গত বুধবার হাউজ অব লর্ডসে পার্লামেন্টের আগামী বছরের অধিবেশনের উদ্বোধন করে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ক্ষমতাসীন সরকারের ২০টি বিলের উপর আলোকপাত করে ভাষণ দেন। এ বছর রাণীর ভাষণে সরকারের অভিবাসন মোকাবেলার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। বৃটেন কঠোর হস্তে অবৈধ অভিবাসন রোধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইমিগ্রেশন পদ্ধতিতে কড়াকড়ি আনতে কোয়ালিশন সরকারের নেয়া নতুন কিছু পদক্ষেপকে আইনে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাণীর ভাষণে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)-র সেবা পাওয়ার অধিকারকে আরো কঠিন করা, ল্যান্ডলর্ডদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে সম্ভাব্য ভাড়াটেদের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস জেনে নেওয়া এবং অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের ড্রাইভিং লাইসেন্স না দেওয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব পায়।
প্রথা অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীদের তৈরী করে দেওয়া ভাষণ পাঠ করতে গিয়ে রাণী এলিজাবেথ বলেন, যারা ব্রিটেনের অগ্রযাত্রায় অবদান রাখতে পারবে তাদেরকে এদেশে স্বাগত জানানো হবে আর যারা অবদান রাখতে অক্ষম তাদেরকে ব্রিটেনে প্রবেশে প্রতিরোধ করা হবে।
ব্রিটেনের দ্বিতীয় রাণী এলিজাবেথ বলেছেন, ব্রিটেনের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। যেসব পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক ঘাটতি হ্রাস করবে সে সব বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে একটি ন্যায়-ভিত্তিক সমাজ গঠনে সরকার কাজ করে যাবে। যার ফলে কঠোর পরিশ্রমী মানুষ পুরুষ্কৃত হবে।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাষণে ইমিগ্রেশন পদ্ধতিতে কড়াকড়ি আরোপের সরকারী ঘোষণা প্রকাশিত হলেও সেই কড়াকড়িগুলো কিভাবে বাস্তবায়িত হবে সে সম্পর্কে সরকারের সুস্পষ্ট রূপরেখা নেই। ফলে এখনই বিষয়গুলো নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। হোম অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আসন্ন ইমিগ্রেশন বিলে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রথমত, ইমিগ্র্যান্টরা যে সকল সরকারী সেবা পাওয়ার অধিকার রাখে না সেগুলো তাদের জন্য বন্ধ করা। দ্বিতীয়ত, প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে বিদেশীদের ব্রিটেন থেকে বের করে দেয়ার পথ সহজ করা এবং ভিসা আপিলের মাধ্যমে এ দেশে থাকার পথ কঠিন করা। তৃতীয়ত, গুরুতর অপরাধ করলে বিদেশীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। তবে আসন্ন ইমিগ্রেশন বিলে যেসব বিষয় অন্তর্ভূক্ত হতে পারে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে ল্যান্ডলর্ড, এমপ্লয়ার এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের ভূমিকা কী হতে পারে তা নিয়ে এখনই নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
হাউজ অব লর্ডসে রাণী এলিজাবেথের বার্ষিক ভাষণে আরও যে বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাকে উৎসাহিত করতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স পেমেন্টের প্রাথমিক ২ হাজার পাউন্ড মওকুফ করা, লন্ডন থেকে মিডল্যান্ড ও নর্থ ইংল্যান্ডে হাইস্পিড রেল-টু প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থ ছাড় এবং সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে জমি ক্রয়ের ক্ষমতা দিয়ে বিল পাশ করা, ভোক্তা অধিকার আইনকে আরো কড়াকড়ি করে রিফান্ড পাওয়ার পথকে আরো সহজ করা, ডিলনট কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ইংল্যান্ডে স্যোশাল কেয়ার ব্যয় সীমিত করা, ইংল্যান্ডে বয়স্ক এবং ডিজেবল আত্মীয়দের সেবায় নিয়োজিত কয়েক মিলিয়ন লোককে স্থানীয় কাউন্সিল থেকে সহায়তা পাওয়ার পথ উন্মুক্ত করা, নতুন একটি পেনশন বিল উত্থাপন করা হবে যাতে সপ্তাহে ১৪৪ পাউন্ড পেনশন নির্ধারিত থাকবে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই নিয়ম চালু থাকবে। ২০২৬ সালে পেনশনে যাওয়ার বয়স নির্ধারিত হবে ৬৭ বছর, ধারাবাহিক এন্টি স্যোশাল বিহেভিয়ার প্রতিরোধে ‘কমিউনিটি ট্রিগার’ প্রকল্প চালু এবং বিপদজনক কুকুরগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন বিল পাশ করা হবে আগামী বছরের পার্লামেন্ট অধিবেশনে।
রাণী এলিজাবেথের ভাষণের বিষয়বস্তুকে যথারীতি স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার নিক ক্লেগ। তবে লেবার লিডার অ্যাড মিলিব্যান্ড বলেছেন, ‘দেশ যেসকল গভীর সমস্যায় আক্রান্ত সেই সকল বিষয় রাণীর ভাষণে অন্তর্ভূক্ত হওয়া উচিত ছিল।
এ পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, তাতে রাণীর ভাষণে সেই রকম বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়নি।’ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নও রাণীর ভাষণের সমালোচনা করেছে। পাবলিক এন্ড কমার্শিয়াল সার্ভিসেস ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি মার্ক সেরোটকা ইমিগ্রেশন নিয়ে সরকারের ভীতি ছড়ানো এবং সন্দেহ সৃষ্টিকে ‘লজ্জা’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। ইউনিসনের জেনারেল সেক্রেটারি ডেভ প্রেন্টিস বলেছেন, রাণীর ভাষণে দেশের তারুণ, বেকার, গরিব শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ, অসুস্থ ও বিপদগ্রস্ত মানুষ কিংবা বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জীবন যাত্রার মান নিচে নেমে যাওয়া কয়েক মিলিয়ন মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই।
Leave a Reply