দুনিয়া জুড়ে ডেস্ক: যেসব বাংলাদেশী ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সৌদিআরবে অবস্থান করছিলেন, তাদের জন্য সৌদি সরকার সেদেশে বসবাসরতদের ‘আকামা’ (ভিসা ঠিক রেখে নিয়োগকর্তা পরিবর্তন) পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়ার পর বাংলাদেশিরা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। এ যেন তাদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব বাংলাদেশিদের অন্যতম শ্রমবাজার। এক সময় দেশটিতে প্রতিবছর এক লাখ করে কর্মী যেতো। তবে বিগত চার বছর এই শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া সৌদি সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ২০০৭ সাল থেকে আকামা পরিবর্তনের সুযোগ বন্ধ রেখেছিল। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। এই সময়ের মধ্যে প্রায়ই সৌদি পুলিশ বাংলাদেশি কমিউনিটিতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে গেছে। এতে সারাক্ষণ বৈধ-অবৈধ সব বাংলাদেশিরাই দেশটিতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে কাটিয়েছেন।
বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে ৮০ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। যাদের মধ্যে প্রায় ২ লাখ নারীকর্মী রয়েছেন। বাংলাদেশের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার (৪০ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি আসে সৌদি আরব থেকে। বৈধ ও অবৈধ সব মিলিয়ে দেশটিতে ২৬ লাখের বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। ২০০৭ সাল থেকে বিদেশি শ্রমিকদের আকামা পরিবর্তনের সুযোগ বন্ধ রেখেছে সৌদি সরকার। তবে বর্তমান সরকার শুরু থেকেই এই সুযোগ তৈরিতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখে। এরই মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান সৌদি সরকারের কাছ থেকে তাদের শ্রমিকদের আকামা পরিবর্তনের সুযোগ আদায় করে নেয়।
এ বিষয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বলেন, সৌদি আরবে বর্তমানে কত সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন এ ব্যাপারে আমাদের কাছে সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে নতুন করে আকামা পরিবর্তনের মাধ্যমে বোঝা যাবে বৈধ-অবৈধ কত সংখ্যক শ্রমিক দেশটিতে রয়েছেন।’ তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মাঝে কেউ আকামা পরিবর্তন না করতে পারলেও ক্ষতি নেই। দেশে ফিরে আসার সময় তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট রেখে দেয়া হবে এবং পরবর্তীতে তারা আবার সেখানে যেতে পারবেন।
সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, এখন থেকে বাংলাদেশিরা সৌদি সরকারের দেয়া ‘আকামা’ পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে যারা অবৈধভাবে দেশটিতে বসবাস করছেন, তাদের জন্য তিন মাসের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার। তবে আগামী ৩ জুলাইয়ের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে বৈধ হতে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সময় বেধে দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১১ মে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘আকামা’ পরিবর্তনের সুযোগ (ভিসা ঠিক রেখে নিয়োগকর্তা পরিবর্তন) দেয়ার কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি এজন্য সৌদি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বলেন, সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশিরা আগামী তিন মাসের মধ্যে তাদের ‘আকামা’ পরিবর্তন করতে পারবেন। এমনকি তারা তাদের পেশাও পরিবর্তন করতে পারবেন। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে কেউ কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে না পারলে এবং কেউ ইচ্ছে করলে জরিমানা ছাড়াই দেশে ফিরে আসার সুযোগ পাবেন বলে জানান মন্ত্রী।
