সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,
আসসালামুআলাইকুম। আপনারা সবসময় যেভাবে আমাকে সহযোগিতা করে এসেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন সেজন্য আপনাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।
আপনাদের মাধ্যমে আমি প্রথমেই বলতে চাই, সাবেক অর্থমন্ত্রী, সিলেটের কৃতিসন্তান, বাংলাদেশের গর্ব, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আমি বলতে চাই, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ।
আমার রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু তার মতো এরকম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারী ব্যক্তিত্বকে আমি সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখি। সিলেটের গুনীজনদের কোন অকল্যাণ কোনদিন আমি ঘুণাক্ষরেও কামনা করি না। সেই আমাকে হত্যাকান্ডের মতো জঘন্য একটি মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে জানতে পেরে হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। আমি প্রথম এই খবর জানতে পেরে খবরটি বিশ্বাস করিনি। পরবর্তীতে মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পেরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া যারা হত্যা করেছে তারা জঘন্যতম ও জাতির জন্য এক কলঙ্কজনক কাজ করেছে। তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। তবে যারা এই ঘটনার সাথে নূন্যতম সম্পৃক্ততাও নেই তাদেরকে কেন অযথা হয়রানী করা হচ্ছে-তা বিচারের ভার আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এবং আমার প্রিয় নগরবাসী ও দেশবাসীর কাছে দিলাম।
আমার প্রিয় নগরবাসীর কাছে, দেশবাসীর বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন- কেন আমার বিরুদ্ধেই বারবার ষড়যন্ত্র হচ্ছে? কেন বারবার যখন সিলেটের উন্নয়নে নিমগ্ন হই তখনই আমাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত শুরু হয়? অতীতেও আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু আদালতের রায়ে আমি বারবার নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। তাহলে কী সিলেটের উন্নয়ন করাই কী আমার অপরাধ?
আমি রাতদিন অমানুষিক পরিশ্রম করেছি এই নগরীকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য। মায়ের প্রতি, পরিবারের সদস্যদেরকে সময় দেওয়ার অবসরটুকু পাইনি। আজ আমার মা আমার জন্য শয্যাশায়ী, আমার সন্তান-সহধর্মিনী সকলে নিরবে শুধু অশ্রুপাত করছে। এটা কী আমার পরিবারের পাওনা ছিল? আরিফুল হক চৌধুরী নামের এক অসহায় ব্যক্তি, হ্যাঁ আমি আরিফুল হক চৌধুরী আজ চরম হতাশ, বিপর্যস্ত-এই নোংরা রাজনীতির প্রতি আমি চরম বিরক্ত-ক্ষুব্ধ। এই যদি হয় রাজনীতি তাহলে আমাদের দেশ কিভাবে এগিয়ে যাবে।
আমি আর কতদিন বাঁচব জানি না, কিছুদিন আগেও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি সবার দোয়ায়, শারীরিক ও মানসিকভাবে এখন আমি বিধ্বস্ত। এই নোংরা রাজনীতির খেলা, নোংরা মানসিকতার কি অবসান হবে না। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও কী কিছুদিন শান্তিতে কাজ করার আশাটুকু আমি করতে পারি না?
অতীতেও মতো এবারও সিলেটের সর্বস্তরের জনগনের সাহসই আমাকে মানসিক শক্তি যোগাচ্ছে, তাদের ভালোবাসাই আমার মূল শক্তি। তারাই তাদের প্রিয় আরিফুল হক চৌধুরীকে সকল ষড়যন্ত্র থেকে উদ্ধার করবে। আর আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই, যে ঘটনার সাথে আমাকে জড়ানো হয়েছে তাতে নূন্যতম সম্পৃক্ততা আমার নেই, সুতরাং আইনের মাধ্যমে সত্যের জয় হবেই।
সিলেটের মানুষ জানেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের সাথে থেকে আমি উন্নয়নের রাজনীতি শিখেছি। প্রতিহিংসা বা গ্রেণেড-বোমার রাজনীতি এম সাইফুর রহমান কখনো করেননি, তার কাছ থেকে সবসময় কল্যাণকামী শিক্ষা পেয়েছি।
বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হওয়া ও সিলেটের উন্নয়নে নিজেকে সঁপে দেয়াই আমার কাল হয়েছে। নির্বাচনের আগে আমি সিলেটবাসীকে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
নগরবাসীর সহযোগিতায় অল্প সময়ে নগরীর অনেক উন্নয়ন হয়েছে-যা সুধীসমাজেও প্রশংসিত হয়েছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত অনেক সমস্যা দূরিভূত হয়েছে। এটা মেনে নিতে পারছেন না উন্নয়ন বিদ্বেষীরা। উন্নয়নের চাকা থামিয়ে দিতে তারা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলার মতো একটি জঘন্য মামলায় আসামী করা হয়েছে। মেয়র নির্বাচিত না হলে বা সিলেটের উন্নয়নে নিজেকে সঁপে না দিলে আমাকে এরকম মামলার আসামী হতে হতো না।
আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। ৫৬ বছর বয়সে আমার বিরুদ্ধে একটি মারামারির মামলাও হয়নি। আর বোমা গ্রেনেড হামলার মতো জঘন্যতম কাজে সম্পৃক্ত থাকার প্রশ্নই উঠে না। যদি এ রকম ঘটনার সাথে নূন্যতম কোন সম্পৃক্ততা থেকে থাকে তবে আমার উপর আল্লাহর গজব পড়বে।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বাসায় মুফতি হান্নানের সাথে বৈঠক প্রসঙ্গে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু ওই সময় এম সাইফুর রহমান ছিলেন সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী। তার সাথে থেকে আমি নগরীর উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম। কোন প্রয়োজন হলে আমি এম সাইফুর রহমানের কাছেই ছুটে গেছি। অন্য কোন মন্ত্রীর বাসা বা অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। যাওয়ার প্রয়োজনও পড়েনি। আর মুফতি হান্নানের সাথে বৈঠক তো দূরের কথা তার সাথে কোনদিন দেখাও হয়নি।
‘আমি নির্দোষ। আমি প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার’। এর আগে সিলেটে রাজীনীতির এই কালো অধ্যায়ের চর্চা ছিল না। এই ঘটনার মাধ্যমে একটি মহল সিলেটের সম্প্রীতির রাজনীতির আকাশ কালো মেঘে ঢেকে দিতে চাইছে। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন তাদের বিচার আজ না হোক কাল হবেই। কারণ সত্য সবসময় সত্য।
আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের মাধ্যমেই আমি সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করব। মিথ্যার ধূয়াশা কেটে সত্য একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে এই ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
পরিশেষে আমার এই দু:সময়ে দলমত নির্বিশেষে যারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন সেইসব মানুষের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ইনশাল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি সত্যের জয় হবে।
আপনারা ভালো থাকুন
সুস্থ থাকুন।
বিনীত
আপনাদের খাদেম
আরিফুল হক চৌধুরী