নিউজ ডেস্ক: ৫ই জানুয়ারির আলোচিত নির্বাচনের বছরপূর্তিকে ঘিরে মুখোমুখি দুই রাজনৈতিক শিবির। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিনটিকে গণতন্ত্র দিবস আখ্যা দিয়ে দেশজুড়ে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে সারা দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ২০ দলীয় জোট।
আর এ কর্মসূচির মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের সূচনা করতে চায় ২০ দল। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। ৫ই জানুয়ারির আগে ৩রা জানুয়ারি গুম-খুনের প্রতিবাদ ও নির্বাচন দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশ করবে এ জোট। আর ৫ই জানুয়ারি কালো দিবস হিসেবে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
এ দুই দিনের কর্মসূচি পালন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ বরাবর আবেদনও করা হয়েছে। অনুমতি না মিললে টানা হরতাল দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছে এ জোটের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে ৫ই জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ঢাকাসহ সারা দেশে ‘গণতন্ত্র’ দিবসের কর্মসূচি পালন করবে। এদিন দলের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। এদিকে ৫ই জানুয়ারির আগেই গাজীপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমাবেশ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। পূর্ব ঘোষিত এ সমাবেশ সফল করতে বিএনপি ও ২০ দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হলেও জেলা ছাত্রলীগ একই স্থানে সমাবেশ আহ্বান করেছে। ফলে এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে জেলার রাজনীতিতে।
শুধু গাজীপুরেই নয়, সারা দেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের সমাবেশ প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি লন্ডনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রত্যাহার না করলে বিএনপিকে কোথাও সমাবেশ করতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের এ ঘোষণার পর বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ছাত্রলীগকে মাঠে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে। গতকাল পর্যন্ত গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে সমাবেশ করতে কোন পক্ষকেই অনুমতি দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।
ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি চাইলেও গতকাল পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। ২০ দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সমাবেশের অনুমতি না পেলে টানা হরতালের ঘোষণা আসতে পারে। ২০দলীয় জোটের সরকার পতনের আন্দোলনকে সামনে রেখে দুই জোটের নেতাদের মধ্যে চলছে কথার লড়াই। নেতাদের বক্তব্যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতি। উদ্বেগ-আতঙ্ক ভর করেছে জনজীবনে। বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। বিরোধী জোট ঘোষণা দিয়েছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দেয়া না হলে হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়া হবে। লাগাতার কর্মসূচিরও আভাস দেয়া হচ্ছে বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে।
এদিকে সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি ও ২০ দলকে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। কর্মসূচির নামে সহিংসতা করলে মাঠেই তাদের মোকাবিলা করা হবে। একই সঙ্গে বিরোধী জোটকে প্রশাসনিকভাবেও মোকাবিলার চিন্তা করছে সরকার। এ জোটের সম্ভাব্য কর্মসূচিকে সামনে রেখে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি শুরু হয়েছে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর।
মঙ্গলবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা একে অন্যকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য রাখেন। সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। আগের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে তিনি সরকারি দলের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, র্যাব-পুলিশ ছাড়া রাজপথে আসুন। দেখেন কার চামড়া কে তোলে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক সভায় নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, বিএনপি ও ২০ দলকে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদও এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপিকে আন্দোলন করতে দেয়া হবে না। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম চাঁপাই নবাবগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে ৫ই জানুয়ারি দলের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেন।
৫ই জানুয়ারি গোলযোগের আশঙ্কা গোয়েন্দাদের:
বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের তৎপরতার আগাম খবর সংগ্রহে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন বেশ তৎপর। রাজনৈতিক দল ও এর অঙ্গসংগঠন, দেশের প্রশাসনযন্ত্র সচিবালয় এবং পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের খবরাখবর রিপোর্ট আকারে ঊর্ধ্বতনদের কাছে যেসব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পাঠান তাদের এখন রাত-দিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে। অলিখিতভাবে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত সবকিছু বিশেষত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে কঠোর মনিটরিং-এ রাখতে হবে।
