স্বদেশ জুড়ে: দুইবার দরপত্র আহবান করেও কোনো উড়োজাহাজ পায়নি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত চলা বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভায় দরপত্র ছাড়াই সরাসরি উড়োজাহাজ লিজ প্রদানকারী কোম্পানির কাছ থেকে উড়োজাহাজ ভাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গরবার রাতের পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিমান বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজ ভাড়া করবে। যদি তা না পাওয়া যায় তবে দুটি বোয়িং ৭৭৭ ভাড়া নিয়ে তা হজ ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যবহার করবে।
ঘটনার নেপথ্যে দেখা যায়, বিমান কতৃপক্ষ হজ্ব মৌসুমের আগে হজ্ব ফ্লাইট পরিচালনার জন্য উড়োজাহাজ ভাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের পছন্দমতো কোম্পানির কাছ থেকে চড়া মূল্যে উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়া হয়। কারণ হিসেবে বিমানের অতীত রেকর্ডের কারণে কখনই ভালো কোনো লিজ প্রদানকারী কোম্পানি বিমানের দরপত্রে অংশ নেয় না। মূলত অতীতে লিজ প্রদানকারী কোম্পানিসমূহের সঙ্গে লেনদেনে নেতিবাচক দিক থাকায় প্রতিবারের মতো এবারও তারা দুই বার দরপত্র আহবান করেও ভালো কোম্পানির উড়োজাহাজ পায়নি। তাই বিমানের ভাবমূর্তি সংকটের কারণেই ভালো কোনো কোম্পানি বিমানের দরপত্রে অংশ নেয় না। এর পজিটিভ দিকটা হলো বিমানের দায়িত্বশীল কিছু কর্মকর্তার যারা নিয়োজিত রয়েছেন মূলত এই কমিটিতে। কমিশনের বিনিময়ে নিজেদের পচন্দমত কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। আর এভাবেই চলছে বিমানের হজ ফ্লাইট ভাড়া করা নিয়ে কমিশন-বাণিজ্য। এবারও একই পন্থায় উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারক ফোরামে।
প্রথমবার উড়োজাহাজ পেতে দরপত্রে সবাই নন-রেসপনসিভ হয় (কেউই যোগ্য বিবেচিত না হওয়া)। দ্বিতীয়বারও সবাই নন-রেসপনসিভ হয়। দ্বিতীয় বার আবেদন করেছিল ঈগল এক্সপ্রেস, এভিকো, প্রোটেকনোজ ও এসিইএমআই২৪ নামে চারটি কোম্পানি। এদের মধ্যে এসিইএমআই২৪ বাকি তিনটি কোম্পানি বিমানের চাহিদা বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজ দিতে পারবে বলে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু এভিকোর উড়োজাহাজ ছিল ২১ বছরের পুরনো। বাংলাদেশে ২০ বছরের পুরনো ভাড়া করা উড়োজাহাজ চালানো যায় না। এর বাইরে প্রোটেকনোজ বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগপত্র দেননি। আর ঈগল যেসব কাগজ জমা দিয়েছিল তা সঠিক ছিল না। প্রথমবারেও ঈগল দরপত্রে অংশ নিয়েছিল। যথারীতি নন-রেসপনসিভ হয়েছে। তারপরও দ্বিতীয়বার দরপত্রে অংশ নেয়।
নাম প্রকাশ না করে একজন বিমান কর্মকর্তা বলেন, পছন্দের কোম্পানির উড়োজাহাজ নিতেই দফায় দফায় দরপত্র আহবান করা ও তা বাতিল করা সবই চক্রান্তের অংশ। বিমানের শীর্ষ কর্তাব্যক্তির নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট হজের উড়োজাহাজ ভাড়ার করার নামে কমিশনবাণিজ্যে নেমেছে। বিগত বছরেও দুই দফায় উড়োজাহাজ না পেয়ে পরবর্তীতে বিমানের উচ্চ পদ্ধস্থ একজন তার পছন্দের কোম্পানির একটি বোয়িং ৭৬৭ উড়োজাহাজ ভাড়া করেছিলেন। এবারও অতীত রেকর্ডের ব্যতিক্রম হয়নি। আর এই সুযোগে সরাসরি নিজেদের পছন্দের কোম্পানি থেকে কমিশনের বিনিময়ে উড়োজাহাজ ভাড়া করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
Leave a Reply