বিশেষ রির্পোট: গত ৫ মে গভীর রাতে মতিঝিলের অন্ধকারাচন্ন শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির ১০ হাজার সদস্যের যৌথ অভিযানে সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের সংখ্যা ১১ জন দাবি করা হলেও আসলে কত লোক নিহত হয়েছিল তা এখনো অজ্ঞাত।
গোপনে রেকর্ডকৃত একজন দেশীয় সাংবাদিক জানতে চেযেছিলেন এক পুলিশ কনস্টেবলের কাছে কত জন লোক মারা হয়েছিল ৫মে রাতে যে পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্বরত ছিলেন শাপলার অপারেশনে। ছদ্দবেশী এই সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন কত জন লোক মারা গিয়েছিল ওদিন। উত্তরে তিনি বলেছেন, আমদের কাছা থাকা ৫০০ গুলি আমরা ব্যবহার করেছি। অন্ধকার ছিল বলে পুরোটা আচ করতে পারিনি। যদি ৫০০ মারা না যায় তবে তার জানা মতে প্রায় ৪০০ জন তো হবে যারা পলিশের গুলিতে মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, কোন মিডিয়া ছিল না বলে ওপেন গুলিবর্ষন শুরু করে পুলিশ। রাত ১টার পর বিজিবি এবং র্যাব এসে যোগ দেয়। অতঃপর তারাও ওপেন গুলিবর্ষণ শুরু করে। সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা হয়। এবং ভোর রাতের আগেই লাশগুলো গণকবর দেয়া হয়। একজন উচ্চ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাকে স্পটে শোনা যায় ওয়াকি টোকিতে বলছেন, পানিবাহী সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি আসছে না কেন, দ্রুত আসতে বলো। রক্ত পরিস্কার করতে হবে। যেহেতু মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বর এটি বানিজ্যিক ব্যস্ততম এলাকা তাই সকালেই লোকজন অফিস আসতে শুরু করে দেবে।
https://www.youtube.com/watch?v=_fZj5Pf8zPY
নিহতের সঠিক পরিসংখ্যানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বিক্ষোভে নিহতদের সঠিক সংখ্যা অস্পষ্ট। শনিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যমের খবরে নিহতদের সংখ্যা আনুমানিক ৫০ জন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারো হিসাবেই নিহতের সংখ্যা ৫০ জনের বেশি উল্লেখ করা হয়নি। হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছে যে, তাদের সমাবেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ব্যাপক সংখ্যক লোক হতাহত হয়েছে এবং অচিরেই নিহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, ৫ মে ঢাকা অবরোধের দিন পুলিশ ও হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে। আবার সরকারি শ্বেতপত্রে নিহতের সংখ্যা ১১ জন দাবি করে বলা হয়, রাতে অভিযানের সময় নয় ৫ মে দিনের বেলায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় এসব লোক নিহত হয়। আর যেসব লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের কয়েকজনের লাশ হেফাজতে ইসলামের সমাবেশস্থলে পাওয়া গেছে। তার মানে সরকারের পক্ষ স্পষ্ট বার্তা হলো, পুলিশের গুলিতে কোন ব্যাক্তি মারা যাননি শাপলা চত্ত্বরে।
http://www.salem-news.com/articles/may152013/dhaka-massacre.php
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম আল-জাজিরা অনুসন্ধান চালাচ্ছে। তাদের অনুসন্ধানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্যের ভিন্নতা ফুটে উঠেছে। আল-জাজিরা হত্যাযজ্ঞের একটি স্পর্শকাতর ভিডিও চিত্র পেয়েছে। ভিডিও চিত্রে ঢাকার একটি সরকারি গোরস্থান দেখানো হয়েছে। আল-জাজিরার প্রতিনিধি গোরখোদক আবদুল জলিলের সঙ্গে দেখা করেন। তার বয়স আনুমানিক ২০-২২ বছর। আবদুল জলিল বধির ও বোবা। চেক শার্ট পরিহিত জলিল ইশারা ইঙ্গিতে আল-জাজিরার প্রতিনিধির কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করে।