সচিবালয়ে কাজ করেন এমন কয়েক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এখন তাদের বেশি তৎপর থাকতে হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার পাঠানো গোপনীয় প্রতিবেদন প্রায় প্রতিদিনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হচ্ছে। যেন রিপোর্ট পাঠানোর হিড়িক লেগেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মর্ম অনুযায়ী গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠাচ্ছে। বেশির ভাগ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ৫ই জানুয়ারি বা এর আগে-পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নাশকতামূলক কার্যকলাপ ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর ঘোষিত কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি বিশেষ প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস স্বাক্ষরিত ওই গোপনীয় প্রতিবেদনের আলোকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। গোপনীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২রা ডিসেম্বর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে পল্টনের বিএনপি কার্যালয়ে এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ কর্মসূচি নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কোন দাবিকে আন্দোলনের ইস্যু হিসেবে সামনে আনতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে দলীয় ইস্যুতে আন্দোলন করলেও জনসম্পৃক্ততা ও সফলতা আসেনি।
সম্ভাব্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি’র মূলদলসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তাদের কর্মসূচি পালনকালে নিজেদের মধ্যে হিংসাত্মক ঘটনা সংঘটিত হওয়াসহ গোলযোগের সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ও স্বার্থান্বেষী মহল সরকারকে বিব্রত করতে এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যে কোন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটনের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আগামী দিনের আন্দোলনের ইস্যু সৃষ্টির লক্ষ্যে নিজেরাই যে কোন ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা সংঘটিত করে এবং তার দায়ভার সরকারের ওপর চালানোর চেষ্টা চালাতে পারে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সুপারিশ আকারে বলা হয়েছে, বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে গোলযোগ ও নাশকতামূলক ঘটনা প্রতিরোধে বিএনপি’র ঘোষিত কর্মসূচিতে সব গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত নজরদারির পাশাপাশি পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনপূর্বক প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্র্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্দেশনা দেয়ার কাজ চলছে। সহসাই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পুলিশের আইজি’র কাছে পাঠানো হবে।
৩ ও ৫ই জানুয়ারি জনসভার অনুমতি চেয়েছে বিএনপি
আগামী ৩ ও ৫ই জানুয়ারি রাজধানীতে জনসভার অনুমতি চেয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবর আবেদন করেছে বিএনপি। সোমবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের দুইজন কর্মচারী ডিএমপি কার্যালয়ে এ চিঠি পৌঁছে দেন। বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, আগামী ৩ ও ৫ই জানুয়ারি রাজধানীতে জনসভার অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। জনসভার স্থান হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাপলা চত্বর কিংবা নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে সামনের সড়কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কোন কিছু জানানো হয়নি।
‘৫ই জানুয়ারি ঢাকায় ঢুকতে দেয়া হবে না’
বিএনপির প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, খালেদা জিয়ার জোট দেশ ও গণতন্ত্রের শত্রু। ৫ই জানুয়ারি এদেরকে রাজধানীতে ঢুকতে দেয়া হবে না। কত হিম্মত আছে ৫ তারিখে দেখবো। সেদিন আমরা দেখতে চাই কার কতটা শক্তি। গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শেখ রাসেল শিশু সংসদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
উপস্থিত দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মায়া বলেন, পাড়া-মহল্লায় সতর্ক থাকবেন। খোঁজখবর রাখবেন। কোন দুষ্কৃতকারী, ষড়যন্ত্রকারী যেন কোন বাসাবাড়িতে লুকিয়ে থেকে ষড়যন্ত্র করতে না পারে। তিনি বলেন, ৫ তারিখ কিন্তু অনেক দেরি। আজকে থেকেই রাস্তায় নেমে যান। যেখানেই দেখবেন দুষ্কৃতকারী-বোমাবাজরা বোমাবাজি করছে, সেখানেই ধইরা এমন মিষ্টি (উত্তম-মধ্যম) খাওয়াইয়া দেবেন, জীবনে আর যাতে কোনদিন মিষ্টি খাইতে না চায়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি বারবার হরতাল দিয়ে, মায়াকান্না করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। ইনশাআল্লাহ শত চেষ্টা করেও রক্ষা করতে পারবেন না। বিচার আমরা শেষ করবোই। তিনি বলেন, আপনি এতিমের টাকা চুরি করেছেন। এতিমের ঢাকা চুরি করে কোর্টে হাজিরা দিতে যান না। যত ভাবেই পালিয়ে থাকেন না কেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইন আপনার পেছনে পেছনেই যাবে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকেন, আপনি এবং আপনার সন্তানকে আইনের আওতায় এসে শাস্তি ভোগ করতেই হবে।
