারণ, দ্রুত গ্রেপ্তার ও দ্রুত রিমান্ড মঞ্জুর এই দুটির কোনোটিই দ্রুত বিচারের নিশ্চয়তা দেয় না।

সাভারের ভবনধস কোনো আটপৌরে দুর্যোগ নয়, এটা আক্ষরিক অর্থেই ডেকে এনে শত শত প্রাণ হত্যা। ভয়ংকর মানবতাবিরোধী অপরাধ। বিরোধী দল সুষ্ঠু বিচার বিঘ্নের যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে, তার নিশ্চয় ভিত্তি আছে। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানে তাদের দাবি তোলাও যুক্তিসংগত। কিন্তু যে মুহূর্তে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিয়ে বিশ্ববাজারে একটি নেতিবাচক প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তখন সনাতনী হরতাল ডেকে পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করা গ্রহণযোগ্য নয়। বিএনপিসহ সব মহলেরই উচিত হবে, এমন কিছু করা থেকে সাময়িকভাবে হলেও বিরত থাকা, যা দেশকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।

অন্যদিকে অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষের বার্তা সরকারকে অবশ্যই পড়তে হবে। সহিংস কর্মসূচি পরিত্যাজ্য হলেও পোশাকশ্রমিকদের গভীর মনোবেদনা ও রক্তক্ষরণ বোধগম্য। সরকারি মহল থেকে এ পর্যন্ত দ্রুত বিচার আইনে বিচার সম্পন্ন করার ঘোষণা পাওয়া যায়নি। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন লাগবে। সাভারে রানা প্লাজা বিধ্বস্ত হওয়ার পর জনগণের মধ্যে এ ধারণা সৃষ্টি হয়নি যে, আগামী ১২০ দিনের মধ্যে রানা প্লাজা ধসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আইনের স্বাভাবিক গতিতে শাস্তি পাবেন। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাঁদের অপরাধের ধরন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করা নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন আছে।

সোহেল রানার দল-সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এর আগে বলেছেন, কমিটিতে তাঁর নাম নেই। এখন যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। অথচ ক্ষমতাসীন দলের সাংসদের বিরুদ্ধে রানাকে মদদদানে নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। সে কারণে উপযুক্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণও জরুরি। অথচ সাভার যুবলীগের বিবৃতিতে এখন রানা নামের কেউ তাদের ছিল বলেই স্বীকারই করা হচ্ছে না। স্পষ্টতই আওয়ামী লীগের এই পলায়নপরতা জনমনে, বিশেষ করে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে। রানা সন্দেহাতীতভাবে তাঁর দলীয় পরিচয়ের অপব্যবহার করেছেন। এর আগে পাওয়া বিবরণ থেকে মনে হয়েছে, রানা প্লাজার মালিক ও কারখানাগুলোর মালিকেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সমন্বয়ে অনিচ্ছুক শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছিলেন। সাভার ট্র্যাজেডির পর সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের উচিত হবে আইনকে প্রভাবিত না করা এবং জনগণের মনে সেই বিশ্বাস সৃষ্টিতে আন্তরিক হওয়া।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024