শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভদ্রতা ও শালীনতার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা চালাতে চাইলেও সামরিক শাসনের মধ্যে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো এটিকে দুর্বলতা ভাবতে চায়। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, যে দলটি ভদ্রতা ও শালীনতার মধ্যে থেকেও কঠোর হতে পারে, যে কঠোরতার ফলই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সোমবার (০৫ জানুয়ারি) পূর্ব লন্ডনের আট্রিয়াম ব্যাঙ্কুটিং হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস শীর্ষক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জালাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশটি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমাবেশের পরদিনই একই স্থানে অনুষ্ঠিত হলো। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফ তার সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলেন, যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র গেলো-গণতন্ত্র গেলো- বলে চিৎকার করেন, তাদের বলি, গণতন্ত্র বাংলাদেশে ছিল কখন? সামান্য কয়েক বছর বাদে গণতন্ত্রের চর্চাই বা কতটুকু হয়েছে বাংলাদেশে।
বক্তব্যের শুরুতেই সৈয়দ আশরাফ তার লন্ডনে বসবাসকালীন সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের পারস্পরিক সামাজিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, আমরা অনেকেই এদেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত যেমন থেকেছি, ঠিক তেমনি দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলাম। কিন্তু আমাদের পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ। যা আজকের সময়ে দেখা যায় না। তিনি বলেন, দলীয় রাজনীতির নামে সাম্প্রতিক সময়ের হানাহানি আমাদের সময় ছিল না।
তার মতে বাংলাদেশ জন্মের আগ থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি এ ভূখণ্ডে। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি আইয়ুব খানের বেসিক গণতন্ত্র থেকে শুরু করে সেই সময়ের ইতিহাস বর্ণনা করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সামরিক শাসন যে বার বার গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করেছে তাও নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নাকি গণতন্ত্রের মহারানী। কাকে গণতন্ত্র শেখান! তাকে জিজ্ঞেস করি তিনি কি বুকে হাত দিয়ে অস্বীকার করতে পারেন বাংলাদেশে সামরিক শাসন শুরু করে গণতন্ত্র চর্চা বাধাগ্রস্ত করেননি তার স্বামী?
সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, গণতন্ত্রকে বার বার নির্বাসনে পাঠিয়েছেন খালেদা ও রওশনের স্বামী। শেখ হাসিনা বা তার স্বামী নন। তিনি এ সময় সামরিক শাসন জারি করে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল, হ্যাঁ/না ভোটের নাটক ইত্যাদি ইতিহাস শোনান নেতাকর্মীদের। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার স্বামী বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিলেন, আপনার স্বামী সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে ছিলেন, আপনার স্বামী মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছেন, এগুলো ইতিহাসের সত্য ঘটনা। নিজে চোখ বন্ধ রাখলেই সব অন্ধ হয় না, অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জিয়াউর রহমানের পাশাপাশি স্বৈরশাসক হিসেবে এরশাদেরও সমালোচনা করেন সৈয়দ আশরাফ। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইতিহাসের সত্য বারবার তুলে ধরতে হবে। এই কাজটিই আপনারা করতে থাকুন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের পথ একটাই যে পথে হাটলে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে নেওয়া সম্ভব। এই পথ হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পথ, তার আদর্শ।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুতের পাশাপাশি বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। একমাত্র তার দ্বারাই সম্ভব এই সংগ্রামে সফল হওয়া। আমরা এখন এই সংগ্রামেই ব্যস্ত। আমাদের কাজ কথা বলা নয়, কাজ করা, আমরা সেটিই করছি। আমাদের এই সংগ্রাম বাধাগ্রস্ত করতে যত ষড়যন্ত্রই হোক, শেখ হাসিনা যতদিন আছেন লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পরযন্ত এই সংগ্রাম চলবে।
সৈয়দ আশরাফ ছাড়াও সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, যুবলীগ কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামণ্ডলীর চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান, সহ-সভাপতি হরমুজ আলী, সিলেট সিটি করপোরেশনের কমিশনার আজাদুর রহমান আজাদ সহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন নেতাকর্মীগণ।