দুনিয়া জুড়ে ডেস্ক: সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এখন সরকার গঠন করতে প্রস্তুত। তবে তারা এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। তাদের স্বতন্ত্র ও ছোট ছোট দলগুলোর ওপর ভর করে সরকার গঠনের পথে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। এর ফলে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র চেয়ে শক্তিশালী সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন নওয়াজ শরীফ।
এটা নিশ্চিত তিনিই হচ্ছেন পাকিস্থানের নয়া প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে তিনি তৃতীয়বার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। এরই মধ্যে ভারত, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ নওয়াজ শরীফকে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছে। আর গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, নওয়াজ শরীফের দল পিএমএল-এন ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হওয়ায় গতকাল করাচির শেয়ারবাজার সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। দিনের শুরুতে শীর্ষ ১০ শেয়ারের দাম শতকরা ১.৬ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে সূচক দাঁড়ায় ২০২৩২ পয়েন্টে। প্রথমবারের মতো গতকালই সূচক ২০০০০ ছাড়ালো।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন-এর অনলাইন সংস্করণের হিসাবে পিএমএলএন মোট ১৩০ আসনে জয় পেয়েছে জাতীয় পরিষদে। ২৭২ আসনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে তাদের আর মাত্র ৭টি আসন দরকার। সেক্ষেত্রে তারা ছোট ছোট দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে জোট সরকার গঠন নিয়ে। তবে ক্ষমতাসীন পিপিপি ও ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছিল।
এরই মধ্যে পাকিস্তানকে সফলতার সঙ্গে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একই সঙ্গে তিনি নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নওয়াজ শরীফ নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবিরোধী যে যুদ্ধ চলছে তার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত। এর সমাপ্তি ঘটাবেন তিনি। তবে তালেবান ও আল কায়েদার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এক বিবৃতিতে জঙ্গিদের সহিংস হামলার হুমকি থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের নাগরিকরা যেভাবে নীরবে ভোট দিয়েছেন তার প্রশংসা করেছেন। তিনি নতুন সরকারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ উপায়ে, অধিক সমৃদ্ধি, ভবিষ্যতে পাকিস্তান ও এ অঞ্চলকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে অভিন্ন স্বার্থে কাজ করার প্রতি গুরুত্ব দেন।
বেনজির ভুট্টোর পিপিপিতে এখন শুধুই হতাশা। জাতীয় নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মাত্রিক বিশ্লেষণ চলছে। ঝড় উঠছে চায়ের কাপে। এমন অবস্থায় নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল পিপিপির নেতাদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়। ফলে নেতারা সব ছুটছিলেন করাচি অভিমুখে। সেখানে বিলাওয়াল হাউজে তাদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। তাতে সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। উপস্থিত থাকার কথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি ও রাজা পারভেজ আশরাফের। ওদিকে পাঞ্জাবে এককভাবে পিএমএল-এন বিজয়ী হওয়ায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন পাঞ্জাবের গভর্নর মাখদুম আহমেদ মাহমুদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জারদারির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবি হলেও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অন্তত একটি প্রদেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পেয়েছে পিপিপি। সিন্ধু প্রদেশে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন তারা। ফলে কোন দলের সমর্থন ছাড়াই এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে পিপিপি সেখানে। এ প্রদেশে ১৩০টি সাধারণ আসন রয়েছে। তাতে পিপিপি পেয়েছে ৭০ আসন। ফলে নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য নির্ধারিত ৩৮টি আসন বণ্টন করবেন তারা।
ইমরান খানের পিটিআই পেয়েছে ২৯ আসন। ফলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বা অন্তত বিরোধী দলের নেতা হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাতে হোঁচট খেয়েছেন। কারণ, ৩৩ আসন পেয়ে তাকে টপকে গেছে পিপিপি। ফলে প্রধান বিরোধী দল হতে হলে তাকে পিপিপি অথবা এমকিউএম-এর সঙ্গে জোট গড়তে হবে। তারা যদি তাকে সমর্থন করে তাহলেই তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হতে পারবেন। ওদিকে পিপিপি থেকে সৈয়দ খুরশিদ শাহকে আসন্ন জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় নেতা মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। তবে পিএমএলকিউ-এর মহাসচিব সিনেটর মুশাহিদ হোসেন সায়েদ বলেছেন, তিনি পিটিআই-এর প্রধান ইমরান খানকে বিরোধীদলীয় নেতা দেখতে চান।
সাবেক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফের এ নির্বাচনে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। তিনি প্রায় ৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর ফের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই আদালতের রায়ে তাকে গৃহবন্দি হতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ বেশ কতগুলো মামলা হয়েছে। তিনি নিজে কোন আসনে নির্বাচন করতে পারেননি। তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় নির্বাচনের আগে। ফলে মাঠে রয়ে যায় তার দল অল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এপিএমএল)। কিন্তু কাণ্ডারিহীন এ দলের ইফতিখার উদ্দিন চিত্রল আসনে এবং খাইবার পখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি আসনে হাজী গুলাম মুহাম্মাদ জয়ী হয়েছেন।
সর্বশেষ খবর পর্যন্ত পিপিপি পেয়েছে ৩৩ আসন। পিটিআই পেয়েছে ২৯ আসন। আইএনডি পেয়েছে ২৭ আসন, এমকিউএম ১৭, জেইউআইএফ ১০, জামায়াতে ইসলামী ৫, পিকেএমএপি ৩, পিএমএলএফ ৫, এনপি ২, এনপিপি ১, কিউডব্লিউপি ১, এএনপি ১, পিএমএলকিউ ১, বিএনপি ১, এএমএল ১ আসন। একটি আসনের ফল ঘোষণা বাকি এবং ৪টি আসনের ফল স্থগিত করা হয়েছে। এখন নওয়াজ শরীফ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৭ আসন অর্জন করতে পারলেই তিনি নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত ৭০টি আসন বণ্টন করবেন।
Leave a Reply