দুনিয়া জুড়ে: গত ৭ মে মঙ্গলবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম সম্প্রদায় ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার উদ্দেশ্য একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সরকার ও মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন প্রচেষ্টা জোরদার করার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উলফগ্যাং প্রথম এ ধরনের সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এরপরেও এরকম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সম্মেলনে ইসলামকে খৃষ্ট ধর্মের মতই সমান অধিকার দেয়া এবং মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান ও মসজিদ নির্মাণের অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
অগ্রগতি লাভে ব্যর্থতা ও নিরাপত্তা বিষয়ের উপর গুরুত্ব না দেয়ায় এসব বৈঠক সমর্থন হারাতে শুরু করে। এ সব কারণে গত ২ বছরে কয়েকটি বড় মুসলিম সংগঠন এ সম্মেলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। জার্মানীর সংখ্যালঘু মুসলমানরা দেশটির সমাজের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে সব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সেগুলোর সমাধানের ব্যাপারে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণে ব্যর্থতার জন্য সরকার ক্রমবর্ধমান হারে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
সম্মেলন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত জার্মানীর মুসলমানদের অবস্থার কোন হেরফের হয়নি। জার্মান মুসলিম সমাজের জন্য কোন অধিকার ভোগ এখনো সোনার হরিণ হয়েই আছে। মুসলমানদের ব্যবস্থাপনার আওতায় কোন গোরস্তান নেই। প্রধান প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনেও তাদের কোন ছুটি থাকে না। তবে শুধুমাত্র হামবুর্গ ও ব্রেমেন রাজ্যে মুসলিম সংগঠনগুলোকে এ অধিকার দেয়া হয়। খৃস্টানদের গীর্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে এখনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
মুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় জার্মানদের মধ্যে মুবসলমানদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বেশি নেতিবাচক। জার্মানী দৈনিক পত্রিকা ডা. স্পিগেল গত আগস্টে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, মুসলিম সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে দেশটিতে সহনশীলতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০ সালে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপে ফলাফলে দেখা গেছে, দেশটির এক তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ জানায়, ইসলামবিহীন জার্মনী তাদের বেশি পছন্দ।
মুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ও ধর্ম বিষয়ক বিশেষজ্ঞ টমাস গ্রসবাল্টং ডুয়েটসচে ওয়েলকে বলেন, মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকা সত্ত্বেও তাদের উপস্থিতি তেমন একটা অনুভূত হচ্ছে না। গীর্জার ট্যাক্স, রাষ্ট্র পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ধর্মীয় শিক্ষা দান ও সরকারি সম্প্রচার বোর্ডে গীর্জার প্রতিনিধিত্ব আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে।
জার্মানীর কেন্দ্রীয় মুসলিম পরিষদের চেয়ারম্যান ইসলাম বিষয়ক সম্মেলনকে জরুরি ভিত্তিতে ঢেলে সাজানো জরুরি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। প্রায় ৩শ’ মুসিলম সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই পরিষদ গঠিত। ইসলামী পরিষদের প্রধান আলী কিজিকায়াও সম্মেলনের সমালোচনা করেন। তিনি সম্মেলনে বক্তব্য রাখাকালে বলেন, ট্রেন ভুল গন্তব্যের পথে যাচ্ছে। অথচ নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ ও ভুল বোঝাবুঝির অবসানে পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল।
গ্রস বলাটিং যুক্তি তুলে ধরে বলেন, জার্মানীতে বর্তমানে গীর্জা বিষয়ক যে আইন রয়েছে তা রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য একটি পরিপূরক আইনে রূপান্তরিত করা উচিত। তিনি বলেন, রাষ্ট্র শুধু আশা করতে পারে সকল ধর্মের মানুষই আইন মেনে চলবে এবং সব ধর্মের অনুসারীদের কাছ থেকে রাষ্ট্র সমদূরত্ব বজায় রেখে চলবে। সকল পক্ষকে একই ধরনের সমর্থন দিতে হবে। এই বিশেষজ্ঞ মুসলমানদের উপর দেষারোপ করে বলেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনসমূহের সদস্য পদ গ্রহণ করে না। এগুলোতে থাকলে জার্মান সমাজের রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হতে পারতো। মুসলিম নেতারা কথাকে কাজে পরিণত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে ইসলাম বিষয়ক সম্মেলনকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
বর্তমানে জার্মানীতে ৩৮ থেকে ৪৩ লাখ মুসলমান বাস করে। দেশের মোট ৮ কোটি ২০ লাখ অধিবাসীর মধ্যে মুসলমানের গড় হার হচ্ছে ৫ শতাংশ। এক সরকারি পরিসংখ্যান থেকে এ হিসাব পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিককালে জার্মানদের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষ ক্রমশ বাড়ছে।
Leave a Reply