স্বদেশ জুড়ে: বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সাভারে ভবনধসের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া ও সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে ডাকা হরতাল আগামী ২ মে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হরতাল স্থগিত করার ঘোষণা দেন।
পাঠানো বিবৃতিতে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে, ‘মানবতার স্বার্থে, জাতীয় ট্র্যাজেডির এই সময়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিতে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা যেভাবে জাতীয় স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিচ্ছি, আশা করি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীও সেভাবেই আমাদের আহ্বানে সাড়া দেবেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিরোধী দলের হরতাল ভাঙার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশে, প্রশাসনের সহায়তায় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে জোর করে ফাটল ধরা ভবনে সেদিন পোশাক কর্মীদের ঢুকিয়ে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এরপর পুরো চক্রটি মিলে অপরাধী রানাকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। সাভার ট্র্যাজেডি কীভাবে ঘটেছে, তা ইতিমধ্যে দেশবাসী জেনেছেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে যতই অস্বীকার করুন না কেন, সকলেই জানে যে মূল অপরাধী ঘৃণ্য সন্ত্রাসী সোহেল রানা সাভার পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্যই তাঁর সকল সন্ত্রাস ও অপকর্মের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা গডফাদার। সে কারণেই স্থানীয় প্রশাসন হয়ে উঠেছিল এই ঘৃণ্য সন্ত্রাসীর হাতের পুতুল।
খালেদা জিয়া বলেন, উদ্ধার তত্পরতায় সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং টর্চলাইট, অক্সিজেন, পানি, স্যালাইন, কাটারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের জন্য জনগণের কাছে ক্রমাগত আবেদন প্রমাণ করেছে যে, সরকার এই সামান্য জিনিসগুলোও জোগান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এত অযোগ্যতা সত্ত্বেও সরকার উদ্ধারকাজে ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্থাগুলোর সহায়তার প্রস্তাব কেন প্রত্যাখ্যান করল, তা-ও দেশবাসীর কাছে বোধগম্য নয়।
কঠোর হুশিয়রিী দিয়ে তিনি বলেন, সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি, জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ এবং পোশাক খাত রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সমন্বিত ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ আশা করছি। এসব প্রত্যাশা পূরণে প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ না নিলে স্থগিত করা হরতাল আবার দেওয়া হবে। সাভারে ভবনধসের পর উদ্ধার তত্পরতা নিয়ে সরকার ক্ষমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে বিরোধীদলীয় নেতা অভিযোগ করেন। তাঁর মতে, শুরু থেকেই সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডসহ সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে নিয়োজিত করলে প্রাণহানির সংখ্যা আরও কমানো সম্ভব হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা না করে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দলের প্রশস্তি করানোর দিকেই সরকারের বেশি আগ্রহ লক্ষ করা গেছে।
বিরোধীদলীয় নেতার অভিযোগ, সরকার ‘জাতীয় শোক দিবস’ ঘোষণা করে তা নিজেরা পালন করেনি। সংসদ অধিবেশন স্থগিত করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাষ্ট্রীয় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বহাল রেখে ট্রেন উদ্বোধন করেন। সাভার ট্র্যাজেডির দিনেও রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানমালা অব্যাহত রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়, জাতীয় এই শোকের আবহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দলীয় কর্মিসভা করে সেখানে তাঁর স্বভাবসুলভ আপত্তিকর ভাষায় বিরোধী দলকে আক্রমণ করে বক্তব্য রেখেছেন। আর এখন তিনি মানবতার দোহাই দিয়ে বিরোধী দলকে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু আমরা মানবতার স্বার্থে তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছি।
বিরোধীদলীয় নেতা তাঁর বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ খুলে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সম্মত হয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা।
Leave a Reply