বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১৯

মুরাদ জং আমার বড় ভাইয়ের মতো

মুরাদ জং আমার বড় ভাইয়ের মতো

/ ১২৭
প্রকাশ কাল: মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৩

সিরাজুল ইসলাম: পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা বলছেন, কারখানা খুলতে  মালিকদের কোন চাপ দেননি তিনি। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুরাদ জংয়ের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। মুরাদ জং আমাকে ছোট ভাই হিসেবে স্নেহ করেন।  তিনি আমার বড় ভাইয়ের মতো। রিমান্ডে নেয়ার আগে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনুতপ্ত রানা নিজের শাস্তি চান। এতগুলো নিরপরাধ লোক মারা যাওয়ার ঘটনা আমিও মানতে পারছি না। ভবনের মালিক যেহেতু আমি, তাই আমার শাস্তি হওয়া উচিত। রিমান্ডে নেয়ার আগে গ্রেপ্তারকৃত রানা ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা জানান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র মানবজমিনকে জানান, রানা বলছেন- আমি ভবনের মালিক হলেও গার্মেন্টের মালিক নই। তাই শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করার কোন সুযোগ আমার নেই। আমি তা করিওনি। গার্মেন্ট খোলা রাখতে আমি মালিকদের কোন চাপ প্রয়োগ করিনি। তারা নিজেরাই শ্রমিকদের কারখানায় আসতে বাধ্য করেছে। অন্যদিকে গ্রেপ্তারকৃত গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন- রানার চাপেই আমরা গার্মেন্ট খোলা রেখেছি। শ্রমিকদের কারখানায় আনতে বাধ্য হয়েছি। ঢাকা জেলার সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, রানা ও গার্মেন্ট মালিকরা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। এসব বক্তব্যের কোনটি সত্য তা জানতে রিমান্ডে রানা ও গার্মেন্ট মালিকদের মুখোমুখি করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, রানা মারাত্মকভাবে মাদকাসক্ত। ফেনসিডিল না খেয়ে সে এক মুহূর্তও থাকতে পারে না। গ্রেপ্তারের পর থেকে সে বারবার ফেনসিডিল চাইছে। আমরা তাকে ফেনসিডিল দিইনি। মাদক না পেয়ে গত ২ দিনে সে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ২৩শে এপ্রিল ভবনে ফাটল ধরার পর স্থানীয় প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বুয়েট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। বুয়েট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরিকল্পনা আমার ছিল। রানা বলেন, ঘটনার দিন সকাল সোয়া ৮টার দিকে প্লাজার সামনে আসি। যুবলীগের কয়েকজন কর্মী আগে থেকেই আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। সেখানে গিয়েই আমি হরতালবিরোধী মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ওই মিছিলে স্থানীয় সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদেরও উপস্থিত থাকার কথা ছিল। পুলিশকে রানা জানায়, ঘটনার দিন সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ দেখি পোশাক শ্রমিকরা চিৎকার করছে। তারা কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ওই সময় আমি তাদের বলি, তোমরা কাজে যাবে কি যাবে না সেটা তোমাদের ব্যাপার। গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে তোমরা অফিস করবে। এই বলে আমি ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে দলীয় কর্মীদের নিয়ে মিটিং করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে ভবন ধসে পড়ে। রানা পুলিশকে জানায়, ভবনে ফাটল দেখার পর কারখানা বন্ধ রাখতে গার্মেন্ট মালিককে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কারখানা মালিকরা আমার কথা শোনেনি।

রিমান্ড: রানাকে ১৫ দিন এবং ইথার টেক্স লিমিটেড-এর মালিক আনিসুর রহমানকে ১২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল রানাকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাকে এক মামলায় ৮ দিন এবং অন্য মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ইথার টেক্স-এর মালিককে দুই মামলায় ২০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত ৬ দিন করে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। অপরদিকে রানার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া দুই সহযোগী শাহ আলম মিঠু এবং অনিলকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে গতকাল ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। পরে আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

রানার পিতা গ্রেপ্তার: রানার পিতা আবদুল খালেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, গতকাল দুপুর ২টা ১০ মিনিটে মগবাজারের আড়ং-এর গলি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি জানান, সাভারের ভবন ধসের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলার আসামি আবদুল খালেক। মামলা দায়েরের পর থেকেই তিনি পালাতক ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি, তিনি মগবাজারে অবস্থান করছেন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে আছেন। শিগগিরই তাকে আদালতে হাজির করে আইনের আওতায় আনা হবে।

গ্রেপ্তার-আটক: ইথার টেক্স লিমিটেডের মালিক আনিসুর রহমানকে রোববার রাত সোয়া ১০টার দিকে রমনা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ফ্যান্টম অ্যাপারেলস ও ফ্যান্টম টেকের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামকে। এর আগে শনিবার দুপুরের দিকে বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির মূল হোতা রানাকে। তার সঙ্গে তার ২ সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয় নিউওয়েব স্টাইল এবং নিউওয়েব অ্যাপারেলস-এর চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান তাপস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক বজলুস সামাদ আদনানকে। শুক্রবার রাতে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাভার পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আলম মিয়াকে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে মহাখালীস্থ মেট্রোপলিটন হাসপাতালের পাশ থেকে ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এহতেশাম হোসেনকে। দুই মামলায় তাপস ও আদনান ৬ দিন করে ১২ দিন এবং ২ পৌরকর্মকর্তা ৪ দিন করে ৮ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। ফ্যান্টম অ্যাপারেলস ও ফ্যান্টম টেকের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ২ মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে আছে। অপরদিকে শুক্রবার রাতে মানিকগঞ্জ থেকে রানার প্রধান সহকারী জাহাঙ্গীরের মা মনোয়ারা, স্ত্রী সুমি এবং রানার ভগ্নিপতি মোমেন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুমি ও মনোয়ারাকে শনিবার ছেড়ে দেয়া হলেও আটক রাখা হয় মোমেন মিয়াকে। গতকাল তাকেও ছেড়ে দেয়া হয়।

পুলিশের বক্তব্য: ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, রানাকে রোববার গভীর রাতে আমাদের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। আদালতে হাজির সংক্রান্ত কাজের কারণে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। তাকে রিমান্ডে আনা হয়েছে। রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। রিমান্ডে থাকা এবং গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আসামিদেরকেও এখন পর্যন্ত ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ হয়নি। তিনি জানান, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ঘটনায় আরও এক গার্মেন্ট মালিকসহ বিভিন্ন গার্মেন্ট-এর এমডি, পিএম, জিএম এবং ইঞ্জিনিয়ারদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে পুলিশ মাঠে রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহিন শাহ পারভেজ বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখন আসামিদের বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। রিমান্ড শেষ হলে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য সাংবাদিকদের জানানো হবে।

সূত্র: মানবজমিন।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
All rights reserved © shirshobindu.com 2023