৬০ বছর বয়সী ক্রিকেট কিংবদন্তি ইমরান খান নিজ প্রদেশ পাঞ্জাবে টানা কয়েকদিন নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর পর দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে চলমান অভ্যুত্থান বলে আখ্যায়িত করেন। নির্বাচন আর কিয়েকদিন এরই মধ্যে তালেবানদের হুমকি আর হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তানের জনগণ ভীত-সন্ত্রস্তার মধ্যে দিয়েও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ইমরান খান।
ইমরান মনে করছেন, শীর্ষ ৫ জনের হিট লিস্টে তার নাম আছে। অন্য রাজনৈতিক নেতাদের মতো তিনি বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার না করলেও পুলিশ প্রহরাসহ সাঁজোয়া যানেই ভ্রমণ করছেন তিনি। টানা ১৫ ঘণ্টা দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে অংশগ্রহণ করার পর ক্লান্তির ছাপ থাকলেও তাকে দেখা যাচ্ছে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।ইমরান বলেন, ১৭ বছর আগে আমি যখন রাজনীতিতে আসি তখন মৃত্যুভয়কে জয় করেই এসেছি কেননা আমি জানি আমাকে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করতে হবে।
গত রোববারের সন্ত্রাসী হামলায় বিপক্ষ দলের ২০ জনেরও বেশি নিহত হওয়ায় করাচির গণসমাবেশ বাতিল করা হয়। তিনি বলেন, ‘এ রকম বিপজ্জনক পরিবেশে ঝুঁকি নেয়াটা ঠিক না। অন্তত, সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া যায় না।’ পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে দু’বারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং ইমরান খান এ দু’জনই বড় সমাবেশগুলোতে অংশগ্রহণ করছেন।
ইমরান খানের সমর্থকদের অধিকাংশই রক্ষণশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণী। সমালোচকরা তাকে তালেবান খান বলে সম্বোধন করে থাকেন কেননা তিনি জঙ্গিদের প্রতি কিছুটা শিথিল মনোভাব পোষণ করেন। আল- কায়েদা এবং তালেবানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সমালোচনা করে আসছেন তিনি। তিনি তালেবানের উপর মার্কিন ড্রোন হামলার সমালোচনা করেন এবং তালেবানদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানান।
সারগোদা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাঞ্জাবের গ্যারিসনে অনুষ্ঠিত দু’টি সমাবেশেই তিনি পোডিয়ামের বুলেটপ্রুফ স্ক্রিনের পেছনে দাঁড়িয়ে না থেকে মাইক্রোফোন খুলে নিয়ে সামনে এসে বক্তব্য দেন। তার সমর্থকদের কাছে ইমরান খান একজন নায়কোচিত ব্যক্তিত্ব যার হাত ধরে পাকিস্তান ৯২তে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করেছে। এছাড়াও তিনি পাকিস্তানে সব থেকে উন্নতমানের ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করেছেন। শোষণের রাজনীতির শৃঙ্খল মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালে তেহ্রিক-ই-ইনসাফ গঠন করেন। এ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তেমন কোন সফলতার মুখ না দেখলেও ২০১১’র অক্টোবরে লাহোরে ১ লাখেরও বেশি মানুষের সামনে দেয়া চমৎকার এক বক্তৃতায় জনগণের নজর কাড়েন। তিনি দেশে পরিবর্তনের জোয়ার আনবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে, শাসন ব্যবস্থা ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবিলা, শুল্ক ব্যবস্থাপনার সংস্কার এবং ব্যয় কমানো।
নওয়াজ শরীফ এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিকে নিয়ে সমালোচনা করলেও সাবেক সেনাশাসক পারভেজ মোশাররফের প্রতি কিছুটা সমবেদনাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন তিনি। একবার এমন মন্তব্যও করছিলেন যদি মোশাররফ ও তিনি একত্রিত হন তাহলে পাকিস্তানের ৯৫ ভাগ সমর্থন তাদের সঙ্গে থাকবে। এবারে তিনি বললেন, ‘সে রকম কিছু করলে আমার দলের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতো। সে পাকিস্তানের অনেক ক্ষতি সাধন করেছে তারপরও তার পরিণতির জন্য আমি সমবেদনা অনুভব করি।’
তালেবান হুমকির মুখে পিপিপি, এমকিউএম এবং এএনপি তাদের সব জন সমাবেশ বাতিল করেছে। ইমরান খানের দল তেহ্রিক-ই-ইনসাফের নির্বাচনী প্রচারণার মূল বক্তব্য হলো, জনসাধারণের মধ্যে একাত্মতা ফিরিয়ে আনা, দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পাকিস্তানের বিকল শাসনব্যবস্থা সঙ্কট উত্তরণের প্রতিশ্রুতি। তিনি আরও বলেন, ‘আমার রাজনীতি অন্যদের থেকে ভিন্ন দেখে আমি বুলেটপ্রুফ কাঁচের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। আর বুলেটপ্রুফ কাঁচের পিছনে দাঁড়িয়ে জনগণের কাছাকাছি আসা যায় না।’
সরকারের দেয়া হিসাব অনুযায়ী তালেবানরা দশ বছরে কমপক্ষে ৩০,০০০ মানুষ হত্যা করেছে। ইমরান খান মনে করেন তিনি পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে তার দল ৩৪২ আসনের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ ১০ থেকে ৩০টি আসন জয় করতে পারে। সেটা করতে পারলেও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে জোটের অংশ হওয়ার সুযোগ তো থাকবেই একই সাথে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন ইমরান খান। কিন্তু তিনি পিপিপি বা পিএমএল-এন এর জোট বাঁধতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘তার দল এককভাবে জয়ী না হলে বিরোধী দল হিসেবে অবস্থান নেবে।’
সূত্র: বার্তা সংস্থা এএফপিক
Leave a Reply