দুনিয়া জুড়ে: ব্রিটেনে ঘোড়ার মাংসকে গরুর মাংস বলে যে কেলেংকারী রটেছিল সেই রেশ কাটতে না কটাতেই আবারও ব্রিটেন ঝুকির মুখে পড়লো হালাল বার্গারে শূকরের গোশতের সংবাদে। জানা যায়, লেস্টারশায়ারের স্কুলগুলোতে সরবরাহকৃত হালাল বার্গারে শূকরের গোশতের অস্তিত্ব পাওয়ার পর স্কুলে খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে মুসলমানদের আত্মবিশ্বাসে বড় ঝাঁকুনি লেগেছে। লেস্টার সিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে চালানো ডিএনএ পরীক্ষার পর এ ঘটনা ধরা পড়ে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে লিচেস্টারের স্কুলগুলোর খাদ্য তালিকায় হালাল বার্গার যুক্ত হয়। ঐ প্রতিষ্ঠানটি সিটি কাউন্সিলে শুধুমাত্র এই একটি পণ্য সরবরাহ করতো।
বৃটেন একটি বড় অংকের সংখ্যালঘু মুসলমানের দেশ। যেখানে এখন কমপক্ষে ২৭ লাখ মুসলমানের বসবাস। হালাল শব্দটি আরবীতে অনুমোদিত শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যে শব্দটি ঐতিহ্যগতভাবে খাদ্য পণ্যের সাথে ব্যবহৃত হয়। মুসলমানদের জন্য শুধুমাত্র সে সব গৃহপালিত পশু পাখির গোশত হালাল, যা ধারালো ছুরির সাহায্যে মহান আল্লাহর নামে জবাই করা হয়। ইসলামের বিধান অনুসারে মুসলমানরা শূকর অথবা নোংরা কোন প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করে না। মুসলমান শিক্ষার্থীদের জন্য সরবরাহ করা হালাল বার্গারে শূকরের গোশতের সন্ধান পাওয়ার পর স্কুলে খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মুসলমানদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটি ব্যাপকভাবে নাড়া খেয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশজুড়ে গরুর গোশতের মোড়কে ঘোড়ার গোশত বাজারজাতের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর সিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে নিয়মিত যে পরীক্ষা চালানো হতো তাতেই এবারের এই শূকরের গোশতের ঘটনা আবিষ্কৃত হয়। গত ১৮ এপ্রিল সিটি কাউন্সিল এ ঘটনা অবহিত হয় এবং পরবর্তী পরীক্ষার আগ পর্যন্ত পণ্যটি বাজার থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘটনার শিকার স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষক স্কুলের শিক্ষার্থীদের পিতামাতার উদ্দেশ্যে ৬ হাজার চিঠি পাঠানো হয়েছে শিক্ষা বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
স্কুল বিভাগের সহকারী সিটি মেয়র ও কাউন্সিলর ভি ডেম্পেস্টার বলেন, এ ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই সিটি কাউন্সিল তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং স্কুলের খাদ্য তালিকা থেকে ঐ পণ্যটি সরিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তী পরীক্ষার আগ পর্যন্ত সেটি নিষিদ্ধ থাকবে। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে আমরা আর ঐ কোম্পানির পণ্য ব্যবহার করবো না। এটা খুবই লজ্জাজনক যে, আমরা নিয়মিত যে খাবার খাই আমাদের কেউই তার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছি না। আমরা দুঃখিত যে এ কারণে যে সব পরিবার এবং কর্মচারী কর্মকর্তা কষ্ট পেয়েছেন তাদেরকে আমরা নিশ্চিত করতে চাই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যের মুসলিম গ্রুপগুলো দ্রুত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে। ফেডারেশন অব মুসলিম অরগানইজেশনের (এএফএমও) নেতা সুলাইমান নজদি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক এবং অগ্রহণযোগ্য ঘটনা। মুসলমানদের জন্য মাদকদ্রব্য এবং শূকরের গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ। একজন মুসলিম হিসেবে আমরা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের ক্ষেত্রে বরাবরই আমাদের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করে আসছি। এটা সবারই জানা যে, হাজার বছর ধরে আমরা খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের বিধান মেনে চলছি। আমার এটার তফাৎ মেনে চলি।
Leave a Reply