http://www.aljazeera.com/news/asia/2013/05/2013514143842666992.html
গোরস্থানে দাঁড়িয়ে আলাপকালে জলিল জানিয়েছে, সে রাতে এ গোরস্থানে ১৪ টি লাশ কবর দিয়েছে। নিহতরা ছিল শশ্রুধারী ও গুলিবিদ্ধ। ইশারায় জলিল বুঝাবার চেষ্টা করে, দাড়িওয়ালা অনেক লোকের লাশ নেয়া হয় ঐ গোরস্থানে। এবং রাতে মধ্যে লাশগেুলো গোপনে কবর দেয়া হয় কোন ধরনের আনুষ্টানিকতা ছাড়াই।
https://www.youtube.com/watch?v=HlU-50fD72Q
ধারনকৃত ভিডিও চিত্রে হাজার হাজার মানুষকে আর্তনাদ করতে এবং বহু লোককে উঁচু দেয়াল টপকে পালাতে দেখা গেছে। আলিকো ভবনের সামনে পুলিশ টুপি দাড়িওয়ালাদের বন্দুক দিয়ে পেটাচ্ছে। রক্তাক্ত রাজপথে শ্বেত শুভ্র বহু লাশ লুটোপুটি খাচ্ছে। গুলিবিদ্ধ অনেককে মাটিতে ঢলে পড়তে দেখা যাচ্ছে। অনেকের শরীর রক্তাক্ত। পুলিশের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অ্যাম্বুলেন্সে লাশ তুলতে দেখা যাচ্ছে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো এ ঘৃণ্য ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছে।
নিহতদের সংখ্যা অধিক বলে প্রতীয়মান হওয়ায় আল-জাজিরার প্রতিনিধি জেমস বেইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকারে দীপু মনি হতাহতদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত সংখ্যা সঠিক বলে দাবি করেছেন। হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশে বিভিন্ন সংস্থা নিরপেক্ষ ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছে। এ ব্যাপারে জেমস বেইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবসময় অনুসন্ধান করা যেতে পারে। যে কোনো ঘটনার তদন্ত হতে পারে। সরকার অথবা এ দেশের অধিকাংশ লোক মনে না করে যে, এ ব্যাপারে কোনো বিতর্ক আছে।
https://www.youtube.com/watch?v=ZcLy_ZSH9Jg
মিডিয়া পক্ষ থেকে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভুল বলেছেন যে মিডিয়ার উপস্থিতিতে পুলিশ অপরেশন চালায় শাপলা চত্ত্বরে। অনাকাংকিত ঘটনা এড়াতে সকল মিডিয়াকে শাপলা চত্তরের আশপাশের এলাকা থেকে সরে যেতে বলা হয়। পুরো এলাকা পুলিশের আওতায় নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয় সকল মিডিয়া কর্মীকে। এজন্য রাত আনুমানিক ১০টার মধ্যে প্রায় সকল মিডিয়া কর্মী নিরাপত্তা না পেয়ে সরে যান স্পট থেকে। তাৎক্ষনিত সময় টিভির রাতের সংবাদে দেখা যায় তাদের প্রতিনিধি যিনি স্পটে ছিলেন সংবাদ কাভারেজ দেয়ার জন্য। তিনি লাইভ ষ্টুডিওতে সংবাদ পাঠিকার সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। তিনি বলেন, তাদেরকে সরে যেতে বলা হয়ে নিরাপত্তাজনিত কারনে।
মিডিয়াকে দমিয়ে রাখতে দিগন্ত টিভি এবং ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেয়া হয়। মিডিয়াদের সবাই এলাকা ছেড়ে গেলেও দিগন্ত এবং ইসলামিক টিভির রির্পোটার গোপনে অবস্থান করে সংবাদ পচার করছিলেন। সরকার কাছে সংবাদ পৌছা মাত্রই নির্দেশ দেয়া হয় তাৎক্ষনিক দুটো টিভির টেরিস্টেরিয়াল সম্প্রসার সাময়িকবাবে স্তগিত করার জন্য। ভোর রাতের টিভি দুটির সুইচ অফ করে দেন কতৃপক্ষ। কারণ হিসেবে কর্তপক্ষ বলেন, উপরের নির্দেশেই সাময়িক এটা করা হচ্ছে। তবে ঠিক কারণে এই কঠিন সিদ্ধান্ত তা অবগত নেন তারা।
Leave a Reply