দূতাবাস সূত্র আরো জানায়, এখন থেকে কেউ ইচ্ছা করলেও সৌদিতে অবৈধভাবে বসবাস করতে পারবেন না। সরকারের এই বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় সবাইকে বৈধ হতে হবে। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে কফিল (মালিক) পলাতক দেখিয়ে মামলা করেছেন, তারাও এই প্রক্রিয়ায় বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। কফিল পাসপোর্ট দিতে অস্বীকৃতি জানালে শ্রমিকদের কাছে থাকা আকামার ফটোকপির সাহায্যেও বৈধ হওয়ার সুযোগ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। আর বেধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশিদের বৈধকরণকাজ এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলসহ প্রতিদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সৌদি আরবে বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, বৈধকরণ প্রক্রিয়ার ৯০ শতাংশ কাজ অনলাইনে করা হচ্ছে। এতে করে ঘরে বসেই রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন প্রবাসীরা। তানাজ্জুল বা আকামা পরিবর্তনের কাজটি করবে ইমিগ্রেশন পুলিশ। আর যারা একেবারে দেশে ফিরে যেতে চান, তাদের কাজটি সম্পন্ন করবে তারহিল পুলিশ।
সমস্যা শুরু হয় মূলত ২০১০ সালে সৌদি সরকারে একটি সিদ্ধান্তের ফলে। যেখানে সৌদি নাগরিকদের কর্মমুখী করার লক্ষে প্রতি কারখানায় ২০ শতাংশ সৌদি নাগরিক থাকা বাধ্যতামূলক করে। ব্যতিক্রম হলে প্রতিষ্ঠানটিকে রেড ক্যাটাগরিতে ফেলা হবে। আর রেড ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের আকামা পরিবর্তন বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। বাংলাদেশি শ্রমিকরা বেশিরভাগই রেড ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় তারা আকামা নবায়ন করতে পারছিলেন না।
ফলে তারা দিন দিন অধিকহারে অবৈধদের তালিকায় পড়ে যাচ্ছিলেন। লাখ লাখ বেকার সৌদি নাগরিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় নতুন এই নিয়মটি চালু করে। এর ফলে ইয়েমেনী, ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অভিবাসন কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে এ বছরের প্রথম তিন মাসে সৌদি আরব থেকে প্রায় দুই লাখ বিদেশি শ্রমিককে বের করে দেয়া হয়। অবৈধ শ্রমিকদের বাদ দিয়ে নিজেদের বেকার নাগরিকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত সৌদি সরকারের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি ভারতের শ্রমিক কাজ করে। তাদের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। আর দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। আর সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ১৫ লাখের উপরে। এরপরই অবস্থান করছে পাকিস্তান ও ফিলিপাইন।
সমস্যা শুরু হয় মূলত ২০১০ সালে সৌদি সরকারে একটি সিদ্ধান্তের ফলে। যেখানে সৌদি নাগরিকদের কর্মমুখী করার লক্ষে প্রতি কারখানায় ২০ শতাংশ সৌদি নাগরিক থাকা বাধ্যতামূলক করে। ব্যতিক্রম হলে প্রতিষ্ঠানটিকে রেড ক্যাটাগরিতে ফেলা হবে। আর রেড ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের আকামা পরিবর্তন বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। বাংলাদেশি শ্রমিকরা বেশিরভাগই রেড ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় তারা আকামা নবায়ন করতে পারছিলেন না।
ফলে তারা দিন দিন অধিকহারে অবৈধদের তালিকায় পড়ে যাচ্ছিলেন। লাখ লাখ বেকার সৌদি নাগরিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় নতুন এই নিয়মটি চালু করে। এর ফলে ইয়েমেনী, ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অভিবাসন কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে এ বছরের প্রথম তিন মাসে সৌদি আরব থেকে প্রায় দুই লাখ বিদেশি শ্রমিককে বের করে দেয়া হয়। অবৈধ শ্রমিকদের বাদ দিয়ে নিজেদের বেকার নাগরিকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত সৌদি সরকারের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি ভারতের শ্রমিক কাজ করে। তাদের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। আর দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। আর সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ১৫ লাখের উপরে। এরপরই অবস্থান করছে পাকিস্তান ও ফিলিপাইন।
খুব স্বল্প বেতন পেয়ে থাকেন এ রকম প্রায় ৮০ লাখ বৈধ বিদেশি শ্রমিক বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশটিতে এর বাইরেও প্রায় ২০ লাখ অনিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিক রয়েছে। আর এই শ্রেণীর জন্য সৌদি সরকার এই ‘আকামা’ পরিবর্তনের সুযোগ দিচ্ছে।
সর্বশেষ বাংলাদেশিদের এই সুযোগের আওতায় আনছে দেশটি। আকামা পরিবর্তনের সুযোগ পেলে বাংলাদেশিরা ধরপাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। এটি না হলে আগামী তিন মাস পর কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক সাজা ভোগ করে খালি হাতে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হতেন।
Leave a Reply