আইন থেকে কেউ রক্ষা পায় না, রক্ষা পাওয়ার সুযোগও নেই। খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, স্বপ্ন দেখছেন ক্ষমতায় বসবেন। কিন্তু পায়ের তলায় যে মাটি নেই সেটা কি ভেবে দেখেছেন? আপনি লক্ষ্য করেন এখন বিদেশেও আপনার কোন বন্ধু নেই। আপনার সঙ্গে আছে শুধু মিথ্যাবাদী-ষড়যন্ত্রকারী। আর যারা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করে নাই সেই সব বন্ধুরা। তাদের আমরা ভয় পাই না। আমাদের কোন প্রভু নাই, বন্ধু আছে।
শেখ রাসেল শিশু সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন মনসুরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিলন, সহ-দপ্তর সম্পাদক জামাল উদ্দিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল হক সবুজ প্রমুখ।
গাজীপুরে খালেদার জনসভা ঘিরে ছাত্রলীগ-বিএনপি মুখোমুখি
গাজীপুরে আহূত খালেদা জিয়ার জনসভা ছাত্রলীগের প্রতিহত করার ঘোষণায় দু’পক্ষের মধ্যেই উত্তেজনা রয়েছে। জনসভাকে সফল করতে বিএনপি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। ছাত্রলীগও একই দিনে একই স্থানে সমাবেশ আহ্বান করে চালাচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। এ অবস্থায় আগামী ২৭শে ডিসেম্বরের ২০ দলীয় জোটের জনসভা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বিএনপির জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল জানান, কলেজ মাঠে জনসভা করার অনুমতি নিয়েই জনসভা সফল করতে তারা মাঠে নেমেছেন। প্রথম ২৩শে ডিসেম্বর জনসভা করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে তা পিছিয়ে ২৭শে ডিসেম্বর চূড়ান্ত করা হয়। যে কোন মূল্যেই জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। এরই মাঝে জনসভাটি সফল করতে গত কয়েক দিন ধরে প্রস্তুতিসভা, কর্মিসভা, জনসংযোগসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে।
গতকালও জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি ও বিএনপি জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলমের নেতৃত্বে নগরের বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। গাজীপুর জেলা বিএনপি অফিসে পৌর শ্রমিকদলের প্রস্তুতি সভা হয়েছে। এতে নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবুল উপস্থিত ছিলেন। নগরের চান্দনায় বশির আহম্মেদ বাচ্চুর সভাপতিত্বে ও যুবনেতা শওকত হোসেন বাবুর পরিচালনায় যুবদলের প্রস্তুতি সভা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে জনসভাস্থল ভাওয়াল কলেজ মাঠ পরিদর্শন ও তদারক করেন কলেজের সাবেক জিএস ও সদর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহম্মেদ। বলেছেন যে কোন মূল্যে আমরা জনসভা সফল করবো। লাখ লাখ মানুষের স্রোতে ছাত্রলীগ সেদিন টিকতে পারবে না। ২০ দলীয় জোটের জনসভাকে ব্যাহত করতে ছাত্রলীগ ষড়যন্ত্র করছে।
তবে ২০ দলীয় জোটের জনসভা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরাও মাঠে রয়েছেন। তাদের দুই দফা দাবির বাস্তবায়ন না হলে সেদিন খালেদা জিয়ার জনসভা স্থলে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে অনড় রয়েছে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দীপের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা তুহিন রহমান ফাহিম, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা মঈনুল হোসেন মোল্লা, কাজী সাকিব, ইমরান হোসেন পলিন, ইমরান হোসেন বাবুসহ ছাত্র নেতৃবৃন্দ নগরের চান্দনা, কোনাবাড়ি, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ওই একই মাঠে একই দিনের বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করতে প্রচারপত্র বিলি ও মিছিল-মিটিং করেছে।
অন্যদিকে, জেলা ছাত্রলীগ আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কালীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগের সমাবেশ সফল করতে প্রচারপত্র বিলি করেছে। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ জানায়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা অথবা তারেক রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার না করলে আগামী ২৭শে ডিসেম্বর গাজীপুরের মাটিতে বেগম খালেদা জিয়াকে জনসভা করতে দেবে না ছাত্রলীগ। বরং ওই মাঠে ওই দিন বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করবে ছাত্রলীগ।
ওই মাঠে জনসভা করার জন্য ছাত্রলীগ অনুমতির আবেদন করেছে প্রশাসনের কাছে। বুধবার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় সভা করবে। এদিকে জনসভা নিয়ে দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও জনসভা প্রসঙ্গে গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ জানান, বুধবার থেকে পুলিশ প্রশাসনের হেফাজতে নেবে ভাওয়াল কলেজ মাঠ। এখনও কোন পক্ষকেই অনুমতি দেয়া হয়নি। অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী ২৫শে ডিসেম্বর দুই পক্ষকে নিয়ে বসার উদ্যোগ নেয়া হবে এবং এর পরই ওই মাঠের সমাবেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।