রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:১৪

জেনেভায় মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি

জেনেভায় মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি

প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বিশ্বের ৯৮ দেশের প্রতিনিধির শতাধিক প্রশ্নের জবাব দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে গতকাল অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে এসব প্রসঙ্গ আসে। এ সময় তিনি দেশের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় প্রাণহানি সাভার ট্র্যাজেডি, চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গণগ্রেপ্তার, ভিন্নমত দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার, নির্বিচারে পুলিশের গুলি, রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন, জেল-জরিমানা, গুম-খুন, অপহরণ, রাজপথের সংঘাত-সংঘর্ষ, বিপন্ন ও প্রান্তিক জনগণ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার বিশ্বের মানবাধিকার সংবেদনশীল রাষ্ট্র ও সংস্থা-সংগঠনের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাব দেন।

কাউন্সিলে গত চার বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার, মানবাধিকার কমিশন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)-গুলোর তরফে পৃথকভাবে জমা দেয়া ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ বা ইউপিআর-এর ওপর ওই গণশুনানি হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেন। সব প্রতিনিধি শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে সাভারে নিহত ও আহতদের জন্য। এসব ঘটনা কেন এড়ানো যাচ্ছে না, কিছুদিন পরপরই কেবল এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে- অনেকেই এ প্রশ্ন তুলেছেন, মন্তব্য করেছেন।

শুনানি প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বিবিসিকে বলেছেন, এবারের শুনানিতে অনেক দেশের প্রতিনিধিরা চার বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার ‘অগ্রগতি’র প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে দারিদ্র্য কমানো বা মাতৃস্বাস্থ্যের ওপরে জোর দেয়ার বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে। সমালোচনা হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন নিয়ে।

মন্ত্রী দীপু মনি দেশের মিডিয়া ও সুশীল সমাজ খুব শক্তিশালী বলে দাবি করেছেন। এ সময় পাল্টা প্রশ্ন এসেছে ব্লগারদের গ্রেপ্তার ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা বিষয়ে, মন্তব্য এসেছে। বলা হয়, কি কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যার তদন্ত ঠিকমতো হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি সূত্র।

এবারের শুনানি প্রসঙ্গে বিবিসি জানায়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর পর্যালোচনা হয়েছে সেখানে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সরকার যে রিপোর্ট সেখানে দিয়েছে তার ওপরই মূলত পর্যালোচনা হয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালে প্রথম প্রতিবেদন ও শুনানি মোকাবিলা করে বাংলাদেশ।

বিপন্ন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করার পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর দায়িত্ব পালনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে জিরো টরালারেন্স প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে দায়মুক্তির কোন অবকাশ নেই। শুনানিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী নেতারা অংশ নেন। এছাড়া ১৯টি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি জেনেভায় রয়েছেন।

বিবিসি’র অপর এক এমন প্রশ্নের জবাবে মীনাক্ষী বলেন, শ্রমিক অধিকার থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রেই মনিটরিং বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আমরাও বলছি যে, যে ঘটনা ঘটেছে তাতে শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে ত্রুটি থাকার বিষয়টি আবারও প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশে বৃহৎ কারখানায় মনিটরিংয়ের জন্য মাত্র দু’জন ইন্সপেক্টর থাকার বিষয়টি এসেছে। তারা মত দিয়েছেন, এইভাবে মনিটরিং হতে পারে না। তাছাড়া বাংলাদেশের গার্মেন্ট মালিকরা শ্রমিকদের  চেয়ে যে ক্ষমতাধর তা-ও উঠে এসেছে।  বলা হয়েছে, এখানে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কিছু করা হয় না। দেশের সুশীল সমাজের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন এসেছে বলে জানিয়েছেন মীনাক্ষী।

বিপন্ন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করার পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর দায়িত্ব পালনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে জিরো টরালারেন্স প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে দায়মুক্তির কোন অবকাশ নেই। শুনানিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী নেতারা অংশ নেন। এছাড়া ১৯টি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি জেনেভায় রয়েছেন।

এদিকে পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, মানবাধিকার সুরক্ষায় গত চার বছরের অর্জন ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের যে অর্জন তার ভূয়সী প্রশংসা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রশ্নে বিদেশী বন্ধু্‌-উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024