টিম ওয়ার্সটাল: বাংলাদেশে একটি ভবন ধসে নিহত হয়েছেন কয়েক শ’ মানুষ। এটি বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ এক বিপর্যয়, যা আমাদেরকে অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ধনী দেশগুলোতে আমরা যে নিরাপত্তা ও কাজের মান নিশ্চিত করি তা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ যথেষ্ট যোগ্য নয়। এ বক্তব্যের সঙ্গে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করবেন।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আকতার যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি রাজ্য সফর করছেন আবেদিনকে সঙ্গে নিয়ে। তারা ওয়াল-মার্টের কাছ থেকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। একই সঙ্গে প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে অগ্নি, ভবন নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার আইনগত বাধ্যবাধকতার কথা বলছেন।
কল্পনা আকতার বলেন, বহুজাতিক করপোরেশনগুলো এক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে অবজ্ঞা করছে। তারা জানে কি ঘটছে। কিন্তু তা থামাতে তারা কোন কিছু করছে না। এর জবাব হওয়া উচিত এসব কারখানা থেকে যেসব ক্রেতা পণ্য কেনেন তাদের নিশ্চিত করতে হবে কারখানার নিরাপত্তা, প্রতিটি শ্রমিক ন্যায্য পাওনা পাচ্ছে কিনা, সেখানে উন্নত মানদণ্ড এবং এ রকম আরও অনেক বিষয়। এক্ষেত্রে আমি দু’টি প্রতিক্রিয়া দিতে পারি।
এক. মনে হতে পারে এটা একটি ঔপনিবেশিক মনোভাব থেকে চাপ সৃষ্টি তাই নয় কি? কিন্তু বাংলাদেশে একটি সরকার আছে। কে কোথায় কাজ করতে পারবে, কত সময় কাজ করতে পারবে, তাদেরকে কত বেতন দেয়া উচিত প্রভৃতি। রয়েছে বিল্ডিং কোড, বিল্ডিং ইন্সপেক্টর এবং আরও অনেক কিছু। এখন যদি স্থানীয়রা পারে না তাই বিদেশীদের আইন সেখানে ব্যবহার করতে বলা হয় তখন সত্যিকারভাবে মনে হতে পারে এটা একটি ঔপনিবেশিক মনোভাব। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এটা বর্ণবৈষম্যের মতোও মনে হতে পারে। দেশের ছোটকাটো বাঙালি মানুষগুলো নিজেদের জন্য কিছু করতে পারে না, তাই উন্নত বিশ্বের কাজ করে দেয়া ছাড়া চলবে না। এ বিষয়ে আপনার মতামত যা-ই হোক, এখানে আরেকটি শক্ত যুক্তি আছে। আমরা আমাদের জন্য শ্রমিক নিরাপত্তার জন্য যে আইন অনুসরণ করি তা পালনের সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। মুক্তবাজারের জন্য এটা যেমন একেবারে নিন্দা জানানোর উপযুক্ত সময় নয়, তেমনি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সমমর্যাদার শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা করা বা হওয়ার প্রস্তাব করারও সময় নয়। আক্ষরিক অর্থে এটা হওয়াও অসম্ভব। বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বছরে ২০০০ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের সুরক্ষা, অবসরভাতা, নিরাপত্তার বিষয় ও অন্যান্য কর্মসূচি যাতে শ্রমিকরা উপকৃত হন তার পরিমাণও বাংলাদেশের ওই অঙ্কের চেয়ে বেশি। তাই এটা অসম্ভব। যদি পুরো অর্থনীতি কিছুই নয় এমন বিষয়ের প্রতি ঢেলে দেয়া হয় এবং বাংলাদেশী শ্রমিকদের যুক্তরাষ্ট্রের মানদণ্ডে আনার সমান শ্রমনীতি দেয়া হয় তাহলে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সমান মানদণ্ডে আনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ থাকবে না। পুরো অর্থনীতিও যদি এদিকে প্রবাহিত করা হয় তাহলেও কোন শ্রমিক আমাদের দেশের শ্রমিকদের মতো আয় করতে, খাদ্য ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন না। তাই এটা পরিস্কার যে, বাংলাদেশে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সমান মানদণ্ড নিশ্চিত করা অসম্ভব। দুঃখজনক হলেও সত্য হলো যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে এক শতাব্দী বা তারও আগে যে কারণে মান উন্নত করা হয়েছিল ঠিক সেই একই কারণে বাংলাদেশকে একই রকম মানদণ্ডে উন্নীত করা যাবে। এ কারণে তারা এখন চীনে বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে যাচ্ছে। যখন মানুষ ধনী হয় তখন তারা অর্থ নয় এমন কিছু নতুন সম্পদের অধিকারী হয়। এর মধ্যে রয়েছে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা (এর মাধ্যমে বেশি বিশ্রাম পাওয়া যায়), নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, বেকারদের নিরাপত্তা আরও অনেক কিছু। এগুলোই হলো সম্পদের সুফল। যখন আমরা দেখতে পাবো এসব অবস্থার উন্নতি হচ্ছে তখনই বাংলাদেশে রপ্তানিনির্ভর প্রবৃদ্ধি নিয়ে আনন্দ করা উচিত। এতে আমাদের মধ্যে প্রশ্ন জাগতে পারে কিভাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা যায়। এর সবচেয়ে ভাল জবাব হতে পারে বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাক খাতের পোশাক আমাদেরকে কিনতে হবে। এ খাতে যত বিক্রি হবে বাংলাদেশ তত উন্নত হবে। একই সঙ্গে উপকৃত হবেন শ্রমিকরা। দেশ ধনী হলে এবং শ্রমিকদের অবস্থারও উন্নতি হবে। এডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটে আমার বস মাডসেন পিরিয়ে বার বারই বলেন, দারিদ্র্য দূর করার সবচেয়ে ভাল উপায় হলো গরিব দেশের গরিব মানুষদের পণ্য কেনা।
টিম ওয়ার্সটল বৃটিশ লেখক ও ব্লগার। তিনি অর্থনীতি সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখেন। ২০০৪ সালের এপ্রিল থেকে তিনি অনলাইন ম্যাগাজিন টিসিএস ডেইলিতে নিয়মিত লিখছেন। দ্য ফিলাডেলফিয়া ইনকুইরারে তিনি সম্পাদকীয় ও মন্তব্য বিভাগেও লেখেন। বর্তমানে তিনি সস্ত্রীক পর্তুগালের বাসিন্দা। ২৮শে এপ্রিল ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ
Leave a Reply